রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১০:০৩ পূর্বাহ্ন

ভারতের নির্বাচন: কুড়ে ঘরের মেয়ে আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে

  • Update Time : সোমবার, ৬ মে, ২০২৪, ১১.০০ এএম

স্বদেশ রায়

দুটি নীল রঙের পলিথিনের ব্যাগ ও দুটো ডোরা কাটা কাঁচা বাজারের পলিথিনের ব্যাগ বাঁশের পাতলা পাত দিয়ে তৈরি ভাঙ্গা বেড়ার সঙ্গে টানানোসে বেড়ার ফাঁক দিয়ে সহজে আলো ঢুকতে পারে বলে তার সঙ্গে টানানো হয়েছে কালো একটু মোটা পলিথিনযা রোদ ও বৃষ্টি থেকে কিছুটা রক্ষা করেআবার দরজারও কাজ করেআর বেশি পলিথিন কেনা সম্ভব হয়নি বলে একটা পুরানো কাপড় টাঙিয়ে রাখা হয়তাও মূলত দরজা ও বেড়ার কাজ একসঙ্গে করেহাত দিয়ে সেই কাপড় সরিয়ে দেখা গেলো ভেতরে একটা তক্তপোষ তার ওপর শস্তা কাপড়ে তৈরি একটা বালিশস্বামী তামিল নাড়ুতে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করে

  রেখা পাত্রর কুড়ে ঘরের সামনের দিক 

ঘরের ভেতরে তৈজসপত্র বলতে কয়েকটি স্টিলের বাটি, দুটো প্লাস্টিকের ছোট বাস্কেট, কয়েকটি কাচের বোতল ও বোয়াম, একটা পুরানো সাইকেলতার হাতলে ঝুলছে খুবই শস্তা একটা মেয়েদের হাত ব্যাগঢাকার ফুটপাতে যা বাংলাদেশী ৫০ টাকা অর্থাত্‌ হাফ মার্কিন ডলারেরও কম দাম

রেখা পাত্রের কুড়ে ঘরের ভেতর ও তার তৈজসপত্র 

সঙ্গে আরো দুটো শস্তা শাড়ি যা ঢাকার ফুটপাতের বাজারে কখনও ১৫০ টাকার বেশি হবে নাঅর্থাত ১ মার্কিন ডলারের কিছু বেশিআর একটি নেটের মশারিউল্লেখ্য, এই নেটটি যেমন রাতে মশার জন্যে মশারি হিসেবে ব্যবহার হয় তেমনি দিনে মাছ ধরার কাজেও ব্যবহার হয়

এই কুড়ে ঘরের যিনি গৃহিনী তার নাম রেখা পাত্ররেখা পাত্রর এই কুড়ে ঘরটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কোলকাতা থেকে ৭৫.৯ কিলোমিটার দূরে সন্দেশখালী নামক সুন্দরবনের কূল ঘেষা নামক একটা দ্বীপ বা পোল্ডারেএই রেখা পাত্রই এবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যের বসিরহাট কেন্দ্র থেকে সে দেশের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির মনোনয়ন পেয়েছেন

  বড় কলাগাছি নদীতে ইঞ্জিন চালিত বোট  

নির্বাচন, রেখা পাত্র আর সন্দেশখালী 

আর মনোনয়ন পাওয়ার পরে ধীরে ধীরে ভারতের নির্বাচন, সন্দেশখালী এবং রেখা পাত্র এখন প্রায় সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছেআর্ন্তাজাতিক মিডিয়ায় বার বার উঠে আসছে রেখা পাত্রের নামভারতের মিডিয়ায় শুধু খবর নয় যে কোন টকশো- তাই যত বড় মাপের আলোচক হোন না কেন, আর যে ভাষায় সেটা হোক না কেন, একবারের জন্যে হলেও সেখানে উল্লেখ করা হচ্ছে সন্দেশখালি আর রেখা পাত্রপ্রথমের দিকে এই সন্দেশখালি ও রেখা পাত্র শুধু মাত্র ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে একটি হঠ্যাত্‌ ঝলসে ওঠা নাম ছিলো

