শ্রী নিখিলনাথ রায়
প্রধান কাননগো পরগণা-কাননগোদিগের নিকট হইতে ভূমি- সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র তলব করিয়া রাখিতেন। কাননগো- দপ্তরে ভূমিসংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্রই পরম যত্নে রক্ষিত হইত। পরগণা- কাননগোণ জমির পরিমাণ, নিরিখ, সাধারণ হস্তবুদ, সরকারের প্রাপ্য কর ও অন্তানন্ত্য আবওয়াব এবং মাল, লাখেরাজ জায়গীর, ইত্তমুরারী, মোকররী, উর্ব্বর, অনুর্ব্বর প্রভৃতি ভূমির তালিকা, সীমাসম্বন্ধীয় কাগজ পত্র ও আদায় অনাদায়ের হিসাব প্রস্তুত করিয়া প্রধান কাননগোর / নিকট প্রেরণ করিতেন। প্রধান কাননগো এই সমস্ত সতর্কতার সহিত রক্ষা করিতেন। প্রধান কাননগোর অধীন একজন করিয়া নায়েব *কাননগো নিযুক্ত হইতেন।
সরকার হইতে যে সমস্ত কর নির্ধারিত হইত, তাহাদের রসিদাদি নারেব কাননগোগণের নিকট থাকিত; সমস্ত ভূমির সীমাসম্বন্ধীয় কাগজপত্র রাখিবার ভারও তাঁহাদের হস্তে ন্যস্ত ছিল। এতদ্ব্যতীত প্রত্যেক স্থানের সদর কাছারী হইতে সামান্য ইজার- দারদিগের রাজস্বের হিসাব ও অন্যান্য অনেক হিসাবপত্র তাঁহাদিগকে রাখিতে হইত। প্রধান কাননগো নায়েব কাননগোদিগকে তাঁহাদের কার্য্যের উপযোগী কাগজপত্র প্রদান করিতেন। নায়েব কাননগোকে অনেক বিষয়ে প্রধান কাননগোর সাহায্য করিতে হইত এবং কাননগো- দপ্তরে অনেক প্রধান প্রধান কার্য্যে তিনি লিপ্ত থাকিতেন।
কেহ কেহ বলেন, আকবরের সময় হইতে সম্ভবতঃ নায়েব কাননগো- পদের সৃষ্টি হয়। সুজার সময় রাজমহল বাঙ্গলার রাজধানী ছিল। তাহার পর পুনর্ব্বার ঢাকায় রাজধানী হয়। কথিত আছে যে, ভগবান্ কাননগো-কাৰ্য্য দক্ষতার সহিত সম্পন্ন করায়, তিনি বঙ্গাধিকারী উপাধি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। এই সময়ে বঙ্গাধিকারিগণ মালদহ জেলার শিব- গঞ্জ পুখুরিয়া নামক স্থানে আপনাদের আর একটি বাসবাটী নির্মাণ করেন। তথায় একটি কালীবাটী ও অতিথিশালা স্থাপন করা হয়। তাহার ভগ্নাবশেষ আজিও দৃষ্ট হইয়া থাকে।
ভগবানের পর তাঁহার ভ্রাতা বঙ্গবিনোদ প্রধান কাননগো-পদ প্রাপ্ত: হইয়া, দক্ষতাসহকারে রাজস্ববিভাগের কার্য্য সম্পাদন করিতে থাকেন। তিনি মালদহ জেলায় বিনোদনগর নামে এক গ্রাম পত্তন করিয়াছিলেন। তাঁহার সময়ে ঢাকা বাঙ্গলার রাজধানী ছিল। কথিত আছে, ঢাকায় রায়বাজার তাঁহারই স্থাপিত বলিয়া উক্ত রায়বাজারে তাঁহাদের। গড়খাইবিশিষ্ট বাসভবনের চিহ্ন অত্থাপি দেখিতে পাওয়া যায়। ১৬৭৯ খৃঃ অব্দে সায়েস্তাখাঁর বাঙ্গলারাজ্য শাসন করার সময় বঙ্গবিনোদের মৃত্যু হয়। বঙ্গবিনোদ সায়েস্তা খাঁকে রাজস্বসম্বন্ধে অনেক সাহায্য করিয়াছিলেন।
Leave a Reply