শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:৩২ পূর্বাহ্ন

রাজনীতিবিদরা ঠিক করে দিতে চায় আপনি কী খাবেন  

  • Update Time : শনিবার, ১১ মে, ২০২৪, ৮.৩০ এএম

পল ক্রুগম্যান

একটি ল্যাবে মাংস উৎপাদন করা সম্ভব — প্রাণী ছাড়াই প্রাণীর কোষ চাষ করা এবং সেগুলিকে এমন কিছুতে রূপান্তরিত করা যা মানুষ খেতে পারে। তবে, এই প্রক্রিয়াটি জটিল এবং ব্যয়বহুল। আর বর্তমানে, ল্যাব-উদ্ভাবিত মাংস বাণিজ্যিকভাবে সামনে আনা সম্ভব নয়। নয় এবং সম্ভবত আদৌ কখনও পাওয়া যাবে না।

তবুও, যদি এবং যখন ল্যাব-উদ্ভাবিত মাংস, যাকে কখনও কখনও চাষকৃত মাংস বলাও হয়, কম দামে বাজারে আসবে, তখন অনেক লোকেই সেটা কিনবে বলে মনে হচ্ছে। কারণ কেউ কেউ নৈতিক কারণে এই ধরনের মাংস কিনবে, কারণ তারা তাদের ডিনারে প্রাণী হত্যা করাকে পছন্দ করে না। আবার অন্যরা এই বিশ্বাসে কিনবে যে ল্যাবে মাংস উৎপাদনে পশুচারণ জন্য বিশাল জায়গা নষ্ট করার চেয়ে কম পরিবেশের ক্ষতি হয়। এবং এটাও সম্ভব যে ল্যাব-উদ্ভাবিত মাংস শেষ পর্যন্ত প্রাণীর মাংসের চেয়ে সস্তা হবে।

আর যদি কিছু লোক ল্যাব-উদ্ভাবিত মাংস খেতে চায়, তাতে ক্ষতি কী? এটা তো একটা স্বাধীন দেশ, তাই না?

রন ডিসান্টিসের মতো নেতাদের ইচ্ছা হলে হবে না। সম্প্রতি ডিসান্টিস, তার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর ফ্লোরিডার গভর্নর হিসেবে কাজে ফিরে, ফ্লোরিডায় ল্যাব-উদ্ভাবিত মাংস উৎপাদন এবং বিক্রি নিষিদ্ধ করার একটি বিল সাক্ষর করেছেন। অন্যান্য বেশ কয়েকটি রাজ্যেও এরকম আইন নিয়ে আলোচনা চলছে।

এক দিক থেকে, এটা একটা তুচ্ছ ঘটনা মনে হতে পারে — এখনও অস্তিত্বে নেই এমন একটা শিল্পের উপর নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু ফ্লোরিডায় এই নতুন আইন বর্তমান আমেরিকান রক্ষণশীলতাকে ব্যাখ্যা করার জন্য চমৎকার একটি উদাহরণ, যেখানে নেতাদের সুবিধাজনক পুঁজিবাদ, সংস্কৃতিযুদ্ধ, ষড়যন্ত্রবাদ এবং বিজ্ঞানকে অস্বীকার একত্রে মিশে যায়।

প্রথমত, এটা প্রমাণ করে যে ডানপন্থীরা সীমিত সরকারের জন্য দৃঢ় অবস্থান নেয় এমন যে কোনও দাবির বিপরীতে; সরকার এর চেয়ে বেশি হস্তক্ষেপকারী হয় না যেখানে রাজনীতিবিদরা আপনাকে কী খেতে পারেন আর কী পারেন না তা বলে দেন।

এই নিষেধাজ্ঞার পেছনে কে আছে? মনে আছে যখন টেক্সাসের একদল পশুপালক ওপরা উইনফ্রেকে মামলা করেছিল গবাদিপশুর ম্যাড কাউ রোগ সম্পর্কে সতর্কতা সম্পর্কিত একটি টিভি শোয়ের জন্য যার ফলে তাদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল? এটা কল্পনা করা কঠিন যে আজ, মাংস শিল্পের ল্যাব মাংসের বাজার ভাগ হারানোর ভয় একটা ভূমিকা রাখছে না। এবং বাজার ভাগ নিয়ে এরকম উদ্বেগ অযৌক্তিকও নয়। উদাহরণ হিসেবে গাছ থেকে উৎপাদিত দুধের উত্থানকে দেখুন, যা ২০২০ সালে দুধের বাজারের ১৫ শতাংশ দখল করেছিল।

কিন্তু যে রাজনীতিবিদরা বাজার স্বাধীনতার পূজা করার দাবি করেন, তাদের উচিত প্রতিষ্ঠিত স্বার্থের ক্ষতি হতে পারে এমন যে কোনও উদ্ভাবনকে দমন করার চেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ করা, যা এখানে ঘটছে। তারা কেন এর বিরোধিতা করছেন না?