মমতার ব্যনার্জ্জী 

কিন্তু ক্রমেই তা বিস্তৃত হয়ে ১. ৪ বিলিয়ন মানুষের দেশের ৯৭০ মিলিয়ন ভোটারের নির্বাচনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেঅনেক জাতীয় নেতাকে ছাপিয়ে মিডিয়াতে বার বার উচ্চারিত হচ্ছে রেখা পাত্রের নামআর পশ্চিমবঙ্গে মুর্শিদাবাদ থেকে জলপাইগুড়ি, সুন্দরবনের সাগরের কূল ঘেষা গোসাবা অবধি সাধারন মানুষের মুখে মুখে যেমন তার নাম- তেমনি  কোলকাতার পশ ক্লাবের উচ্চ মধ্যবিত্তের ডিনারকালীন আলোচনায়ও যতবার না উঠে আসছে সন্দেশ খালী বা রেখাপাত্রর নাম তার সিকিভাগও উঠে আসছে না সে রাজ্যের মাস-পিপলের একমাত্র নেতা মমতা ব্যানার্জীর নাম

নারী ভোট টানছেন রেখা পাত্র

জলপাইগুড়িতে ভোট হয়ে গেছে, কোলকাতার পাশাপাশি বারাসাত, বহরমপুরে এখনও ভোট হয়নিএ সব জায়গায় সাধারণ কাজের সঙ্গে যুক্ত বা গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন এমন ভদ্র মহিলাদের সঙ্গে নানান কথাবার্তার ফাঁকে বেশিভাগই বললেনপশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যনার্জির একটি বড় ভোটব্যাংক মহিলা ভোটএবার রেখা পাত্র সে জায়গাটা নাড়িয়ে দিতে পারে। 

এই কথার সঙ্গে অনেকটা মিলে যায় পশ্চিমবঙ্গের সাবেক এক ডাকসাইটে সম্পাদকের বক্তব্যতাকে শুধু সম্পাদক বললে ভুল হবেতিনি ডগ-নোজ রিপোর্টার থেকে সম্পাদক হয়েছিলেননিজেই একটা প্রতিষ্ঠানএকটি শব্দ বাড়তি বলেন নাতিনি কিছুটা হালকা মেজাজে লাঞ্চের টেবিলে কথাটা ভাসিয়ে দিলেন,  “দেখ না শেষ অবধি বিজেপি পশ্চিমবঙ্গেই সব থেকে ভালো করে কিনা?” তার এ কথার সঙ্গে মিলে যায়,  মমতার অন্যতম ভোট ব্যাংক নারী ভোট ব্যাংকে রেখা পাত্রর তরবারীর আঘাত

 

কেমন জায়গা সন্দেশখালী

বর্তমানে কোলকাতা থেকে পৌনে তিন ঘন্টার মধ্যে গাড়িতে সন্দেশ খালির এপারে পৌঁছানো গেলেও পঞ্চাশ বা ষাটের দশকে কোলকাতা থেকে সেখানে যেতে হলে দুই তিন দিনের একটা হ্যাপা ছিলো।কোলকাতা থেকে নির্দিষ্ট কয়েকটি ট্রেনে ক্যানিং অবধি যেতো। ওই ট্রেনে ক্যানিং পর্যন্ত পৌঁছানো।  তাও ক্যানিং অবধি ইংরেজরা রেল লাইন টেনেছিলো মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে তারা ক্যানিংকে সিঙ্গাপুরের বিকল্প বন্দর তৈরি করবে বলে।

 ছোট কলা গাছি নদী

 

পরে সমুদ্র জরিপে তারা এই বন্দরের ভবিষ্যত নিয়ে হতাশ হয় – এবং ওখানেই উন্নয়ন থেমে থাকেতাই ক্যানিং থেকে গোটা কয়েক ছোট সাইজের লঞ্চে বাসন্তী অবধি যাওয়া যেতোতারপরে হাতে চালিত নৌকাই ছিলো ভরসাবড় নদী পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হতো বড় কলাগাছি নদীর পাড়ের সন্দেশখালিতে। 

বড় কলাগাছি নদী 

১৯৪৭ এর বাংলাভাগের আগে সেখানে খুব কোন মানুষ বসতি ছিলো কিনা জানা যায় নাষাটের দশকে দেখেছি মূলত সুন্দরবন বাহিত নদী ঘেরা এই দ্বীপ বা পোল্ডারটিযা মূলত বড় কলাগাছি ও ছোট কলাগাছি নদী দিয়ে ঘেরাদ্বীপটি ছিলো মূলত ঘন গরানবন কিছু সুন্দরী এবং সুন্দর বনের ওড়া, কেওড়া ও গেওয়া গাছে ভর্তিসে সব কেটে দু এক ঘর করে পূর্ববাংলা থেকে যাওয়া রিফিউজিরা বাস করতে শুরু করেছে

