শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫২ অপরাহ্ন

পুতিনের নেতৃত্বে এক নয়া সামরিকায়িত রাশিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চ্যালেঞ্জ

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪, ২.৩১ পিএম

 যখন রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন জয়ের এক রক্তক্ষয়ী অভিযান অব্যাহত রেখেছেন, তখন তিনি স্বদেশেও ঠিক সম-গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধনের নির্দেশ দিয়েছেন। সেটি হল তাঁর দেশকে এক পশ্চাদ্গামী, সামরিকায়িত সমাজে পুনরায় পরিণত করা—যে সমাজ পাশ্চাত্যকে তার ঘাতক-শত্রু হিসাবে দেখবে।

মঙ্গলবার পুতিন পঞ্চম বারের মত প্রেসিডেন্ট পদের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এটি কেবল দীর্ঘ ২৫ বছর কাল তাঁর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে থাকার নিশানাই হবে না, উপরন্তু রাশিয়ার ক্রেমলিনপন্থী ভাষ্যকারদের ভাষায় “এক বিপ্লবী শক্তিতে” পরিবর্তিত হওয়াই স্পষ্ট করে তুলবে। তাঁদের মতে, এ শক্তি বিশ্ব  ব্যবস্থাকে পাল্টে দিতে, এর নিজস্ব নিয়মকানুন তৈয়ারি করতে এবং বড় বড় শক্তির দ্বারা প্রভাবাধীন এলাকাগুলোতে পুনর্বিভক্ত এক বিশ্বে সর্বাত্মকবাদী স্বৈরতন্ত্রকে গণতন্ত্রের এক বৈধ বিকল্প হিসাবে সম্মানিত করা হোক বলে দাবী জানাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

“রাশিয়া, রিমার্স্টাড”-এ ওয়াশিংটন পোষ্ট পুতিন যে ঐতিহাসিক মাত্রায় পরিবর্তন আনছেন তার দলিলপত্র তুলে ধরেছেন। তিনি দু’ বছর ধরে পাশবিক যুদ্ধ চলার সময় শ্বাসরুদ্ধকর গতিতে সেসব পরিবর্তন সাধন করছেন, যখন হাজার হাজার রাশিয়ান বিদেশে পালিয়ে গেছেন। এটি এক ক্রুসেড যা পুতিন, চায়নার শি জিনপিং এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোন কোন সমর্থককে অভিন্ন স্বার্থের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। আর এটি পশ্চিমা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে এক স্থায়ী সভ্যতাগত সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। আর এটি এমনকি এক নতুন বিশ্ব যুদ্ধেরও হুমকি সৃষ্টি করছে। পুতিনও তো এমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

এ রূপান্তরণ সাধন করতে ক্রেমলিন: 

–উদারনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ এক অতিরক্ষণশীল, গোঁড়া সমাজ গঠন করছে। –এক নতুন প্রজন্মের উগ্র-দেশপ্রেমিক তরুণদের কোন মতাদর্শে দীক্ষা দিতে সব পর্যায়ের শিক্ষা-ব্যবস্থা  ঢেলে সাজানো হচ্ছে–ক্রেমলিনের প্রচারণার প্রতিফলন ঘটাতে পাঠ্য-বই নতুন করে লেখা হচ্ছে, রাষ্ট্র দেশপ্রেমমূলক কারিকুলাম নির্দেশ করছে, এবং সেপ্টেম্বর থেকে সৈন্যরা “মাতৃভূমির নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার মূলনীতি” শীর্ষক বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা দেবে। এতে কালাশনিকভ অ্যাসল্ট রাইফেল, গ্রেনেড ও ড্রোন পরিচালনার প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।–শিশু জন্মদানের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে জোর প্রচারণা চালিয়ে এবং গর্ভপাতের সুবিধা সংকুচিত করে, এবং নারী অধিকারকর্মী ও উদারপন্থী নারী সাংবাদিকদের সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা অবলম্বনের দায়ে এবং সেনাবাহিনীর নামে দুর্নাম রটানোর দায়ে অভিযুক্ত করে নারী অধিকার গুটিয়ে ফেলা হয়েছে।

কিইভ, ইউক্রেন – ২৫ ফেব্রুয়ারি: ইউক্রেনের কিয়েভে ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২-এ ভোরবেলা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আঘাতপ্রাপ্ত একটি ক্ষতিগ্রস্ত আবাসিক ব্লকের সামনে একজন ইউক্রেনীয় পুলিশ অফিসার দাঁড়িয়ে আছেন।

 

যে সোভিয়েত একনায়ক জোসেফ স্তালিন লাখ লাখ লোককে বন্দীশিবিরে পাঠিয়েছিলেন, তাঁকে সম্মানিত করতে ইতিহাস নতুন করে লেখা হয়েছে। নেতা হিসাবে পুতিনের সময়ে রাশিয়ায় নির্মিত ১১০টি স্মৃতিস্তম্ভের মধ্যে অন্তত ৯৫টিই স্তালিনের নামে। এর মধ্যে মেমোরিয়াল নামে এক মানবাধিকার গোষ্ঠীর দপ্তর বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এর শান্তিবাদী কো-চেয়ারম্যান ওলেগ ওরলভকে (৭১)কারারুদ্ধ করা হয়। গোষ্ঠীটি স্তালিনের অপরাধ উদ্ঘাটন করে এবং ১৯২২ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের অংশীদার হয়।

— বিজ্ঞানীদের রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে; যুদ্ধ বা পুতিনের সমালোচনাকে সন্ত্রাসবাদ বা চরমপন্থা বলে গণ্য করা হয়েছে; রাশিয়ার লৌহ-শাসকের নির্দেশে অস্ত্র হাতে নিতে, আন্তর্জাতিক সীমারেখা নতুন করে আঁকতে এবং বিশ্বের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করতে প্রস্তুত “ যোদ্ধা ও শ্রমিকদের” এমন এক নতুন সামরিকায়িত এলিট গড়ে তোলা হয়েছে।

কিয়েভের শহরতলিতে রুশ হামলায় বিধ্বস্ত ভাইজার সামরিক কারখানা ভবন

পুতিন যা ইউক্রেনের উপর এক স্বল্পস্থায়ী, প্রচন্ড আঘাত হবে বলে বিশ্বাস করেছিলেন, তার নির্দেশ দেওয়ার ঠিক আগে তিনি রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে অপরিহার্য বলে অভিহিত এক ডিক্রি জারি করেন। এতে “রাশিয়ার ঐতিহ্যগত আধ্যাত্মিক ও নৈতিক মূল্যবোধ” রক্ষা করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এক প্রত্যক্ষ হুমকি হিসাবে অভিহিত করা হয়।

রাশিয়ার হামলায় ৩১ হাজার ইউক্রেনীয় সেনা নিহত

নির্দেশে বলা হয়,“চরমপন্থী ও সন্ত্রাসী সঙগঠনগুলো, কোন কোন নিউজ মিডিয়া ও কমিউনিকেশন প্ল্যাটফর্ম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য অবন্ধু দেশই ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করছে। এতে বলা হয়, “অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল ঐতিহ্যগত সার্বজনীন আধ্যাত্মিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অভিভাবক ও রক্ষক হিসাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে রাশিয়াকে দাঁড় করানো।”

রাশিয়ার জনসংখ্যা হ্রাসে দীর্ঘদিন ধরে উদ্বিগ্ন পুতিন রুশ নারীদের আট বা ততোধিক শিশুর জন্মদানের আহ্বান জানান।

–ওয়াশিংটন পোস্ট

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024