স্বদেশ রায়
ড. জাফরউল্লাহ’র উদ্যোগে যখন বাংলাদেশে এরশাদ আমলে ওষুধনীতি প্রনয়ন করা হয় সে সময়ে আমাদের সাংবাদিকতার অনেকটা নীতি ছিলো এমনই, যেহেতু এরশাদ সামরিক শাসক অতত্রব তার সবকিছু বিরোধীতা করো। এ ক্ষেত্রে বাদ সাধলো ড. জাফরউল্লাহ’র সঙ্গে দেখা হওয়া। তিনি ওষুধনীতি’র প্রয়োজনীতা খুব সহজ ভাষায় আলোচনা করলেন। তার আলোচনা এবং ওষুধনীতি ভালো করে পড়ে নিজের ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে বুঝেছিলাম, এ পথে বাংলাদেশ এগুলে এদেশের ওষুধ শিল্প গড়ে উঠবে।
এ ক্ষেত্রে আরো একজনের নাম না উল্লেখ করলে অন্যায় হবে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা মোহাইমেন ভাই। তাঁর পাইওনিয়ার প্রেসে কোন কিছু ছাপতে গেলেই অনেক বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ নিতাম। তিনিও সে সুযোগ দিতেন। এই মানুষটিও ছিলেন, দেশকে শিল্পায়নের পথে নিয়ে যাবার পক্ষে। এবং তিনি সেইসব শিল্প পছন্দ করতেন, যেখানে খুব বেশি জমি নষ্ট হবে না, আবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনেক শ্রমিক কাজ করতে পারবে। আর একটা পর্যায়ে সে শিল্প যেন রফতানিমুখী হয়। তিনিও ওষুধনীতির পক্ষে লেখার জন্যে বলেন।
সে সময়ে ঢাকার একটি বি ক্যাটাগরির দৈনিকের সহকারী সম্পাদক ছিলাম। সেই দৈনিকেই ওষুধনীতির পক্ষে একটা কলাম লিখি। যেহেতু দৈনিকটির সঙ্গে পরোক্ষভাবে এরশাদ সরকারের এক মন্ত্রীর যোগ ছিলো তাই অনেকে মনে করেছিলেন, চাকুরির কারণে লিখতে হয়েছে। তবে এই লেখার পরে দুজন মানুষের ধন্যবাদ পেয়ে খুবই খুশি হয়েছিলাম। একজন পি জি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নিউক্লিয়ার মেডিসিনের প্রতিষ্ঠাতা ড. কামালউদ্দিন স্যার, অন্য জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞানের মোস্তাফিজুর স্যার। কারণ এর বেশ আগে থেকেই এ দুজনের স্নেহ ও ভালোবাসার কারণে, আয়োডিনযুক্ত লবনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে অনেক লেখালেখি করার সুযোগ পাই। দুজনেই বললেন, বিপরীত স্রোতে দাড়িয়ে ওষুধনীতির পক্ষে লেখা একটা ভালো কাজ হয়েছে।
একজন ক্ষুদ্র সাংবাদিক হিসেবে এখন যখন দেখি, যে সময়ে ওষুধনীতি হয়েছিলো ওই সময়ে এ দেশে ৮০ ভাগ ওষুধ আমদানী হতো আর এখন দেশের প্রয়োজনের ৯৭ ভাগ ওষুধ তৈরি হয়। এবং ১১৩টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রফতানি হয়- তখন কিছুটা হলেও সাংবাদিক হিসেবে ভালো লাগে। যদিও এই বিশাল কর্মযজ্ঞে আমার কোন অবদান নেই তারপরেও সেদিন যে সত্যটা বুঝতে পেরেছিলাম এটাই ভালো লাগার মূল কারণ।
বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প এখন দাঁড়িয়ে গেছে। তার জন্যে সামনে আছে শুধু এগিয়ে যাওয়া। আর সেই এগিয়ে যাওয়াতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহায়তা দেয়া। তবে শিল্পের ইতিহাসে দেখা যায়, যে কোন দেশেই বহু ধরনের শিল্প থাকে। তবে সব সময়ই কোন একটা শিল্প দাঁড়িয়ে গেলে তার কাছাকাছি শিল্পগুলো সে দেশে দাঁড়াতে থাকে। এবং তখন সরকারের নীতি হতে হয় যাতে ওই শিল্পগুলো দাঁড়াতে পারে। এমনকি কোন বড় ধরনের ব্যবসা যদি শুরু হয় কোন দেশে আর সেই ব্যবসা সহায়ক কোন শিল্প যদি দেশে শুরু হয় তখনও সরকারের নীতি হওয়া উচিত ওই শিল্পকে সহায়তা করা।
যেমন আমাদের এখানে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু হলেই কিন্তু ফিটিংস এর অনেকগুলো ভালো ভালো কোম্পানি যাত্রা শুরু করেছিলো। সরকার যদি ওই সময়ে দেশে বিদেশী হাউজ ফিটিংস আমদানীতে বাধা দিতো, তাহলে ওই শিল্পগুলো এতদিনে অনেক বড় শিল্প হতো এবং আরো তাদের সংখ্যা বাড়তো। এবং বাধা দেবার সুযোগও সরকারের ছিলো, কারণ, দেশীয় শিল্প বিকাশ যেহেতু কর্মসংস্থান বেশি করে তা্ই সেই পরোক্ষ লাভের হিসাব করে সরকার বিদেশী ফিটিংস আমদানীর ওপর শুল্ক বাড়াতে পারতো, তাদের মান পরীক্ষার বিষয়টি রাখতে পারতো। এন্টি ডাম্পিংও যোগ করতে পারেতো। কারণ, এটা তো সত্য এই ঢালাও আমাদানীর সুযোগে শুধু আমাদের ওই শিল্পগুলো বাধাগ্রস্থ হয়নি, পাশাপাশি নিম্মমানের জিনিসও আমদানী হয়েছে। তাছাড়া কর ফাঁকি’র পথে অনেক আমাদানী হয়েছে।
দেশের ওষুধ শিল্পের কাছাকাছি যাকে ড্রাগের মধ্যেই ধরা যায় সে শিল্পের মধ্য অন্যতম হলো কীটনাশক শিল্প। কীটনাশক শিল্পে বাংলাদেশকে স্বয়ং সম্পূর্ণ হওয়া দরকার গুরুত্বপূর্ণ দুটি কারণে। এক, দেশের কৃষি উৎপাদন বাড়ানো। দুই, কীট পতঙ্গ বাহিত রোগ থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত রাখা ও তাদের মৃত্যু ঠেকানো।
বাংলাদেশ এখনও শতভাগ ম্যালেরিয়া মুক্ত হয়নি। ম্যালেরিয়ার বাহক মশা এখনো পাহাড়ি এলাকাগুলোতে মাঝে মাঝে ব্যাপক হারে জম্মে। তারসঙ্গে কালাজ্বরের বাহকও। তাছাড়া দক্ষিন এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে ডেঙ্গি( যা আমার ডেঙ্গু বলি) রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে ১৮’শ শতক থেকে। তার আগেও কোন কোন সময় চিত্রে কিছু কিছু মৃত্যুর কারণ যে জ্বরের লক্ষণ দেখা যায় তাও যে ডেঙ্গি তা স্পষ্ট। অন্যদিকে পরিবেশ ও কীট তত্ত্ববিদদের মতে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার আবহাওয়া ডেঙ্গি মশা জম্মানোর জন্যে উপযোগী। অতত্রব বাংলাদেশকে তার ভৌগলিক কারণে ডেঙ্গি মশার সঙ্গে যুদ্ধ করে, অর্থাৎ তার ব্রিডিং কালে তাকে নির্মূল করেই এগিয়ে যেতে হবে। এবং মানুষের শরীরের সুরক্ষা দিতে হবে।