এঁদো পুকুর আর ব্যাটারি চালিত রিকসা

 সন্দেশখালির পাকা রাস্তার পাশের এদো পুকুর 

এর পরে পাঁচ দশকের বেশি সময়ের পরে সন্দেশ খালী গিয়ে দেখা গেলো সেই গরান, সুন্দরী বা গেওয়া গাছের কোন চিহ্ন নেইসন্দেশখালীতে একটি ছোট বাজারও হয়েছেপাকা রাস্তাও হয়েছেতারপরেও বলা যায় এঁদো পুকুরের এলাকাসন্দেশ খালী ফেরিঘাটেই যানবাহন রেখে ইঞ্জিন চালিত বোটে পার হয়ে যেতে হবে সেখানেসন্দেশ খালিতে যানবাহন বলতে এখনও ব্যাটারি চালিত রিকসাযতটুকু পাকা রাস্তা সেখান আছে তা একটা ব্যাটারি চালিত রিকসা নিয়ে ঘুরলে একশ টাকার বেশি লাগে নাদুশো টাকা দিলে খুশী মনে আধা বেলা সময় দেয় রিকসাওয়ালাঅর্থাত সেখানে আয় রোজগারেরও খুব কোন সুযোগ নেইফেরিঘাটে ২৯ এপ্রিলের তীব্র গরমেও দেখা গেলো খুব কম লোকই ডাব, তরমুজ,শসা বা কলা কিনছেআধ ঘন্টা মতো সময়ে মাত্র চারটি কলা বিক্রি হতে দেখা গেলো। 

 দরিদ্র কৃষকের সম্পদ তার একটি ছাগল

ছোট পাকা রাস্তার পাশে এঁদো পুকুরসেখানে গরমে জল কমে যাওয়াতে জলের সঙ্গে শ্যাওলা মিলে নীলাভ ময়লা রঙ ধারণ করছেসম্পন্ন কৃষক পরিবার যেভাবে তাদের পুকুরের পানি পরিস্কার রাখে তেমনটি কোথাও দেখা গেলো নাকয়েকটি বাড়িতে টিউবওয়েল থাকলেও এই এঁদো পুকুরেই অনেককে গোসল করতে দেখা গেলোআর অধিকাংশ বাড়িরই সংস্কারের অভাবে, ঘরের চাল না হয় বেড়া ভাঙ্গাতাছাড়া এই পোল্ডারের অধিবাসীদের গায়ের কাপড় বা বাড়িতে পশু সম্পদ বলতে একটা ছাগল, একটা গরু এসব প্রমান করে এখানকার মানুষ বেশি ভালো নেই। 

কেন তারা ভালো নেই

তারা কেন ভালো নেই মানে এ নয় যে তারা কখনও এর থেকে ভালো ছিলো না এমন নয় রেখা পাত্রর শ্বশুর জানালেন এই পোল্ডার বা দ্বীপে তাদের জমি ও বাড়ি স্থায়ীভাবে দেয় বামফ্রন্ট সরকারএখানকার জমি খুব উর্বর ভালো ফসল হতো, শুধু তার বাড়ি নয়, আশে পাশের বাড়িতেও আম, জাম সহ নানান ধরনের ফলের গাছ ছিলোপুকুরে ভালো মাছও হতোতারা ফসল ফলিয়ে, বাড়ির শাক সবজী ও ফল মূলের ওপর নির্ভর করে ভালোই জীবন যাপন করতেন

শুকিয়ে যাওয়া মাছের ঘের

 

তাদের আজকের এই দুর্দশার কারণ বলতে গিয়ে তিনি তার বাড়ির যে ভাঙ্গা ঘরটির সঙ্গে কয়েকটি পাতা দিয়ে ছাউনি দেয়া একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়েই পেছনের দিকে আঙুল তুললেনতার আঙুল বরাবর তাকাতেই দেখা গেলো বিলের কিছু কিছু মাটি ফেটে চৌঁচির হয়েছে, তার চার পাশে বাধ দেয়াআর কোন কোন বাধের ভেতর এখনও জল আছে। 

