নিজস্ব প্রতিবেদিক
আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে আব্দুস সালাম হলে কনজুমারস ট্রেনিং এন্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটি (ভোক্তা) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠন ভলান্টারি কনজুমারস ট্রেনিং এন্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটি (ভোক্তা)-এর পক্ষ থেকে নির্বাহী পরিচালক মো: খলিলুর রহমান সজল এসব পরামর্শ দেন।
খলিলুর রহমান সজল বলেন, বিগত বছরগুলোতে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতি, কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি, মানুষের আয় হ্রাস, কতিপয় অনৈতিক ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেশনের জালে আবদ্ধ নিত্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থা বাস্তবতায় দেশে ভোক্তাদের অবস্থা নাজুক। অধিকাংশ ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতাও সীমিত হয়ে আসছে।
ভলান্টারি কনজুমারস ট্রেনিং এন্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটি (ভোক্তা) আসন্ন বাজেটে ভোক্তার ওপর চাপ সৃষ্টি না করে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, আইএমএফ’র চাপ সত্বেও কৃষি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তূকি এবং মূল্যস্ফীতি রোধ ও বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেট প্রতিহত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সরকারকে।
আগামী জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে বর্তমান সরকারের প্রথম ও আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নতুন বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। জাতীয় সংসদে বিস্তারিত আলোচনা ও যাচাই-বাছাই শেষে জুন মাসের শেষ সপ্তাহে বাজেট পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়াও ভোক্তার চেয়ারম্যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর, ভাইস চেয়ারম্যান সানোয়ার হোসেন নওরোজ, পরিচালক (অর্থ) লুৎফর রহমান লিটন, পরিচালক ড. লতিফুল বারী, মহসীনুল করিম লেবু, সাইদুল আবেদীন ডলার, মিজানুর রহমান তালুকদার, ফজলুল হক, নূরুন নবী ও গোলাম কবীর উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেপ-পূর্ব প্রস্তাবনার ধারাবাহিকতায় সংগঠনের পক্ষ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটকে আরো গণমূখী করতে খাতওয়ারি ১৯ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
ভোক্তার সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- দ্রব্যমূল্য কমিয়ে ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতায় আনতে চাল, ডাল, চিনি ও ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের আমদানি শুল্ক ও মূসক সহনীয় পর্যায়ে রাখা ও বিলাসদ্রব্যসহ ধনীদের ব্যবহার্য পণ্যে শুল্ক-কর বৃদ্ধি, অতি মুনাফাখোরি ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর ওপর মনিটরিং জোরদার করা, বাজার সিন্ডিকেশনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং সীমিত আয়ের মানুষের জন্য টিসিবি’র ভর্তূকিযুক্ত পণ্যের উন্মুক্ত বাজার সম্প্রসারণ করা।
এছাড়াও কৃষিপণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রতিরোধে কৃষকদের সংঘবদ্ধ করে সরাসরি খুচরা বাজারে বাজারজাত করার ব্যবস্থা নেওয়া, কর্মহীনদের কর্মসংস্থান ও আয়-বৃদ্ধির পদক্ষেপ, বাজেট পরিকল্পনায় উৎপাদন ও যোগান বাড়িয়ে ব্যয়-সাশ্রয়ী নীতি চালিয়ে যাওয়া, উন্নয়ন সহযোগী গোষ্ঠীর চাপ সত্বেও সার ও জ্বালানী খাতে চাহিদা অনুযায়ী ভর্তূকি অব্যাহত রাখার প্রস্তাবও করা হয় এতে। চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি রোধে বাজেটে ঔষধের দাম সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেওয়ারও তাগিদ দেওয়া হয়।
এছাড়া কর্মমুখী শিক্ষা নিশ্চিতে বাজেটে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দের ৫ শতাংশ, দুর্বল স্বাস্থ্য খাতকে পথ দেখাতে বাজেটে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ, বৈশ্বিক অতিমারির ফলে সৃষ্ট বিশ্বমন্দা ও যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অস্থিরতায় কর্মহীন মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে অন্তর্ভুক্তি, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করারও তাগিদ দেওয়া হয়।
এছাড়াও শিল্প-কারখানা পূর্ণ ক্ষমতায় চালু রেখে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি ক্রয়ে বিশেষ বরাদ্দ ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা, কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল করা, অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান ও আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করে বিদেশে অর্থ পাচারকারিদের চিহ্নিত করে পাঠানো অর্থ ফিরিয়ে আনতে বাধ্য করা এবং বিচারের আওতায় আনার পরামর্শও দেওয়া হয় সরকারকে।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবনতা হ্রাস এবং জনগণের ওপর চাপ না বাড়িয়ে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়। ভর্তুকির চাপ কমানোর অজুহাতে সার, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির দাম না বাড়িয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতি বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়।
বাজেটে ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় কর্মরত প্রতিষ্ঠান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিএসটিআই, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও বিস্তৃত করতে বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ রাখার জোর দাবি জানানো হয়।
Leave a Reply