অন্যদিকে এ বিষয়টিও মাথায় রাখা প্রয়োজন, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ায় যেমন শুধু শহর নয় গ্রামেও ডেঙ্গি ছড়িয়ে গেছে, বাংলাদেশ সবে মাত্র এটা শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে ওই এলাকাগুলোর মতোই বাংলাদেশেও গ্রামে ছড়িয়ে যাবে। আর এর কারণও অতি সহজ। কারণ আগে ডেঙ্গি শুধু শহরে হতো, কারণ শহরে স্বচ্ছ পানি আটকে থাকার স্থান ছিলো প্রতিটি বাড়িতে। এখন ধীরে ধীরে বাংলাদেশের গ্রামগুলো বদলে যাচ্ছে, সেগুলো উপশহর বলুন আর শহরতলী বলুন সেখানে একে একে বাসস্থান ও জীবনযাত্রার যাবতীয় উপকরণ শহরের উপকরণই যোগ হচ্ছে। তাই সেগুলো সিটি কর্পোরেশন না হয়ে ইউনিয়ন থাকলেও সেখানে ডেঙ্গি মশা জম্মানোর সব উপযোগীতা থাকবে। তাই ভবিষ্যতে প্রতিটি ডেঙ্গি মশা ব্রিডিং সিজনের আগে দেশের জন্যে প্রচুর পরিমানে পরিবেশ বান্ধব অথচ ডেঙ্গি মশা মারার কীটনাশকের প্রয়োজন হবে।
এই পরিবশেবান্ধব ও ডেঙ্গি মশা মারা কীটনাশক যদি সরকার দেশে উৎপাদনের ব্যবস্থা না করে তার বদলে আমদানী নির্ভর থাকে তাহলে কখনই দুটো বিষয় নিশ্চিত হওয়া যাবে না।এক, বাস্তবে ওই কীটনাশকে ডেঙ্গি মশা মরবে কিনা? দুই, সেটা পরিবশে বান্ধব হবে কিনা? কারণ, আমাদানী নির্ভর হলে তখন আমদানীকারকের সংখ্যা বেশি থাকে, নানা পথে আমদানী হয়। এর ওপর কখনও সরকার শতভাগ নিয়ন্ত্রন রাখতে পারে না। তাছাড়া বিদেশী কীটনাশক যেমন বাস্তবে মান সম্মত হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থাকে, তেমনি সেটা সময় মতো পৌঁছাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় থাকে।
অনেক সময় এই ডেঙ্গির কারণে ঢাকার মেয়রদের কটু কথা শুনতে হয়। কিন্তু খোঁজ নিলে দেখা যায়, আমদানীকারকরা তাদের ফাঁকি দিয়েছেন। তাই তারা কীটনাশক ছড়ালেও মশা মরছে না। দুই, আমদানীকারকদের কারণে কীট নাশক পৌঁছাতে দেরি হয়ে গেছে।
আর যতই নগরায়ন হবে ততই সুস্থতার জন্যে শুধু মশা নয় নানান ধরনের কীট পতঙ্গ থেকে বাসস্থান, হাসপাতাল, হোটেল, স্কুল, রেল, বাস স্টেশন ও বিমান ও জাহাজ বন্দরকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। সোজা কথায় নিয়মিত পেস্ট কন্ট্রোল করানো এখন জীবন যাপনের আর দশটি কাজের মতোই একটি প্রয়োজনীয় কাজ। এ কারণে ভালো মানের ও কম দামের মধ্যে কীটনাশক এখন দেশের একটি অপরিহার্য বিষয়।
আর সর্বোপরি রয়েছে, কৃষি উৎপাদন। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হলে সার ও কীটনাশক ছাড়া চিন্তা করাই ভুল। বাংলাদেশ মাঝে চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছিলো ঠিকই কিন্তু এখন যদি উৎপাদন না বাড়ানো যায় তাহলে খাদ্য ঘাটতি দিন দিন বাড়বে। কারণ, দেশে প্রতিদিন কৃষি জমি কমছে। মানুষ যে হারে বাড়ছে, এবং আগামী পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে একটা বড় সংখ্যক তরুন তরুণী সংসার শুরু করবে। তাদের জন্যও দরকার হবে নতুন বাসস্থান সব মিলে জমি কমার হার ঠেকানো খুবই কষ্টসাধ্য। এ অবস্থায় কৃষিপন্যউৎপাদন বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই।