এগুলো কি জানতে চাইলেই তিনি বললেন, “এটাই তো আমাদের মূল সমস্যাএই আমার বাড়ির সামনের ও পেছনের জমি যেমন আমার পরিবারেরঅথচ সেখানে জোর করে মাছের চাষ করা হচ্ছে তেমনি আশের পাশের সকলের জমিতে এভাবে জোর করে মাছের ঘের করা হয়েছেএখন তো না হয় আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন, বর্ষাকালে আমার এই উঠানেই হাটু জল কখনও কোমর জল থাকেকারণ, ওরা বাধ করে মাছ চাষ করে জল নামতে দেয় না।“ ওরা কারা জিজ্ঞেস করতে তিনি বলেন,  

 “ওরা সকলে সরকারি দলের লোকসরকারি বলতে ভারতের কেন্দ্রিয় সরকার নয়,  পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের, তৃনমূলের লোকআর এদের নেতা সেখ শাহাজাহানতিনি ও তার লোকেরা আমাদের জমি দখল করে মাছ চাষ করেআমাদের জমির মাটি কেটে নিয়ে গিয়ে ইট তৈরি করেঅথচ আমাদের কোন পয়সা দেয় নানিয়ম হলো কারো জমিতে মাছ চাষকরলে তাকে জমির পরিমান মাফিক একটা টাকা দিতে হবে। কিন্তু তা তারা দেয় না।“

বেড়ি বাধ দেয়া  মাছের ঘের

তিনি বিজেপি প্রার্থীর শ্বশুর এ কারণেই তার কথার সত্যতা যাচাই করা দরকার পড়েতিন জন ব্যাটারি চালিত রিকসার চালককে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তার ভেতর দুজন বললেন, টাকা দেবার কথা বললেও দেয় না উল্টে নির্যাতন করেএকজন নিশ্চুপ থাকেনধামাঘাট ফেরিঘাটের পাশের ফল দোকানির কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিও কথাটা এড়িয়ে যানবলেন, তিনি তার দোকান নিয়ে থাকেনরাজনীতির মধ্যে নেই

কেন অনেকে চুপচাপ

কেন অনেকে চুপচাপ তার উত্তর খানিকটা মেলে সন্দেশখালি ফেরিতে যাবার আগে বাস স্টান্ডের এক ফার্মেসী মালিকের সঙ্গে কথা বলেতিনি নিজেকে ডাক্তার বললেও, তিনি রঙ মিস্ত্রির কাজও করেনআর ফার্মেসীতে ওষুধ বিক্রি করতে করেতে যে জ্ঞান হয়েছে তা দিয়েই ডাক্তারি করেনবাড়ি সন্দেশ খালিতেতিনি জানালেন, তার ফার্মেসীতে ওষুধ খুব বেশি বিক্রি হয় নাএখানে পাস করা ডাক্তার এনে বসালেও ফিস দেবার মতো রোগি নেইএমনকি তারও যে অবস্থা খুব ভালো নেই সেটা বোঝা যায়, ব্যবসায়ী মনে করে তাকে কোলকাতায় কোন কাজ দিতে পারি কিনা এ প্রস্তাবও দিয়ে বসেএ সব কথার ফাঁকে সে বলে, আসলে সেখ শাহজাহান না থাকলেও তার লোকজন সবই আছেগোপনে আছেতারা গোপনে গোপনে সব কাজ করছেতবে এই ডাক্তার শেখ ইউসুফ চায় যে রেখা পাত্র নির্বাচনে জিতুক তার মত হলো সন্দেশ খালির মতো এমন অবহেলিত জায়গা থেকে কখনও কোন এম পি পদে কেউ দাঁড়ায়নিসব সময়ই এম পি হয় বসিরহাট থেকে। 

তার আরেকটি বক্তব্য হলো, সেখ শাহাজাহান ও তার দলের ( তৃনমূল কংগ্রেস) লোকেরা নির্যাতন ও অন্যায় করেছে ঠিকই তবে শাহাজাহন বিপদে পড়েছে বড় জায়গায় টক্কর দিতে গিয়েসে বড় জায়গা কি তা জানতে চাইলেই সে এড়িয়ে গেলো। 

