স্টাফ রাইটার
ভারতের রাজনীতিতে হিন্দু বর্ণবাদ বা কাস্ট পদ্ধতি একটি বড় ফ্যাক্টর। বাস্তবে পৃথিবীতে সব থেকে বেশি নৃগোষ্টির মানুষের এই দেশটি সব থেকে বেশি ধর্মীয় কুসংস্কারের বিভাজনে বিভক্ত। যা মূলত ধর্মীয় বর্ণবাদ বলেই পরিচিত। আর ধর্মীয় বা সংস্কারগত এই বর্ণবাদ হাজার হাজার বছর ধরেই সৃষ্টি হয়েছে। তাই ভারতীয় চিন্তাবিদ বা রাজনীতিকদের হাতে এমন কোন ম্যাজিক নেই যে এই বর্ণবাদ থেকে ভারতকে এখনই বা নিকট ভবিষ্যতে বের করে আনবে।
তাছাড়া ভারতের স্বাধীনতার আগে রাজনীতি ও দেশ নিয়ে যাই বলা হোক না কেন, স্বাধীনতার পর থেকেই অনান্য দেশের মতো সে দেশের রাজনীতিও মূলত ভোটারকে নিজ পক্ষে নেবার চক্রেই সীমাবদ্ধ। তাই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলগুলো একেক ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়।
এবারও ভারতের নির্বাচন সামনে রেখে এই বর্ণবাদ বা কাস্ট সিস্টেম ঘিরে বেশ কিছু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দেখা যাচ্ছে।
আগামী নির্বাচনে কংগ্রেসের নির্বাচনী মেনিফেস্টো প্রণয়ন কমিটির প্রধান সেদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী পি. চিদাম্বরম মিডিয়াকে জানিয়েছেন, যদি্ও তাদের নির্বাচনী মেনিফেস্টোর কাজ এখনও শেষ হয়নি। তারপরেও এটা নিশ্চিত তাদের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে নিম্নবর্ণের ছাত্রদের জন্য স্কলারশিপ থাকছে। এখনও অবধি তাদের সিদ্ধান্ত রয়েছে, সিডিউল কাস্টদের জন্যে একটি স্কলারশিপ প্যাকেজ, ট্রাইব সিডিউল কাস্টদের জন্যও অনুরূপ আরেকটি ও ওবিসি (Other Backward Class) এর জন্য একটি প্যাকেজ থাকবে।
ভারতে অবশ্য এ স্কলারশিপ আছে। তবে কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে যে স্কলারশিপের প্যাকেজগুলো ঘোষণা করবে তা বর্তমান সরকার যা দিচ্ছে তার থেকে বেশি হবে বলে জানিয়েছেন চিদাম্বরম। পাশাপাশি তারা নিম্নবর্ণের এই ছাত্রদের কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করবে।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আগে যেখানে এই সব নিম্নবর্ণের মানুষের মধ্যে কংগ্রেসের এক চেটিয়া সমর্থন ছিলো তা নব্বই এর দশক থেকে কমতে শুরু করে। এবং বিভিন্ন রাজ্যে নিম্নবর্ণের বা দলিত নেতাদের উত্থান ঘটে। এমনকি একটা পর্যায়ে ভারতের রাজনৈতিক পরিমন্ডলে এমনও আলোচনা শুরু হয়েছিলো যে দলিত নেত্রী মায়াবতীর নেতৃতের জোট সে দেশের কেন্দ্রে ক্ষমতায়ও যেতে পারে। যাহোক, ঘটনার পরিক্রমায় বর্তমানে সিডিউল কাস্ট এবং ওবিসি শ্রেনীতে বিজেপি তাদের অবস্থান বেশ এগিয়ে নিয়েছে। তাই স্বাভাবিকই কংগ্রেস এখানে তাদের সর্বোচ্চ লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেবে এটাই স্বাভাবিক।
অন্যদিকে সাধারণভাবে ধরা হয়, গোটা ভারত জুড়ে বেশিক্ষেত্রে মুসলিম ভোটার কংগ্রেসের পক্ষে। তার সঙ্গে এবারের হিসাবে এসে যোগ হয়েছে ২০১৯ এ মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিজেপি সরকারের লোপ করা। অনেকে মনে করছে এর ফলে মুসলিম ভোট আরো বেশি কংগ্রেসের দিকে যেতে পারে। বাস্তবে যাই ঘটুক না কেন, বিজেপি বেশ আগে থেকেই মুসলিম ভোটের দিকে নজর দিয়েছে। এবং সেখানেও একই অস্ত্র অর্থাৎ উচ্চ বর্ণ ও নিম্ম বর্ণ। ভারতে উচ্চ বর্ণের মুসলিমের বিপরীতে আছে নিম্ম বর্ণের মুসলিম যাদেরকে সেখানে পশমন্দ অর্থাৎ পশ্চাতে পড়ে থাকা মুসলিম বলা হয়। বিজেপি দেখাচ্ছে কংগ্রেস সব সময়ই উচ্চ বর্ণের মুসলিমদের অর্থাৎ আশরাফ মুসলিমদেরকেই তাদের নেতৃত্বে নিয়েছে ও মন্ত্রীত্ব দিয়েছে। তারা পশমন্দদের জন্যে কিছু করেনি। বিজেপি বিভিন্ন রাজ্যে এই পশমন্দদের জন্যে বেশ কিছু সুবিধা দিয়েছে।
তাই এখন অপেক্ষার পালা কংগ্রেসের এই সিডিউল কাস্ট স্কলারশিপের বিপরীতে বিজেপি পশমন্দ মুসলিমদের জন্যে কী ঘোষণা করে?
Leave a Reply