সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন

কোভিডের টিকা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪, ১২.৪৮ পিএম
অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছে তারা বাণিজ্যিক কারণে কোভিডের ভ্যাকসিন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জেমস গ্যালাহার

বিশ্বজুড়ে তিনশ কোটির বেশি ডোজ দেওয়ার পরে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড ভ্যাকসিন প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে যে এই টিকার জন্য তারা “দারুণভাবে গর্বিত”, কিন্তু বাণিজ্যিক কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তারা বলছে, করোনভাইরাসের নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট বেড়ে যাওয়ার অর্থ এটিই যে চাহিদা এখন আরো আধুনিক ভ্যাকসিনগুলোর দিকে স্থানান্তরিত হয়েছে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা মহামারির সময় লক্ষ লক্ষ জীবন বাঁচিয়েছে বলে ধারণা করা হয়, তবে এটি বিরল, এবং কোনো ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী, রক্ত ​​জমাট বাঁধার কারণও হয়েছিল।

বিশ্বকে মহামারি লকডাউন থেকে বের করে আনার লড়াইয়ে রেকর্ড সময়ের মধ্যে কোভিড ভ্যাকসিন তৈরি করেছিলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। দশ বছর সময় লাগতে পারে এমন একটি প্রক্রিয়াকে ১০ মাসে নামিয়ে এনেছিলেন তারা।

২০২০ সালের নভেম্বরে, একে “বিশ্বের জন্য ভ্যাকসিন” হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল কারণ এটি ছিল অন্যান্য কোভিড ভ্যাকসিনের তুলনায় অনেক সস্তা এবং সংরক্ষণ করাও সহজ।

ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট অ্যাস্ট্রাজেনেকা ব্যাপক পরিমাণে এই ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে সম্মত হয়েছিল।

প্রাথমিকভাবে, লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসতে যুক্তরাজ্যের পরিকল্পনার মূলে ছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকা দেয়া কার্যক্রম।

ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যাডাম ফিন বলেন, “সত্য হলো এটি একটি বিশাল পার্থক্য তৈরি করেছিল। ফাইজারের ভ্যাকসিনের সাথে সম্মিলিতভাবে সেই সময়ের বিপর্যয় থেকে এটিই আমাদেরকে বের করে এনেছিল”।

যদিও, ভ্যাকসিনটির বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে অস্বাভাবিক রক্ত জমাট বাঁধার মতো ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে এর সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যুক্তরাজ্যও তখন অন্যান্য বিকল্পগুলোর দিকে নজর দেয়।

বিশ্বের অনেক দেশেই ব্যবহৃত প্রথম কোভিড ভ্যাকসিন ছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি।

এক বিবৃতিতে, অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, স্বতন্ত্র হিসেব অনুসারে, শুধুমাত্র ব্যবহারের প্রথম বছরেই ৬৫ লাখেরও বেশি জীবন বাঁচিয়েছে তাদের ভ্যাকসিন।

“আমাদের প্রচেষ্টা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সরকারের স্বীকৃতি পেয়েছে এবং বৈশ্বিক মহামারি থামানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসাবে ব্যাপকভাবে বিবেচিত হয়েছে।”

অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, নতুন উদ্ভাবিত যেসব ভ্যাকসিন কোভিডের পরিবর্তিত রূপগুলোর উপর আরো ভালোভাবে কাজ করছে সেগুলোই এখন বিস্তৃতি লাভ করেছে। এর অর্থ হলো “আধুনিক এসব ভ্যাকসিনের উদ্বৃত্ত” রয়েছে, যার ফলে তাদের ভ্যাকসিনের “চাহিদা হ্রাস” পেয়েছে এবং তারা আর ভ্যাকসিন “তৈরি কিংবা সরবরাহ করছে না”।

অধ্যাপক ফিন যোগ করেছেন: “আমি মনে করি ভ্যাকসিন প্রত্যাহার করার অর্থ এই যে এটি আর কাজে আসছে না।

“এটি প্রমাণিত হয়েছে যে এই ভাইরাসটি ভীষণ সক্রিয় এবং প্রথমদিকের ভ্যাকসিনগুলোর সাথে সাথে বিবর্তিত হয়েছে, তাই সেগুলো এখন আর কাজে আসছে না। শুধুমাত্র নতুন ফর্মুলায় তৈরিকৃত ভ্যাকসিনগুলি এখন কাজ করছে”।

সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া ২০২১ সালে কোভিড ভ্যাকসিনের কমপক্ষে এক বিলিয়ন ডোজ তৈরির জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকার সাথে চুক্তি করে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার বিরুদ্ধে মামলা

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। কোনো কোনো অভিযোগকারী স্বজন হারানোর কথা বলছে, আবার কেউ অভিযোগ করছেন গুরুতর অসুস্থতার।

গত বছর প্রথমবারের মতো এই দাবি তোলেন দুই দুই সন্তানের বাবা জেমি স্কট। তার দাবি ২০২১ সালের এপ্রিলে ভ্যাকসিনটি নেয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধার ফলে তার মস্তিষ্কে যে ক্ষতি হয়েছে তার ফলে তিনি আর কাজ করতে পারছেন না।

যুক্তরাজ্যের ভোক্তা সুরক্ষা আইনের অধীনে করা এই মামলায় ভ্যাকসিনটি ‘ত্রুটিপূর্ণ’ ছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে ভ্যাকসিনটি প্রত্যাশিত পরিমাণে নিরাপদ ছিল না।

এর জবাবে আদালতের কাছে জমা দেয়া নথিতে প্রথমবারের মতো অ্যাস্ট্রাজেনেকা স্বীকার করেছে যে তাদের কোভিড ভ্যাকসিন খুবই বিরল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

আইনি নথিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, খুব বিরল ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনটি টিটিএসের কারণ হতে পারে।

তবে প্রতিষ্ঠানটি এটিও দাবি করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের (বা অন্য যেকোনো ভ্যাকসিন) অনুপস্থিতিতেও টিটিএস ঘটতে পারে। কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে এর কারণ জানতে বিশেষজ্ঞ-প্রমাণ লাগবে।

হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স করেসপন্ডেন্ট

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024