গাজার রাফা ও কারেম শালম ক্রসিং পয়েন্ট বন্ধ করে দেয়ার ফলে গাজায় সহায়তা প্রবেশ পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ক্রসিং দুটি খুলতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। মিশর সীমান্তে অবস্থিত রাফার পূর্ণ মাত্রায় অভিযান চালানো একটি কৌশলগত ভুল বলেও মনে করেন তিনি। রাফায় পূর্ণ মাত্রায় অভিযান চালালে সেখানে ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি হবে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল-জাজিরা।
খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলের গাজার রাফা ক্রসিং দখলের পর সেখানে মানবিক সংকট আরো ভয়াবহ হয়েছে। এরইমধ্যে সেখানে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। দ্রুত সীমান্ত খুলে না দিলে দুই এক দিনের মধ্যেই রাফায় ত্রাণ দেয়ার মতো আর কোনো খাদ্য অবশিষ্ট থাকবে না। এছাড়া সেখানে কোনো চিকিৎসা সরঞ্জামেরও সরবরাহ নেই। ফলে গাজাবাসী এখন চরম দুর্ভিক্ষ এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
এক বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, প্রতিনিয়ত ইসরাইলিদের মানবিক সহায়তা বন্ধের সাথে সাথে ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর ঝুঁকি আরো বাড়ছে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনাতাকামী সংগঠন নতুন করে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় সম্মতি দেয়ার পরেও তা মানতে নারাজ ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, নতুন চুক্তিতে ইসরাইলের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
পাশাপাশি তিনি রাফায় পূর্ণ অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, সপ্তাহান্তে রকেট হামলায় ইসরাইলের চার সেনা নিহত হওয়ার পর কারেম শালম ও রাফা সীমান্ত বন্ধ করে দেয় ইসরাইল।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার গাজা নগরীর একটি অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে আজ বুধবার বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই হামলায় সাতজন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের বার্তা সংস্থা ওয়াফা নিউজ এই তথ্য দিয়েছে।
অ্যাপার্টমেন্ট ভবনটি গাজা নগরীর পূর্ব দিকের জেইতুন এলাকায় অবস্থিত। ওয়াফার খবরে বলা হয়, হামলায় একটি পরিবারের সাত সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন স্বামী, স্ত্রী ও তাঁদের পাঁচ সন্তান।
এদিকে দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে একটি মোটরসাইকেল নিশানা করে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই হামলায় দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েকজন। হামলার ঘটনাটি ঘটেছে সালাহ আল-দিন গেট এলাকায়।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, রাফায় স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। গতকাল মঙ্গলবার মিসর সীমান্তবর্তী রাফা ক্রসিংয়ের ফিলিস্তিনি অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় প্রায় ৩৪ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহত মানুষের ৭০ শতাংশই শিশু ও নারী।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বুধবার (৮ মে) সকাল ৮টায় সারাদেশের ১৩৯ উপজেলায় একযোগে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। যা বিরতিহীনভাবে চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় এই পর্বে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে ২ কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষ।
গত ২১ মার্চ ঘোষিত তপসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলায় ভোট হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে হাতিয়া, মুন্সীগঞ্জ সদর, বাগেরহাট সদর, পরশুরাম ও শিবচর এই পাঁচটি উপজেলার সব পদের প্রার্থীরা বিনা ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। অর্থাৎ এই পাঁচ উপজেলায় কোনো পদেই ভোটের প্রয়োজন পড়ছে না। উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ, মৃত্যুজনিত, প্রশাসনিক ও ধাপ পরিবর্তনের কারণে আটটি উপজেলার ভোট স্থগিত করেছে ইসি। শেষ পর্যন্ত প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট হচ্ছে।
ভোটে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিস্তার প্রতিরোধে এবার কঠোর অবস্থানে ইসি। ইতিমধ্যে আচরণবিধি লঙ্ঘনের সত্যতা পাওয়ায় জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামের প্রার্থিতা বাতিল করে ইসি। যদিও গতকাল বিকালেই ঐ উপজেলার ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। যে এলাকায় মন্ত্রী-এমপিরা প্রভাব বিস্তার করতে পারেন—সেই সব এলাকার ডিসি-এসপিদের কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো প্রকার প্রভাব বিস্তার করলে ভোট বন্ধের সিদ্ধান্তও আছে।
