সারাক্ষণ ডেস্ক
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (এনসিডিসি) প্রোগ্রাম ও সচিবালয় হিসেবে আইসিডিডিআর,বির সমন্বয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হল বাংলাদেশে ক্লাইমেট অ্যান্ড হেলথ ইনোভেশন হাব (সিএইচআইবি)।
এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হলো স্থানীয় নেতৃত্বের অধীন যেসব জলবায়ু পরিবর্তন উপযোগী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার ডকুমেন্টেশন ও উন্নয়নের পাশাপাশি এসব উদ্যোগের প্রচারণা করা। স্বাস্থ্য এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পর্কিত বিষয়, যেমন জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক বাসস্থান তৈরি, জলবায়ু-অন্তর্ভুক্ত ওয়াশ (ওয়াটার, স্যানিটেশন ও হাইজিন) এবং জলের লবণাক্ততার সমস্যা মোকাবিলা নিয়েও আলোচনা করা হবে। অনুষ্ঠানটি ঢাকার গুলশান এভিনিউয়ের লেকশোর হাইটসে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে ক্লাইমেট অ্যান্ড হেলথ ইনোভেশান হাব চালু করা : জলবায়ু পরিবর্তনের কেন্দ্রে মানুষের স্বাস্থ্যকে রাখা’ শীর্ষক একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন বিভিন্ন অংশীদার সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা, উন্নয়ন সংস্থা এবং এনজিওর বিশেষ ব্যক্তিবর্গ। অনুষ্ঠানে ক্লাইমেট অ্যান্ড হেলথ ইনোভেশন হাব (সিএইচআইবি) গঠন এবং ভবিষ্যৎ দিক-নির্দেশনার জন্য স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।
এনসিডিসি, ডিজিএইচএসের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ডা. নুসায়ের চৌধুরী, স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে কর্মশালার কার্যক্রমের সূচনা করেন। আগত অতিথিদের পরিচয় পর্ব সমাপ্তির পর আইসিডিডিআর,বির সহকারী বিজ্ঞানী, ড. ফারজানা জাহান, ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড হেলথ ইনোভেশন হাব : বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উদ্ভাবন কেন্দ্রিক গবেষণার প্রয়োজনীয়তা’ নিয়ে আলোচনা করেন। এ ছাড়া এনসিডিসি-র প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. অসীম চক্রবর্তী বাংলাদেশের অসংক্রামক রোগের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করেন এবং পরিবর্তনশীল জলবায়ু পরিস্থিতির কারণে মানবস্বাস্থ্য কীভাবে ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে সে বিষয়ে বক্তব্য দেন। রিজিওনাল ইন্টিগ্রেটেড মাল্টি-হ্যাজার্ড আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম (রাইমস), বাংলাদেশ, থেকে সজিব হাসান বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ধারাবাহিকতার বর্তমান ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য চিত্র এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতাসমূহ তুলে ধরেন।
এনসিডিসি, ডিজিএইচএস-এর লাইন ডিরেক্টর, অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন ক্লাইমেট চেঞ্জ ইনোভেশন হাবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। তিনি এই উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘সকল স্টেকহোল্ডার একই অবস্থানে আছেন তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের এ ধরনের একটি হাবের প্রয়োজন ছিল। এর ফলে এখন থেকে আমরা তথ্য বিনিময় করার পাশাপাশি নতুন গবেষণার সুযোগ এবং সক্ষমতা তৈরি করতে পারব।’
কর্মসূচির একটি মূল অংশ ছিল প্রাণবন্ত আলোচনা, যার লক্ষ্য ছিল জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা। পাশাপাশি বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং সুযোগগুলো সমন্বিত করাও ছিল এই আলোচনার উদ্দেশ্য। এই অংশটি পরিচালনা করেন এনসিডিসি, আইসিডিডিআর,বি ও রাইমসের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিরা এবং প্রতি গ্রুপ থেকে একজন প্রতিনিধি তাদের আলোচনার সারমর্ম উপস্থাপন করেন। এনভারনমেন্টাল হেলথ অ্যান্ড ওয়াশের প্রজেক্ট কো-অরডিনেটর অ্যান্ড লিড ড. মাহবুবুর রহমান আইসিডিআর,বি স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে উঠে আসা আলোচনা ও সুপারিশ এবং কীভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রের সম্পৃক্ততাকে আরও ফোকাস করা যায় তা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ডা. মিজানুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণের হটিকালচার উইংয়ের পরিচালক কে জে এম আব্দুল আউয়াল, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান।
এ সময় মো. মিজানুর রহমান বলেন, যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে মন্ত্রণালয় এই হাবকে সফল করার জন্য উপদেষ্টা সমর্থনসহ সব ধরনের সহায়তা প্রদান করবে।
আইসিডিডিআর,বির হেলথ সিস্টেমস অ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিজ ডিভিশনের ডিরেক্টর ড. সারা সলওয়ে বলেন, এই হাব উদ্বোধন ও ওয়ার্কশপ বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট জরুরি স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বৈচিত্র্যময় দক্ষতা এবং সংস্থানকে একত্রিত করার জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এখান থেকে পাওয়া বিভিন্ন অন্তর্দৃষ্টি ও সহযোগিতা জলবায়ু চ্যালেঞ্জগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে এবং স্বাস্থ্যসেবায় স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে আমাদের চলমান প্রচেষ্টার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ক্লাইমেট অ্যান্ড হেলথ ইনোভেশন হাবের লক্ষ্য হলো অতীতের তথ্য ও সম্পদের আদান-প্রদান ও ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট সীমাবদ্ধতাগুলোর বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়ের মাধ্যমে সমাধান করা। কারণ এসব সীমাবদ্ধতা সাধারণ জনগোষ্ঠীর জলবায়ু-সম্পর্কিত স্বাস্থ্য তথ্য এবং সহনশীল কৌশলগুলো জানার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করছে। তা ছাড়াও গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০২০ অনুযায়ী বাংলাদেশ সপ্তম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা এই ধরনের উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।
আজকের সেমিনারের এই সফল সমাপ্তি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একটি সহনশীল এবং ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য-সচেতন বাংলাদেশের যাত্রায় উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।
‘ক্লাইমেট অ্যান্ড হেলথ ইনোভেশন হাব’ উদ্যোগটি দ্য রকফেলার ফাউন্ডেশন, ফাউন্ডেশন এস দ্য সানোফি কালেক্টিভ, এমরি ইউনিভার্সিটি, ইনস্টিটিউট ফর সাসটেইনেবল ফিউচার এবং রাইমস দ্বারা সমর্থিত। এ ছাড়া উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে আছে নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডিসি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস) এবং বিভিন্ন সংস্থার জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। যেমন- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় (এমওডিএমআর), বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট (বিসিসিটি), পরিবেশ অধিদপ্তর (ডিওই), নিপসম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর), বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) ইত্যাদি এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
ইউনাইটেড পারপাস, অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার (এসিএফ), সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস), ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইসিসিএডি), ফ্রেন্ডশিপ, প্রভা অরোরা, শক্তি ফাউন্ডেশন, ব্র্যাক, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি), এআরকে ফাউন্ডেশন, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড, ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) এবং আইসিডিডিআর,বি সংগঠনের প্রতিনিধি এবং কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন যা কর্মশালার সার্বিক অগ্রগতিতে সহযোগিতামূলক ভূমিকা পালন করে।
Leave a Reply