জমি দখল ছাড়া আর আর কি অন্যায়

জমি দখল ছাড়া সেখানে আর যে অন্যায়ের কারণে মানুষ ফুঁসে উঠেছিলো সে অন্যায়টি মুখে মুখেযদিও কে কে সে অন্যায়ের ভিকটিম তার নাম কেউ বলে নাতবে পরোক্ষভাবে হলেও স্বীকার করেযেমন প্রদীপ নামে একজনের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, রেখা পাত্র নিজে ভিকটিম কিনা? তিনি বললেন, সেটা তিনি জানেন নাতবে এই ভিকটিমদের পক্ষে নিজের ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে রেখা পাত্র প্রতিবাদের সামনে ছিলেন তা তিনি বার বার প্রত্যক্ষ করেছেন

নারীর শ্লীলতাহানি নিয়ে মিডিয়ায় যারা সরাসরি কথা বলছেন

সে ভিকটিম কারা তা নিয়ে কিছুটা হলেও একটা ভিডিত্ত প্রকাশ হয়েছে অনেকদিন যাবতসেখানে প্রথম ভদ্র মহিলা বলছেন, “ পার্টির (তৃনমূল কংগ্রেস) লোকেরা আগে এসে দেখে যাবে কোন বাড়ির বউটা সুন্দরএবং কার বয়স কমতার পরে হুমকি চলে আসবে, তোমার বাড়ির বউ তুমি ছেড়ে দাওতুমি স্বামী হতে পারোতবে তোমার কোন অধিকার নেইনিয়ে চলে যাবেরাতের পর রাতএকদিনের জন্যে নয়যতক্ষন না মন ভরবে ততক্ষণ রেহাই নেইওই ভিডিওতে আরেকজন বলছেন, “ পার্টির লোকেরা এসে দেখতো আগের থেকেতারপরে রাতের বেলায় নিয়ে যেতো।“ 

পশ্চিমবঙ্গের তৃনমূল কংগ্রেসের নেতা- কর্মীরা বলছে, এটা তাদের বিরুদ্ধে অপ-প্রচারবিজেপি করাচ্ছেতবে সন্দেশখালির সাধারণ বেশ মানুষ অর্থাত্‌ পথ চলতি মানুষ, ব্যাটারি চালিত রিকসাওয়ালা ও মুদি দোকানি ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে, তারা যা বলেন, যা মানুষে করে না সে সব ঘটনা ঘটে গেছেঅনেকে নীরবে চলে যানকথার উত্তর দেন না। 

রাষ্ট্র ক্ষমতাই কি শুধু শক্তি 

রাষ্ট্র ক্ষমতা যে কিছুটা দায়ী তা সন্দেশ খালির পার্টি অফিসের এই রেপ হয়ে পরে মারা গেলে সে ঘটনা নিয়ে সে রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেছিলেন, আগে মেয়েটার চরিত্র কেমন ছিলো দেখতে হবেসে প্রেগন্যান্ট ছিলো কিনা তা দেখতে হবেসে সময়ে ভারতের কোলকাতার বাংলা পত্রিকা আনন্দ বাজার একটি সম্পাদকীয় কলাম লেখেন একটি উপসম্পাদকীয়ও লেখা হয়পত্রিকাটির বর্তমান সম্পাদক একজন নারীমমতা ব্যানার্জীর ওই উক্তি যে নারী হিসেবে তাকে কোন নিচে নিয়ে গেছে তার সর্বোচ্চ প্রকাশ ছিলো ওই সম্পাদকীয়টিতখন ওই দেশের বাইরের লোক ও ভারতের অনান্য রাজ্যের লোক ভাবতে পারেনি ওই দ্বীপ বা পোল্ডারটিতে আসলে কী ঘটছে। 

তবে প্রশ্ন থেকে যায়, একজন নারী হয়ে বাস্তবে মমতা কি সত্যিই অন্তর থেকে ওই কথা বলেছিলেন না ক্ষমতার মোহ না অন্য কোন ক্ষমতার কাছে তিনি পরাজিত। 