বাংলাদেশও উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বসে নেই। এবং কৃষিজাত খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ সব থেকে যে বড় কাজটি করেছে তা হলো, কৃষি পন্যের বৈচিত্র। বাংলাদেশ শুধু ধান, গম বা পাট নিয়ে বসে নেই। বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর প্রায় সব ধরনের ফল, সবজি এমনকি মসলা উৎপাদনেরও চেষ্টা করছে। ফলে ও সবজিতে অনেক এগিয়ে গেছে। কিন্তু এটাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে, প্রত্যেকটা ফল থেকে শুরু করে, ধান, গম, ভুট্টা মিলেট, যব সবকিছুকেই কীট মুক্ত রাখতে হবে। বিশেষ করে ফল ও সবজির একটি বড় অংশ মানুষ কাঁচা খায় বা কম সিদ্ধ করে খায়। তাই স্বাভাবিকই এখানে পরিবেশবান্ধব কীটনাশক ব্যবহার ছাড়া বিকল্প নেই।
নব্বইয়ের দশকে আবুল মাল আব্দুল মুহিত (সাবেক অর্থমন্ত্রী) ওয়াল্ড ব্যাংকের একটি প্রজেক্টে তিনি বাংলাদেশে সবজিতে যে বিদেশী কীটনাশক ব্যবহার হয় তা নিয়ে কাজ করেছিলেন। সে সময় থেকে তিনি নিজেও যেমন আর কাঁচা শসা খেতেন না তেমনি আমরা যারা তার ঘনিষ্ট আমাদেরকেও নিষেধ করেছিলেন। কারণ দেখা গিয়েছিলো, আমাদানী করা যে কীটনাশক শশা উৎপাদনে ব্যবহার হয় তা মূলত ওই শসার শরীরে কোনরূপ পরিবর্তন না হয়ে অবিকল কীটনাশক হিসেবেই থেকে যায়। যারফলে ওই শসা খাওয়ার অর্থই কীটনাশক খাওয়া।
তাই স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও খাদ্য উৎপাদন সব মিলে এ মুহূর্তে ওষুধনীতির মতো বাংলাদেশে একটি কীটনাশক উৎপাদন নীতিমালা তৈরি করা দরকার। এবং যারা মূল উদ্দেশ্য হবে, যেভাবে বাংলাদেশ এখন তার প্রয়োজনের ৯৭ ভাগ ওষুধ তৈরি করে, তেমনি দ্রুতই বাংলাদেশ তার প্রয়োজনের ৯৭ থেকে শতভাগ কীটনাশক তৈরি করবে। এবং ধীরে ধীরে ওষুধের মতো কীটনাশকও বাংলাদেশ রফতানি করতে পারবে অমনি ১১৩ টিরও বেশি দেশে।
এক্ষেত্রে এখন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো দেশের হাউজের-এর ফিটিংস শিল্পগুলো যে কারণে দাঁড়াতে পারেনি, অর্থাৎ ঢালাও আমদানির কারণে। কীট নাশক শিল্প বিকাশের সেই বাধা আছে কিনা, তা আগে খতিয়ে দেখা ও সেগুলো সমাধান করা।
বাংলাদেশের কীটনাশক শিল্প বিকাশের এ মুহূর্তে অন্যতম বাধা ফিটিংস শিল্পের মতো একই। অর্থাৎ এক ধরনের ঢালাও আমাদানী। এবং সে আমাদানীতে মাত্র ৫% শুল্ক দিতে হয়। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত তাদের গত বাজেটে কীটনাশক আমদানীর ক্ষেত্রে শুল্ক ১০% থেকে বাড়িয়ে ১৫% করেছে। এর সঙ্গে অনান্য কর মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে ১৮% শুল্ক দিতে হয় আমদানীকারককে। কিন্তু বাস্তবতা আমদানীকারকের জন্যে আরো কঠিন। সে দেশের একজন বড় মাপের অর্থনীতির রিপোর্টারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, বাস্তবে আমদানী কারককে ২২% এর ওপরে দিতে শুল্ক দিতে হয়। তাছাড়া সেখানে আমদানী কারককে অনেক ঘাট পার হতে হয়।
