কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ ও স্বল্প ভোটারের উপস্থিতির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশের উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপ। ভোট শেষ হওয়ার আধঘণ্টা আগ পর্যন্ত বিকেল সাড়ে তিনটায় বিভিন্ন উপজেলা থেকে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কয়েকটি উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ২০ শতাংশেরও নিচে।
তবে, বুধবার বিকেলে ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “সারাদেশে প্রথম দফার উপজেলা নির্বাচনে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে ভোটার আরো হলে ভালো হতো। ভোট কাস্টিং কত হচ্ছে সেটি ইসির দেখার বিষয় না।”
এসময় তিনি জানান, প্রথম দফার নির্বাচনে সহিংসতা ও সংর্ষের ঘটনায় ২৫ জন আহত হয়েছে।
সকাল থেকে নির্বাচনের খবর সরাসরি সম্প্রচার করতে দেখা যায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এতে দেখা যায় কেন্দ্রের নির্বাচনি পরিবেশ শান্ত থাকলেও অনেক উপজেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ছিল ফাঁকা।
নির্বাচন কশিমন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছেন, “সকাল থেকে আকাশ মেঘলা। অনেক জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। কিছু চর এলাকায় ঝড়বৃষ্টির কারণে গত রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। এসব কারণে ভোটার উপস্থিতি প্রত্যাশার চেয়ে কম।”
অনিয়মে জড়িয়ে পড়ায় দুটি উপজেলার দুই জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে আটকেরও খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ায় খাগড়াছড়ির একটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করে ইসি।
ভোটকেন্দ্র দখল নিয়ে এই নির্বাচনে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে নরসিংদী, খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়াসহ আরো কয়েকটি উপজেলায়।
নরসিংদী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সকালে নরসিংদী সদর উপজেলার কাকশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এবারের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকলেও নিজ দলের প্রার্থীদের প্রতীক দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর আগে থেকেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিরোধী দল বিএনপি। তাই এবারই প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকের নির্বাচনে নেই নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীক।
সকাল আটটা থেকে শুরু হয় ষষ্ঠ দফার উপজেলা নির্বাচন। এই দফায় ১৫২টি উপজেলার তফসিল ঘোষণা করা হলেও স্থগিত ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী জেতায় বুধবার সারাদেশে ভোট হয়েছে ১৩৯ উপজেলায়।
সকাল থেকেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই ভোটের খবর সরাসরি সম্প্রচার করতে দেখা যায়। এতে অনেক ভোটকেন্দ্রেই ভোটারদের কম উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
দুপুরে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সরাসরি সম্প্রচারে বগুড়ার গাবতলী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের চিত্র দেখা যায়। কেন্দ্রটি ছিল প্রায় ফাঁকা, বিভিন্ন কক্ষে অলস সময় পার করতে দেখা গেছে কর্মকর্তাদের।
ঐ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা জানান, মোট ৩ হাজার ৮৮৭টি ভোটের মধ্যে দুপুর দুইটা পর্যন্ত ভোট পড়ে ৭১৪। শতকরা হিসেবে যা ১৮.৩৬ শতাংশ। তবে দুপুরের পর খুব বেশি ভোটার বাড়ে না বলে ধারণা দেন তিনি।
বগুড়ার সারিয়াকান্দির রিটার্নিং কর্মকর্তার পাঠানো প্রতিবেদনে দেখা যায় বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত সোনাতলা উপজেলায় ১৬ শতাংশ, গাবতলী উপজেলায় ২৩ শতাংশ এবং সারিয়াকান্দি উপজেলায় ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।
ময়মনসিংহেও ভোটার উপস্থিতি ছিল অনেক কম। দুপুর দেড়টায় রিটার্নিং কর্মকর্তার পাঠানো বার্তা শিটে দেখা যায় দুপুর দেড়টা পর্যন্ত হালুয়াঘাট উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ১৪ শতাংশ, ফুলপুর উপজেলায় ১৮ শতাংশ ও ধোবাউড়া উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ২০ শতাংশ।
দুপুর পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় ১৪ শতাংশ এবং জীবননগরে ভোটার উপস্থিতি ছিল ১৭ শতাংশ।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, “বাংলাদেশের ভোটের চিত্রই এমন। সকালে অনেকে মাঠে কাজ করে দুপুরের পর অনেকে ভোট দিতে আসে। সেক্ষেত্রে ভোটের হার বাড়বে আরো”।
Leave a Reply