“কারণ তখন তিন বছর সব ধরনের নিয়োগের পরীক্ষা বন্ধ ছিল। সরকার ব্যাক ডেটে চাকরিতে আবেদনের সুযোগ দিলেও খুবই শর্ট টাইম পাই আমরা। ফলে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের বয়সসীমা ৩৫ বছর না করলে আমাদের সেশনের মতো যাদের পড়ালেখা শেষ করতে ২৫-২৬ বছর লেগে যায় তারাও বিপদে পড়বে,” বলেন মিজ আক্তার।
এতে বলা হয়েছে, “বিভিন্ন পর্যায়ের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৩৫ বছর (বিচারক নিয়োগ পরীক্ষা, ডাক্তার, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩৭ বছর), পুলিশের এসআই ও সার্জেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩০ বছর পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।”
তবে, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এরই মধ্যে জানিয়েছেন, এটি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত দেবেন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ সাদিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এটি একটি রাষ্ট্রের একেবারেই নীতিগত বিষয়। সরকার যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে সেটি বাস্তবায়ন করবে পিএসসি। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পিএসসি নিয়োগের সার্কুলার দিয়ে তা বাস্তবায়ন করবে।”
বিবিসি বাংলাকে মি. মজুমদার বলেন, “৩০ বছর যথেষ্ঠ সময়। ২৩ বছরে গ্রাজুয়েশন শেষ করে সরকারি চাকরিতে ঢুকতে ওই সময় যথেষ্ট। বয়স আরো বাড়ালে যারা নতুন করে সরকারি চাকরিতে জয়েন করবে তারা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে। কারণ এর ফলে চাকরিতে বয়স্ক লোকদের সংখ্যা বাড়বে, তরুণদের সংখ্যা কমে যাবে।”
ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ভেদে ও ধরন অনুযায়ী ৪২ বছর পর্যন্ত চাকরির আবেদন করা যায়
ভারতে যে বয়সসীমা
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিভিন্ন রাজ্যভেদে ও চাকরির ধরন অনুযায়ী আবেদনের বয়সসীমা ৩২-৪২ বছর পর্যন্ত নির্ধারিত রয়েছে।
সরকারি চাকরির বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দেশটির ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন।
এই কমিশনের ওয়েবসাইটে ইনডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসে (আইএএস) আবেদন করার বয়স উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে।
ভারতে প্রশাসনিক সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে হলে ন্যূনতম ২১ বছর এবং সর্বোচ্চ ৩২ বছর বয়সের মধ্যে আবেদন করা যাবে। তবে, বিভিন্ন ধরনের কোটায় আবেদন করার বয়সের পার্থক্য রয়েছে।
যেমন: শারীরিকভাবে যারা প্রতিবন্ধী তারা সর্বোচ্চ ৪২ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করতে পারবে। অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির জনগণ সরকারি চাকরিতে ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করতে পারবে। দলিত শ্রেণির জনগণ ৩৭ বছর পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারবে।
নেপালের সরকারি চাকরির বয়সসীমা
বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালে সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দেশটির পাবলিক সার্ভিস কমিশন। এই কমিশনের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন পদে আবেদনের জন্য বয়সের যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
সরকারি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সিভিল সার্ভিস ও লেজিসলেটিভ পার্লামেন্ট সার্ভিসে আবেদনের ক্ষেত্রে গেজেটেড ও নন-গেজেটেড পদের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
গেজেটেড ও নন গেজেটেড পদ যেমন: ক্রয়কারী, নায়েব সুব্বাসহ এ ধরনের পদে আবেদন করার ক্ষেত্রে পুরুষের ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৮ বছর। এবং সর্বোচ্চ ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। তবে, নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ৪০ বছর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবে।
এছাড়া গেজেটেড পদ যেমন: শাখা কর্মকর্তা, উপসচিব এবং যুগ্ম সচিব বা এ ধরনের পদে আবেদনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স ২১ বছর এবং সর্বোচ্চ ৩৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। এ ধরনের পদে মহিলা ও প্রতিবন্ধীরা ৪০ বছর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবে।
তবে, শূন্য পদের ক্ষেত্রে উপ-সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে সর্বোচ্চ ৪৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করার বিধান রেখেছে নেপালের পাবলিক সার্ভিস কমিশন।
স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রাথমিক স্তর বিশেষ করে সহকারী স্তরের পদে সর্বনিম্ন ১৮ বছর এবং সর্বোচ্চ ৪৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। অফিসার পদগুলিতে সর্বনিম্ন ২১ বছর ও সর্বোচ্চ ৪৫ বছরের ব্যক্তিরাও আবেদন করতে পারবেন।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের এই ওয়েবসাইটে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, সিভিল সার্ভিস, বিচার বিভাগ, সংসদ এবং স্বাস্থ্য সেবায় স্থায়ী কর্মচারীদের জন্য কোনো বয়সসীমা নির্ধারিত নেই।
শ্রীলঙ্কায় যে বয়সসীমা
শ্রীলঙ্কার সরকারি ওয়েবসাইট ‘প্রেসিডেন্সিয়াল সেক্রেটারিয়েট’ এ সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা নিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই দেশটি সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করেছে। স্নাতক পাশ করা চাকরি-প্রার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকশে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
সরকারি এই ওয়েবসাইটে দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্নাতক পাশ করা বেকার ব্যক্তিরা সরকারের যে কোনো কর্মসূচির অধীনে ৪৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবে। আগে এই বয়সসীমা ছিল ৩৫ বছর।
তবে, সরকারি চাকরির সব ক্যাটাগরির জন্য এই বয়সসীমা প্রযোজ্য নয় বলে জানা যায়।
পাকিস্তানে চাকরির বয়স নিয়ে যে অবস্থা
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শুধু বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেই সরকারি চাকরিতে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর।
পাকিস্তানের সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে দেশটির ফেডারেল পাবলিক সার্ভিস কমিশন।
এই কমিশনের ওয়েবসাইটে সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়সের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সীমা উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে সর্বনিম্ন ২১ বছর ও সর্বোচ্চ ৩০ বছর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। তবে বিশেষ বিশেষ কোটার ক্ষেত্রে ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরি প্রত্যাশীরা আবেদন করতে পারবে।
তবে সম্প্রতি দেশটির বেলুচিস্তান রাজ্য সরকার এই বয়সসীমা ৪৩ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওয়েবসাইট খুঁজে দেখা যায়, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে ৩৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে সরকারি চাকরিতে আবেদন করার নিয়ম রয়েছে। আফগানিস্তানে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং মালদ্বীপে সর্বোচ্চ ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত সরকারি চাকরির আবেদন করা যায়।
বিবিসি নিউজ বাংলা
Leave a Reply