আমাদের বাংলাদেশে ঠিক এর বিপরীত। আমদানীকারককে মাত্র ৫%শুল্ক দিতে হয়। তাছাড়া তার জন্যে আর কোন বাধা নেই। অন্যদিকে উৎপাদনকারীর জন্যে রয়েছে এক গুচ্ছ বাধা। যেমন তার কাঁচা মালের উৎসের সোর্স নির্দিষ্ট। উম্মুক্ত নয়। যে কোন উৎপাদনকারী তার উৎপাদনের জন্যে প্রথমেই খুঁজবে কম মূল্যে ভালো কাঁচা মাল। যে কারণে শিল্পায়নের একটি বড় দিক হলো, উৎপাদনকারীর জন্যে কাঁচামালের উত্সের সোর্স উমুক্ত করে দেয়া।
তারপরেই আসে, উৎপাদনকারী কত সহজে তার কাঁচা মাল দেশে প্রবেশ করাতে পারবে সেটা। যা করা হয়েছে ওষুধ শিল্পের ক্ষেত্রে তাদের কাঁচা মাল সব সময়ই ফ্যাক্টরিতে টেস্ট হয় কখনই বন্দরে নয়। কারণ, সময় ডেমারেজ উত্পাদন খরচকে অনেক বাড়িয়ে দেয়। এরপরে আমাদের দেশের কীটনাশক উৎপাদনের জন্যে আরেক বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে মাঠ টেস্ট। কেন এটা করা হয়েছে তার কোন যৌক্তিক কারণ স্পষ্ট নেই। সাংবাদিকদের পক্ষে এ নিয়ে ব্যাখা, বিশ্লেষণ সম্ভব নয়। তবে এ কথা বলা যায় যদি ওষুধনীতির মতো একটি দেশীয় শিল্প তৈরি ও রক্ষার জন্যে কীটনাশক শিল্পনীতি তৈরি করা হয় প্রকৃত বিশেষজ্ঞ ও স্টকে হোল্ডারদের নিয়ে তাহলে এ বাধা কেটে যাবে।
অন্যদিকে ভারতের মতো বাংলাদেশেরও উচিত হবে, কীটনাশক আমদানীতে অমনি বড় আকারের শুল্কারোপ করা।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যে অনেক অবকাঠামো গত পনের বছরে তৈরি হয়েছে। এখন প্রয়োজন শিল্পায়ন। শিল্পায়ন ছাড়া যেমন অর্থনীতির মেরুদন্ড সোজা হবে না। অবকাঠামো তৈরির খরচ তোলা সম্ভব হবে না। তেমনি আগামী দিনে যে তরুণ প্রজম্ম কাজের জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে তাদেরকেও কাজ বা চাকুরি দেয়া সম্ভব হবে না। মনে রাখা দরকার দেশের বিশাল জনসংখ্যা কৃষিতে নিয়োজিত আছে মূলত এক ধরনের আধা বেকারত্ব মেনে নিয়ে । প্রকৃত উন্নয়ন দেশে প্রকৃত কাজের সংস্থান ছাড়া হয় না। ভাতা বা কল্যান মূলক সাহায্য দিয়ে শুধুমাত্র মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। কিন্তু অর্থনীতিতে গতি আনতে হলে মানুষকে পূর্ণকালীন কাজ দিতে হবে। আর তা সম্ভব শুধুমাত্র শিল্পায়নের মাধ্যমে। কীটনাশক শিল্প তেমনি একটি শিল্প। এর পাশাপাশি আরো অনান্য শিল্পের দিকেও নজর দেয়া দরকার।
লেখক: জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও সম্পাদক সারাক্ষণ ও The Present world.
চলমান ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নের জৌলুস ফ্যাকাশে হতে পারে যদি আমরা আধা বেকারত্ব ও বেকার কর্মক্ষম মানুষের শিল্পায়নের মাধ্যমে তাদের ফুলটাইম কর্মক্ষম করে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করতে না পারি। সদিচ্ছা থাকলে আমরা যে পারি, তার বাস্তব উদাহরণ ঔষধ নীতি। নিকট ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য
সম্পদক সুচিন্তিত যে মতামত প্রকাশ করেছেন আধুনিক উন্নয়ন ধারণার সাথে তা খুবই প্রাসঙ্গিক। ধন্যবাদ আপনাকে সম্পাদক মহোদয়।