শ্রী নিখিলনাথ রায়
নবাব জগৎশেঠকে বন্দী করিলে, ভান্সিটার্ট বিরক্ত হইয়া তাঁহাকে এক পত্র লিখিয়া পাঠান। তিনি আমিয়ট সাহেবের নিকট হইতে জগৎশেঠদিগের সংবাদ অবগত হইয়াছিলেন। আমিয়ট তৎকালে কাশীমবাজারে অবস্থিতি করিতেছিলেন। গবর্ণর ১৭৬৩ খৃঃ অব্দের ২৪শে এপ্রিল নবাবকে লিখিয়া পাঠাইলেন, “আমি এইমাত্র আমি- য়টের পত্রে অবগত হইলাম যে, মহম্মদ তকী খাঁ ২১শে রজনীতে জগৎশেঠ ও স্বরূপচাঁদের বাটীতে প্রবেশ করিয়া, তাঁহাদিগকে বন্দী অবস্থায় হীরা- ঝিলে আনিয়া রাখিয়াছে। এই ঘটনায় আমি অত্যন্ত আশ্চৰ্য্যান্বিত হইয়াছি।
যখন আপনি শাসনকার্য্যের ভার গ্রহণ করেন, তখন আপনি, জগৎশেঠ ও আমি সমবেত হইয়া এইরূপ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইয়া- ছিলাম যে, শেঠেরা বংশমর্য্যাদায় দেশের মধ্যে সর্ব্বপ্রধান; অতএব শাসনকার্য্যের বন্দোবস্তে আপনাকে তাঁহাদিগের সাহায্যগ্রহণ করিতে হইবে এবং তাঁহাদিগের কোনরূপ অনিষ্ট না করিতে আপনি স্বীকৃত হন। মুঙ্গেরে আপনার সহিত সাক্ষাৎ কালে আমি শেঠদিগের কথা আপনাকে বলিয়াছিলাম এবং আপনিও তাঁহাদিগের কোন ক্ষতি করিবেন না বলিয়া আমাকে নিশ্চিন্ত করেন।
তাঁহাদিগকে এরূপভাবে গৃহহইতে আনয়ন করা অত্যন্ত অন্তায় হইয়াছে; ইহাতে তাঁহাদিগের বংপরোনাস্তি অবমাননা করা হইয়াছে। আপনার এরূপ ব্যবহারে আমাদের সন্ধি ভঙ্গ হইয়াছে এবং আপনার ও আমার সুনামে কলঙ্ক পড়িয়াছে। ভূতপূর্ব্ব কোন নাজিম তাঁহাদিগের প্রতি এরূপ ব্যবহার করেন নাই। সুতরাং আপনি সৈয়দ মহম্মদ খাঁ বাহাদুরকে (মুর্শিদাবাদের ফৌজদার) তাঁহাদিগের মুক্তির জন্য লিখিয়া পাঠাইবেন।”
নবাব রা মে তাহার এক সুদীর্ঘ প্রত্যুত্তর লিখিয়া পাঠান।
তাহাতে অনেক কথা লিখিত থাকে; তন্মধ্যে শেঠদিগের সম্বন্ধে যাহা লিখিত হইয়াছিল, তাহার মর্ম্ম এই রূপ,- “শেঠেরা ইংরেঞ্জ দিগের সহিত যোগ দিয়াছে বলিয়া আমি, তাহাদিগকে আনিতে পাঠাই নাই। যখন আমি শাসনভার গ্রহণ করি, তখন শেঠেরা আমার সাহায্য করিবে বলিয়া প্রতিশ্রুত হয়। কিন্তু এই তিন বৎসর তাহারা আমার কোন রূপ সাহায্য করে নাই এবং আপনাদিগের কারবারও সুন্দররূপে নির্ব্বাহ করে নাই।
Leave a Reply