সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন

ফাঁকা ভোটকেন্দ্র, সিইসি জানালেন ভোটার উপস্থিতি ৩০-৪০ শতাংশ হতে পারে

  • Update Time : বুধবার, ৮ মে, ২০২৪, ৭.৫৯ পিএম
সকাল থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম

কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ ও স্বল্প ভোটারের উপস্থিতির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশের উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপ। ভোট শেষ হওয়ার আধঘণ্টা আগ পর্যন্ত বিকেল সাড়ে তিনটায় বিভিন্ন উপজেলা থেকে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কয়েকটি উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ২০ শতাংশেরও নিচে।

তবে, বুধবার বিকেলে ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “সারাদেশে প্রথম দফার উপজেলা নির্বাচনে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে ভোটার আরো হলে ভালো হতো। ভোট কাস্টিং কত হচ্ছে সেটি ইসির দেখার বিষয় না।”

এসময় তিনি জানান, প্রথম দফার নির্বাচনে সহিংসতা ও সংর্ষের ঘটনায় ২৫ জন আহত হয়েছে।

সকাল থেকে নির্বাচনের খবর সরাসরি সম্প্রচার করতে দেখা যায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এতে দেখা যায় কেন্দ্রের নির্বাচনি পরিবেশ শান্ত থাকলেও অনেক উপজেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ছিল ফাঁকা।

নির্বাচন কশিমন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছেন, “সকাল থেকে আকাশ মেঘলা। অনেক জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। কিছু চর এলাকায় ঝড়বৃষ্টির কারণে গত রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। এসব কারণে ভোটার উপস্থিতি প্রত্যাশার চেয়ে কম।”

অনিয়মে জড়িয়ে পড়ায় দুটি উপজেলার দুই জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে আটকেরও খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ায় খাগড়াছড়ির একটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করে ইসি।

ভোটকেন্দ্র দখল নিয়ে এই নির্বাচনে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে নরসিংদী, খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়াসহ আরো কয়েকটি উপজেলায়।

নরসিংদী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সকালে নরসিংদী সদর উপজেলার কাকশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

এবারের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকলেও নিজ দলের প্রার্থীদের প্রতীক দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর আগে থেকেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিরোধী দল বিএনপি। তাই এবারই প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকের নির্বাচনে নেই নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীক।

সকাল থেকেই ফাঁকা ছিল অনেক ভোটকেন্দ্র

ফাঁকা ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের অপেক্ষা

সকাল আটটা থেকে শুরু হয় ষষ্ঠ দফার উপজেলা নির্বাচন। এই দফায় ১৫২টি উপজেলার তফসিল ঘোষণা করা হলেও স্থগিত ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী জেতায় বুধবার সারাদেশে ভোট হয়েছে ১৩৯ উপজেলায়।

সকাল থেকেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই ভোটের খবর সরাসরি সম্প্রচার করতে দেখা যায়। এতে অনেক ভোটকেন্দ্রেই ভোটারদের কম উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

দুপুরে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সরাসরি সম্প্রচারে বগুড়ার গাবতলী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের চিত্র দেখা যায়। কেন্দ্রটি ছিল প্রায় ফাঁকা, বিভিন্ন কক্ষে অলস সময় পার করতে দেখা গেছে কর্মকর্তাদের।

ঐ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা জানান, মোট ৩ হাজার ৮৮৭টি ভোটের মধ্যে দুপুর দুইটা পর্যন্ত ভোট পড়ে ৭১৪। শতকরা হিসেবে যা ১৮.৩৬ শতাংশ। তবে দুপুরের পর খুব বেশি ভোটার বাড়ে না বলে ধারণা দেন তিনি।

বগুড়ার সারিয়াকান্দির রিটার্নিং কর্মকর্তার পাঠানো প্রতিবেদনে দেখা যায় বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত সোনাতলা উপজেলায় ১৬ শতাংশ, গাবতলী উপজেলায় ২৩ শতাংশ এবং সারিয়াকান্দি উপজেলায় ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।