আর কী ক্ষমতা আছে সুন্দরবনের এই অঞ্চলগুলোতে

সুন্দরবনের এই অঞ্চলগুলোতে আর কী ক্ষমতা আছে তা ২০১৯ সালে প্রকাশিত অমিতাভ ঘোষের Gun Island উপন্যাসে বেশ কিছুটা পাওয়া যায়বাংলাদেশ ও ভারতের অন্যতম একটি মানব পাচার জোন এটিতাছাড়া আরো অনেক কিছু পাঁচার হয় এ এলাকা দিয়েবাংলাদেশ ও ভারতের এই সুন্দরবন এলাকায় গত কয়েক বছর যতটা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে, তাতে দেখা গেছে এটা অনেক বড় চোরাচালান বা পাচার রুটের একটি কেন্দ্রবিন্দু সেন্ট্রাল এশিয়া, ইউরোপ প্রভৃতি এলাকায় তাছাড়া ভারতের নানান জায়গায় ড্রাগ থেকে শুরু করে অবৈধ পথে শ্রমিক ও নারী পাচার হয় এ পথেপাচার হয় অবৈধ অস্ত্রওযারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের শাদা অর্থের বাইরে থাকে বিপুল পরিমানে কালো অর্থ থাকেআর রাজনীতিবিদরা বা নেতারা ও তাদের পরিবার যখন অর্থের সঙ্গে জড়িয়ে যান তখন কালো অর্থের মালিকরা রাষ্ট্রে সব থেকে বেশি শক্তিশালী হয়

শাহজাহানের রয়েছে এমন অনেক ইটের ভাটা 

সেখ শাহজাহানের অর্থের উত্‌স দেখা যাচ্ছে একের পর এক ইট ভাটা ও  বিশাল সেখ শাহাজাহান মার্কেটতবে আসলে কি তার অর্থ এর মধ্যে সীমাবদ্ধতার যে বিপুল রোহিঙ্গা বাহিনী, তাছাড়া বিপুল কর্মী বাহিনী দিন ও রাতের এদের চালাতে অর্থ কোত্থকে আসে

 সেখ শাহজাহানের মার্কেট 

রেখা পাত্রর কুড়ে ঘরের সামনে

রেখা পাত্র অতি সাধারণ দরিদ্র ঘরের গৃহবধুতার স্বামী তামিল নাড়ুতে একজন পরিযায়ী শ্রমিকতার ভাসুর অর্থাত্‌ স্বামীর বড় ভাই অতি সাধারণ একজন শ্রমিকতার ভাসুর ও তার ভাসুরের স্ত্রী, শ্বশুর ও শাশুড়ি ও বাড়ির সন্তানটির ছবি এই  এ দেখেই বোঝা যায়, রেখা পাত্রর অবস্থান ও তার দৃষ্টি সীমা

রেখা পাত্রর শ্বশুর

তিনি তার দৃষ্টিসীমায় দেখছেন, তাদের এলাকার লোকের চাষের জমি জোর করে নেয়া হয়েছেতাদের জমিতে মাছ চাষ করে টাকা দেয় নাতাদের এলাকার মেয়েদেরকে পার্টির লোকেরা শ্লীলতা নিয়ে টানাটানি করে

রেখা পাত্রর শাশুড়ি 

তার কমিটমেন্ট, তিনি নির্বাচিত হলে এগুলো সমাধান করবেন। 

কিন্ত সন্দেশখালীর ফেরি পার হয়ে আসতেই অনেকে আকার ঈংগিতে বললেন, সেখ শাহাজাহানের মানুষ তলে তলে সবাই এক আছে শাহাজাহানের যাই ঘটুক তার মানুষরা বাইরে আছে, তারা অর্থ বাইরে আছেসে রাতের সমুদ্রের মানুষ আর রেখা পাত্র দিনের আলোর মত পরিস্কার একজন সাধারণ শ্রমজীবি ঘরের বাঙালি গৃহবধুতাই ওই রাতের সমুদ্রের মানুষের সঙ্গে লড়াইয়ে তিনি অনেক অসমান। 

কিন্ত তার পরেও কুড়ে ঘর ফুড়ে তিনি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছেন নারীর অধিকারের, নারীর মর্যাদার লড়াইয়ে বের হয়ে এসে

 

২৯ তারিখ দুপুরের খাবার খাচ্ছেন রেখা পাত্রর স্বামীর বড় ভাই তার স্ত্রী ও এক সন্তান 

একজন সাংবাদিক হিসেবে তার কুড়ে ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে তাই মনে হলো, এটুকু কুড়ে ঘরে আগুন লাগলে তা কতদূরই বা ছড়ায়, অথচ মেয়েটি ভারতের নির্বাচনে রাহুল গান্ধি,  নরেন্দ্র মোদির এলাকার থেকেও বেশি সংখ্যক দেশ বিদেশী সাংবাদিক টেনে আনছে তার এই ভাঙ্গা কুড়ে ঘরের সামনে     

 আন্দোলনের সময় বার বার কোলে স্থান পেয়েছে যে শিশুটি 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024