শ্রী নিখিলনাথ রায়
খোশালচাঁদ ১৭৬৫ খৃঃ অব্দের নবেম্বর মাসে ক্লাইবকে আপনাদিগের দুরবস্থার কথা জানাইলে, ক্লাইব এইরূপ কর্কশভাবে তাহার উত্তর প্রদান করিয়াছিলেন- “আপনি অজ্ঞাত নহেন যে, আপনার পিতার প্রতি আমি কিরূপ সদয় ব্যবহার ও তাঁহাকে সর্ব্বদা কিরূপ ভাবে সাহায্য করিয়া আসিয়াছি, এবং আপনার ও আপনার পরিবারস্থ সকলের প্রতি এক্ষণেও সেইরূপ আন্তরিক যত্ন দেখাইতেছি। দুঃখের বিষয়, আপনি নিজের সম্মানের ও সাধারণের প্রতি কর্তব্য কার্য্যের বিষয় কিছুমাত্র চিন্তা করেন না; পূর্ব্বে যেরূপ বন্দোবস্ত হইয়াছিল, তদনুযায়ী রাজকোষের সমস্ত অর্থ তিনটি বিভিন্ন চাবির দ্বারা রক্ষিত না হইয়া, দেখিতেছি কেবলই আপনাদের নিকটই জমা হইতেছে এবং আপনারা প্রকারান্তরে অল্প রাজস্বে বাঙ্গলা রাজ্য ইজারা লইতে সম্মতি দিতেছেন।
আমি আরও অবগত হইলাম যে, যে সময়ে জমীদারবিগের নিকট সরকারের রাজস্ব পাওনা রহিয়াছে, সেই সময়ে আপনারা আপনাদিগের পূর্ব্বপুরুষগণের প্রাপ্য অর্থের জন্য তাহাদিগকে পীড়াপীড়ি করিতেছেন। আপনাদের এরূপ ব্যবহার কদাচ সমর্থন করা যাইতে পারে না। আপনারা এখনও পূর্ব্বের ন্যায় ধনী আছেন, এই রূপ ধনতৃষ্ণার প্রবৃত্তিতে কেবল যে আপনাদের অসুবিধা হইতেছে এরূপ নহে, কিন্তু সাধারণের হিতেচ্ছু বলিয়া আপনাদের প্রতি আমার যে বিশ্বাস আছে, সঙ্গে সঙ্গে তাহাও অন্তর্হিত হইবে”।
যিনি সামান্য অর্থের জন্য হতভাগ্য আমীরচাঁদকেও উন্মত্ত করিয়া তুলিয়াছিলেন। তিনি যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যস্থাপনের প্রধান সহায় জগৎশেঠের পুত্রকে এরূপ ভাবে উত্তর প্রদান করিবেন, তাহাতে আর বৈচিত্র্য কি? ১৭৬৬ খৃঃ অব্দের এপ্রিল মাসে জগৎশেঠেরা আপনাদিগের প্রাপ্য ৫০ হইতে ৬০ লক্ষ টাকা কোম্পানীর নিকট চাহিয়া পাঠান। তন্মধ্যে ৩০ লক্ষ টাকা জমীদারদিগকে ও ২১ লক্ষ মীর জাফর ও ইংরেজদিগের সৈন্যরক্ষার জন্য দেওয়া হয়। ১৪ই এপ্রিলের কাউন্সিলে স্থির হয় যে, জমীদারদিগের টাকার জন্য কেহ দায়ী নহেন। কিন্তু উক্ত ২১ লক্ষ টাকা কোম্পানী ও নবাব সমান ভাগে দিবেন, এবং ১০ বৎসরে তাহা ক্রমে ক্রমে পরিশোধ করা হইবে।”
নজম উদ্দৌলার পর সৈফ উদ্দৌলা, তাহার পর মোবারক উদ্দৌলা মুশিদাবাদের মসনদে বসিয়াছিলেন, তাঁহারাও জগৎশেঠ, দুর্লভরাম ও রেজা খাঁর পরামর্শে সমস্ত কার্য্য নির্ব্বাহ করিতে প্রতিশ্রুত হন। ক্রমে শেঠদিগের অবস্থা আরও হীন হইতে আরম্ভ হইলে, ক্লাইব জগৎশেঠ খোশালচাঁদকে বার্ষিক ৩ লক্ষ টাকা বৃত্তি দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু খোশালচাঁদ তাহা লইতে অনিচ্ছুক হন। তিনি এই রূপ উত্তর দিয়াছিলেন যে, ‘আমার মাসিক ব্যয় ন্যূনকল্পে ১ লক্ষ টাকা, তিন লক্ষ টাকায় আমার কোনই উপকার হইবে না; সুতরাং তাহা লইবার প্রয়োজন নাই।
Leave a Reply