ভোটকে সুষ্ঠু করতে ১৩৯ উপজেলায় ৮২ হাজার ৭৩৩ জন পুলিশ মোতায়েন থাকবে। ১২ হাজার ৭৮০ জন বিজিবি সদস্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। রিজার্ভ থাকবে ১৮৩০ জন। ভোটকেন্দ্র এবং মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭৪ জন আনসার সদস্য মোতায়েন থাকছে। পাশাপাশি প্রায় আড়াই হাজার রেব সদস্য মোতায়েন থাকবে। ভোটের পরিবেশ শান্ত রাখতে স্বাভাবিক এলাকায় সাধারণ কেন্দ্রে ১৭ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ বা ১৯ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া বিশেষ এলাকায় (পার্বত্য ও দুর্গম এলাকা) সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ বা ২১ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়াও উপজেলার আয়তন, ভোটার সংখ্যা ও ভোটকেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রতি উপজেলায় ২ থেকে ৪ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনটি পদে ১৬৬৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৭০, ভাইস চেয়ারম্যান ৬২৫ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৪০ জন প্রার্থী রয়েছেন। তবে ভোটের আগেই এই ধাপে চেয়ারম্যান পদে আট, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ করে অর্থাৎ মোট ২৮ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ২০২৬ সালে অর্থনীতির সংকট আরও প্রকট হতে পারে, কারণ সরকারকে বৈদেশিক ঋণ ও স্থানীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
আজ মঙ্গলবার ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে সংগঠনটি আয়োজিত এক সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি জানান, এর আগে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন- ২০২৪ সালে দেশের অর্থনীতি সংকটে পড়বে এবং সরকারের উচ্চ ঋণ পরিশোধের কারণে তা হয়েছে।
‘একইভাবে ২০২৬ সালে দেশ মারাত্মক সংকটের মুখোমুখি হবে, কারণ সরকার ইতোমধ্যে বিদেশি ঋণদাতা সংস্থা এবং স্থানীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে এবং বড় অঙ্কের ঋণ পরিশোধ শুরু করতে হবে।’
মোট ঋণ নেওয়া অর্থের মধ্যে কেবল সরকারি অংশ নয়, বেসরকারি খাতেরও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ রয়েছে, যা ডলারে পরিশোধ করতে হয়। তাছাড়া মোট ঋণের ২০ শতাংশ বৈদেশিক ঋণ এবং বৈদেশিক ঋণের দ্বিগুণেরও বেশি স্থানীয় ব্যাংক থেকে বা সরকার টাকা ছাপিয়ে নেওয়া।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, আগে বাংলাদেশ গর্ব করে বলতো যে, বাংলাদেশ কখনই সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়নি এবং এখন এই গর্বের সঙ্গে আপস করতে হয়েছে, কারণ বাংলাদেশ সময়মতো পেট্রোলিয়াম আমদানি বিল হিসাবে পাঁচ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে পারেনি।
এছাড়া ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ডলার সংকটের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যেমন মুনাফা নিয়ে যেতে পারছে না, তেমনি বাংলাদেশে কর্মরত অনেক বিদেশি এয়ারলাইন্সও ডলার সংকটের কারণে টিকিট বিক্রি থেকে তাদের আয়ের বেশিরভাগই ফেরত নিতে পারছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গণমাধ্যমে তথ্য আসত এবং সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হতো, সে কারণেই সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথ্য সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কিছু গোলমেলে বিষয় রয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ পূর্বপরিকল্পিত, যা সরকারের ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলনের সঙ্গে প্রধান কারণগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই, তবে এখনো এটি হচ্ছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রত্যেক বছর ১৫-২০ শতাংশ করে বাজেটের আয়তন কমানো হয়। তার আবার ৭০-৮০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়। প্রকৃত বাজেটের আয়তন যে গত ১৫-২০ বছরে বাড়েনি এ কথা কি আপনারা কেউ বলেন?’
‘এর সবচেয়ে বড় শিকার হয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কারণ হিসাব মেলানোর জন্য তাকে একটি অলৌকিক লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে দেওয়া হয়। সেই অলৌকিক লক্ষ্যমাত্রা তারা (পূরণ) করতেও পারে না। ৪০-৫০ কোটি টাকা ঘাটতি থাকে। ও বেচারাদের আরেক সমস্যা,’ বলেন তিনি।
জিডিপির প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জিডিপি (দেশের মোট দেশজ উৎপাদন) অনুমিতির ভেতরে খাদ আছে। যদি জিডিপির পরিমাণ বড় হয়, তাহলে এর অনুসঙ্গ হিসেবে দায়-দেনা জিডিপির অংশ হিসেবে কমে যায়। তাহলে এটা খুব ভালো দেখা যায়। আবার একইসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর আদায় জিডিপি অনুপাত হিসেবেও কমে যায়।’
ব্যাংকিং খাত নিয়ে তিনি বলেন, ‘সুদের হার এবং ব্যাংক একীভূত করার কথা ও বিনিময় হারের এই যে সমস্যাগুলো হয়েছে, একদিকে এর বড় কারণ হলো নীতি সমন্বয়ের অভাব। আরেক দিকের বড় কারণ হলো এগুলোকে মোকাবিলা করার জন্য যে রাজনৈতিক শক্তি দরকার, সেই রাজনৈতিক শক্তির চেয়ে সুবিধা ভোগীদের সামাজিক-রাজনৈতিক শক্তি অনেক বেশি।’
Leave a Reply