ময়মনসিংহেও ভোটার উপস্থিতি ছিল অনেক কম। দুপুর দেড়টায় রিটার্নিং কর্মকর্তার পাঠানো বার্তা শিটে দেখা যায় দুপুর দেড়টা পর্যন্ত হালুয়াঘাট উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ১৪ শতাংশ, ফুলপুর উপজেলায় ১৮ শতাংশ ও ধোবাউড়া উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ২০ শতাংশ।

দুপুর পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় ১৪ শতাংশ এবং জীবননগরে ভোটার উপস্থিতি ছিল ১৭ শতাংশ।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, “বাংলাদেশের ভোটের চিত্রই এমন। সকালে অনেকে মাঠে কাজ করে দুপুরের পর অনেকে ভোট দিতে আসে। সেক্ষেত্রে ভোটের হার বাড়বে আরো”।

কেন্দ্রে ভোটারের অপেক্ষায় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা

সংঘর্ষ সহিংসতা, বন্ধ দুটি কেন্দ্র

ভোটকেন্দ্র দখল নিয়ে সকাল থেকে সহিংসতার খবর পাওয়া যায় নরসিংদী, খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি, মাদারীপুরসহ কয়েকটি উপজেলায়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।

প্রার্থীর পক্ষে জোর করে ব্যালটে সিল মারার অভিযোগে খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় একটি কেন্দ্রের ভোট সকালেই স্থগিত করা হয়।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, ওই কেন্দ্রে একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে জোর করে ব্যালট পেপারে সিল দেওয়ার অভিযোগের কারণে স্থগিত করা হয় ভোট।

সকালেই সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায় নরসিংদী সদর উপজেলায়। উপজেলার কাকশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে এই হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে র‍্যাব, পুলিশ এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই হামলায় আহত হয় অন্তত ১০ জন।

নরসিংদী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রবিউল আলম বিবিসি বাংলাকে বলেন, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে দুই পক্ষের প্রার্থীর মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে কয়েকজন আহত হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় দুই প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

ইসি সচিব বলেন, কয়েকটি জায়গায় কেন্দ্রের বাইরে বিছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। তবে তাতে উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমাদের কাছে তথ্য আসে ভোটকেন্দ্রের ভেতরের, সেই তথ্য আমরা দিতে পারি। এর বাইরে ভোটকেন্দ্রের বাইরের তথ্য আমাদের কাছে আসে না। তাই সেই কেন্দ্রের তথ্য আমরা দিতে পারি না।

অনিয়মের অভিযোগে সোনারায় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং অফিসারকে প্রত্যাহার করা হয়

আটক ৪ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা

বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় অনিয়মের দায় একজন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও দুই সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

স্থানীয় সাংবাদিক জোজেইফ হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, রামেশ্বরপুর ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা শাহজাহান আলী ৯শ’ ব্যালট পেপার স্বাক্ষর ও সিলসহ এজেন্ট এরশাদ আলীর মাধ্যমে কেন্দ্রের বাহিরে পাঠান। এ কারণে তাদের দুজনকে আটক করা হয়।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাঝপাড়া কুসুম কলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তাদের আটক করা হয়। পরবর্তীতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর এজেন্ট এরশাদ আলীকে আটক করে ৬শ’ ব্যালট উদ্ধার করে পুলিশ।

একই উপজেলার সোনারায় উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট কারচুপির ও জাল ভোটের প্রমাণ পাওয়ায় প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এটিএম আমিনুর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর আগে, ঐ কেন্দ্রের ২জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে প্রত্যাহার করেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।

ভোটের আগের রাতে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এক প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা ও টাকা বিতরণের অভিযোগে চব্বিশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার অপু রঞ্জন দাসসহ ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার শাল্লার চব্বিশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্ব পান অপু রঞ্জন দাস। তিনি ওই কেন্দ্রে আসার পর থেকে চব্বিশা গ্রামের ভোটারদের ঘোড়া প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য নানাভাবে প্রচারণা চালান।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও দিরাই-শাল্লা উপজেলা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন গণমাধ্যমে জানান, রাতে টাকা বিতরণের সময় তাদেরকে আটক করে পুলিশ। বর্তমানে তারা পুলিশ হেফাজতে আছেন। আটককৃত প্রিজাইডিং কর্মকর্তার জায়গায় নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।

বিবিসি নিউজ বাংলা

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024