সারাক্ষণ ডেস্ক
অভিযান অত্যাসন্ন।। এক লাখ ফিলিস্তিনিকে পূর্ব রাফা ছাড়তে ইসরায়েলি সেনাদের নির্দেশ। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পূর্ব রাফা থেকে ১০০, ০০০ ফিলিস্তিনিকে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে বলে সোমবার জানায়। তাদের আল মাওয়াসিস্থ “মানবিক নিরাপত্তাপূর্ণ এলাকায়” চলে যাওয়া উচিত বলে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর এক মুখপাত্র জানান।
দক্ষিণ গাজা সিটিতে প্রত্যাশিত স্থল অভিযানের প্রাক্কালে একথা জানানো হল। সেনা মুখপাত্র জানান, মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া আমাদের হামাসকে নির্মূল করার পরিকল্পনার অংশ। রাফায় তাদের উপস্থিতি ও তাদের সামর্থ্যের এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা গতকাল আমরা পেয়েছি। রোববার ইসরায়েল ও গাজার মধ্যবর্তী কারেম শ্যালম সীমান্ত ক্রশিংয়ের দিকে ছোঁড়া একগুচ্ছ রকেটের আঘাতে তিন ইসরায়েলি সৈনা নিহত ও ডজন খানেক আহত হয়। সেগুলো রাফার কাছাকাছি এক এলাকা থেকে ছোঁড়া হয়েছিল বলে সেনাবাহিনী জানায়। তিনি বলেন, লোকজনকে অপসারণ করার পরিকল্পনার উদ্দেশ্য তাদেরকে ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা। এদিকে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওয়াভ গ্যালান্ট কোন সাময়িক অস্ত্রবিরতি চুক্তি না হলে রাফায় এক অত্যাসন্ন আক্রমণ চালানোর হুমকি দিয়েছেন। রাফায় প্রায় ১৫ লাখ গাজাবাসী আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে, গাজায় অস্ত্রবিরতির সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়ছে, কারণ হামাস জিম্মিদের মুক্তিদানের বিনিময়ে যুদ্ধের অবসান করার দাবী পুনর্ব্যক্ত করেছে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহু সেই সম্ভাবনা সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছেন। মিসরে শান্তি আলোচনা অনিশ্চয়তার মুখে পড়ার মধ্যে গ্যালান্ট তাঁর সরকার রাফা এবং গাজা জুড়ে অন্যান্য স্থানে অতি শীঘ্রই এক শক্তিশালী অভিযান শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে হুঁশিয়ার করে দেন। হামাস ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে যুদ্ধ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয় এমন যে কোন চুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করবে বলে ঘোষণা করার পর কায়রোতে আলোচনা অচল হয়ে পড়ে। কায়রোতে মিসরীয় ও কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে হামাস আলোচকরা যে কোন অস্ত্রবিরতি চুক্তিকে অবশ্যই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে বলে তাঁদের অবস্থানে অনড় থাকেন। ফিলিস্তিনী কর্মকর্তারা একথা জানান। পরোক্ষ কূটনীতিতে অংশ নিতে ইসরায়েলী কর্মকর্তারা কায়রোতে যান নি, কিস্তু নেতানিয়াহু প্রায় সাত মাস আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলের লক্ষ্য পুনর্ব্যক্ত করেন, যা হলো: ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থী আন্দোলন হামাসকে চিরদিনের মত নিরস্ত্রও ধ্বংস করা, নয়তো ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তাকে বিপন্ন করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি হামাসের হাতে এখনও আটক জিম্মিদের মুক্তি অর্জনের জন্য গাজার লড়াইয়ে বিরতি আনতে রাজি রয়েছে। জিম্মিদের সংখ্যা ১৩০ জনেরও বেশি বলে মনে করা হয়। নেতানিয়াহু বলেন, তিনি যুদ্ধ অবসান বা গাজা থেকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রত্যাহারের জন্য হামাসের উত্থাপিত দাবী মেনে নিতে পারেন না।
ইসরায়েলের দাবী, দক্ষিণ গাজাস্থ রাফা হামাসের সর্বশেষ শক্তিশালী ঘাঁটি। সেখানে স্থল আক্রমণের পর ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া অন্যান্য ব্যাটেলিয়নের অবশিষ্টাংশ ছাড়াও চারটি অক্ষত ব্যাটেলিয়ন রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ নেতানিয়াহুর মিত্ররা এক মানবিক বিপর্যয় এড়ানোর জন্য রাফা আক্রমণ শুরু করার পরিকল্পনা পরিত্যাগ করতে তাঁর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। রবিবার সৈন্যদের উদ্দেশে ভাষণদানকালে গ্যালান্ট রাফা আক্রমণ অত্যাসন্ন বলে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আমাদের এই যুদ্ধের স্পষ্ট লক্ষ্য রয়েছে: আমরা হামাসকে নির্মূল এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা এই ভয়াবহ লক্ষণ চিহ্নিত করেছি যে, হামাস প্রকৃতপক্ষে আমাদের সঙ্গে কোন চুক্তি করতে চায় না। এর অর্থ ভবিষ্যতে খুব শীঘ্রই রাফা ও সমগ্র গাজা এলাকাতে এক অভিযান। নেতানিয়াহু বলেন, তিনি হামাসের হাতে এখনও আটক জিম্মিদের মুক্তি অর্জনের জন্য ৪০ দিনের জন্য যুদ্ধ-বিরতিতে রাজি আছেন। কিস্তু তিনি তাঁর “সব লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ অবসানের কোন সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। হামাস রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, দলটি কেবল এমন কোন চুক্তিই করবে, যা শতশত ফিলিস্তিনি বন্দীকে জিম্মিদের সঙ্গে বিনিময় করা ছাড়াও গাজা থেকে ইসরায়েলিদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার নিশ্চিত করবে। হানিয়া “আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়া এবং সংঘাতের ক্ষেত্র প্রসারিত করা এবং মধ্যস্থতাকারী ও বিভিন্ন পক্ষের মাধ্যমে চালানো প্রয়াস বানচাল করার” দায়ে নেতানিয়াহুকে দোষারোপ করেন। গত ৭ অক্টোবর হাজার হাজার হামাস মিলিশিয়া স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইসরায়েল আক্রমণ করে ১,২০০ ব্যক্তিকে হত্যা ও অন্তত ২৫০ জনকে জিম্মি হিসাবে আটক করলে যুদ্ধের সূচনা হয়। হলোকাস্টের পর ইহুদির জন্য এটিই ছিল ভয়াবহতম একক দিবস। এর পর ইসরায়েলি বোমবর্ষণে হামাসের হিসাবে ৩৪ হাজারের বেশি লোক মারা যায়।
Leave a Reply