শ্রী নিখিলনাথ রায়
দেওয়ান মুর্শিদকুলী প্রথম কাননগো দর্পনারায়ণকে সেই সমস্ত কাগজ- পত্রে স্বাক্ষর করিতে বলিলে, দর্পনারায়ণ কাননগোর রসুম বাবদে ৩ লক্ষ টাকার দাবী করেন। দেওয়ান দাক্ষিণাত্য হইতে প্রত্যাগত হইয়া তাঁহাকে এক লক্ষ টাকা দিতে স্বীকৃত হন। কিন্তু দর্পনারায়ণ তাহাতে সম্মত হন নাই। দেওয়ান তাহাতে কিছুমাত্র বিচলিত না হইয়া দ্বিতীয় কাননগে। জয়নারায়ণের দ্বারা স্বাক্ষর করাইয়া লন। অবশেষে দাক্ষি-গাত্যে গমন করিয়া সম্রাটের নিকট সমস্ত কাগজপত্র প্রদান করেন। পরে দাক্ষিণাত্য হইতে পুনর্ব্বার মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হন।
আরঙ্গজেবের মৃত্যু হইলে, গৃহবিচ্ছেদে যখন মোগলসাম্রাজ্য ছিন্ন ভিন্ন হওয়ার উপক্রম হইয়াছিল, সেই সময়ে মুর্শিদকুলী খাঁ বাঙ্গলার নবাবী পদ লাভ করিয়া মোগলসম্রাটের ক্ষমতাহীনতা প্রযুক্ত নিজের প্রভুত্ব বিস্তার করিতে থাকেন। ঐতিহাসিকেরা বলেন যে, দর্পনারায়ণ তাঁহার কথা অমান্য করায়, তদবধি দর্পনারায়ণের প্রতি মুর্শিদকুলীর ঘোর বিদ্বেষ জন্মে। এই সমরে খালসা বা রাজস্ববিভাগের পেস্কার ভূপতি রায়ের মৃত্যু হয়। তাঁহার পুত্র গোলাপ রায় অনুপযুক্ত থাকায়, নবাব দর্পনারায়ণকে খালসার পেস্কারী পদ প্রদান করেন। রাজস্ববিষয়ে দর্পনারায়ণের অত্যন্ত অভিজ্ঞতা ছিল।
তিনি বাঙ্গলার আয় ১ কোটি ৩০ লক্ষ হইতে ১ কোটী ৫০ লক্ষ করিয়াছিলেন। এই সমস্ত আয় বৃদ্ধির জন্য তাঁহাকে জমীদারদিগের বৃত্তির ও সরকারী কৰ্ম্মচারিগণের গুপ্ত লাভের প্রতিও কিয়ৎ পরিমাণে হস্তক্ষেপ করিতে হইয়াছিল। তজ্জন্য তিনি সেই সমস্ত লোকদিগের অপ্রিয় হইয়া উঠেন। তাঁহাদের অসন্তোষের কথা অবগত হইয়া কুলী খাঁ তাঁহার এত দিনের সঞ্চিত বিদ্বেষের প্রতিশোধ লইবার জন্য দর্পনারায়ণের হিসাবপত্র পরিদর্শনের ছলে তাঁহাকে বন্দী করিয়া রাখেন এবং তাঁহাকে যাবতীয় সুখভোগ হইতে বঞ্চিত করায়, ক্রমে ক্রমে স্বাস্থ্যভঙ্গ হওয়ায়, দর্পনারায়ণ মৃত্যুমুখে পতিত হন।
যদি ঐতিহাসিকগণের বিবরণে বিশ্বাস স্থাপন করিতে হয়, তাহা হইলে ইহা যে মুর্শিদকুলী খাঁর চরিত্রের একটি ভীষণ কলঙ্ক, তদ্বিধয়ে সন্দেহ নাই। মুর্শিদকুলী খাঁর ন্যায় ন্যায়পর নবাব বে এইরূপ ঘৃণিত কাৰ্য্য করিয়াছেন, ইহা বিশ্বাস করিতে প্রবৃত্তি হয় না। দর্পনারায়ণের পর, নবাব সুজা উদ্দীনের সময় তাঁহার পুত্র শিবনারায়ণ তাঁহার স্থলে কাননগোপদে নিযুক্ত হন, এবং তিনি রুকুনপুর নামক বিস্তৃত জমীদারীও প্রাপ্ত হইয়াছিলেন।
Leave a Reply