উত্তরের একটা অংশ অবশ্যই হলো, অনেকেই কখনও সত্যিকারের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে নি — শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক মানুষের স্বাধীনতায়। তারপরেও, মাংস খাওয়া, প্রায় সবকিছুর মতোই, সংস্কৃতিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে।

বহু বছর আগে “দ্য সিম্পসন্স”-এর এপিসোডগুলো দেখলে আপনি এটা আসতে দেখেছিলেন, যা আমাদের সময়ের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সামাজিক পর্যবেক্ষণের উৎস। ১৯৯৫ সালে, লিসা সিম্পসন, শাকসজিভুজী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে, “মাংস এবং আপনি: স্বাধীনতার সহযোগী” শিরোনামের একটি ক্লাসরুম ভিডিও দেখতে বাধ্য হন।


নিশ্চিতভাবে, ডানপন্থীদের, বিশেষত MAGA জনতার মধ্যে, অনেক মাংস খাওয়া বা খাওয়ার দাবি করা একটা অনুগত্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র একবার টুইট করেছিলেন, “আমি খুব নিশ্চিত যে গতকাল আমি ৪ পাউন্ড লাল মাংস খেয়েছি,” যা একজন সুমো পালোয়ানের জন্য ছাড়া অসম্ভব।

কিন্তু আপনি যদি এমন কেউ হন যিনি জোর দিয়ে বলেন যে “আসল” আমেরিকানরা অনেক মাংস খায়, তাহলে বিকল্প থাকলে সেই মাংসকে অবশ্যই প্রাণী হত্যা করে সরবরাহ করতে হবে কেন? ল্যাব-উদ্ভাবিত মাংসের বিরোধীরা প্রায়ই চাষকৃত মাংস উৎপাদনের শিল্প-রূপের কথা বলতে পছন্দ করে, কিন্তু আধুনিক বেশিরভাগ মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলো কী ধরনের তা তারা কী কল্পনা করে?

এরপর ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো আছে। এটা একটা সত্য যে গরুর মাংস থেকে প্রোটিন পাওয়ার জন্য অন্যান্য উৎস থেকে পাওয়ার তুলনায় অনেক বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হয়। এটাও সত্য যে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র অবশেষে জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু ডানপন্থীদের উন্মাদনার অন্ধকারে, যারা এখন রাজনৈতিক মন্তব্যকার ও রাজনীতিবিদদের একটা বেশ বড় অংশ, বাইডেনের অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত জলবায়ু নীতির বিরোধিতার ফলে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভট দাবি উঠে এসেছে, যার মধ্যে একটি হল যে বাইডেন আমেরিকানদের বার্গার খাওয়ার উপর সীমাবদ্ধতা আনতে যাচ্ছেন।

আর আপনি কি শুনেছেন যে কীভাবে বিশ্বের ধনী ও ক্ষমতাবান মহল আমাদেরকে কীটপতঙ্গ খেতে বাধ্য করবে?

যাই হোক, আমি একজন নিরামিষাশী নই এবং পোকামাকড় খাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই। কিন্তু আমি অন্য মানুষের পছন্দকে সম্মান করি — যা ডানপন্থী রাজনীতিবিদরা ক্রমশ করছেন না।

এবং প্রমাণ করার পাশাপাশি যে অনেক ডানপন্থীরা আসলে স্বাধীনতার শত্রু, রক্ষক নয়, ল্যাব-মাংসের কাহিনীটি আমেরিকান রক্ষণশীলতার একটি নীতিনির্ভর আন্দোলন হিসেবে পতনের আরেকটি সূচক।

দেখুন, আমি রোনাল্ড রেগানের ভক্ত নই, যিনি আমার মতে রাষ্ট্রপতি হিসেবে অনেক ক্ষতি করেছেন, কিন্তু অন্তত রিগানবাদ ট্যাক্স রেট ও নিয়ন্ত্রণের মতো প্রকৃত নীতির বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে ছিল। যদিও, যারা নিজেদেরকে রেগানের উত্তরসূরি হিসেবে উপস্থাপন করে তারা গুরুত্বপূর্ণ নীতি প্রণয়নে আগ্রহী মনে হয় না। তাদের অনেকের জন্য, রাজনীতি একধরনের লাইভ-অ্যাকশন রোল প্লে। এটা এমনকি তাদেরকে “ধরে রাখা” নয় যাদের তারা এলিট বলে অভিহিত করে; এটা কল্পনার এলিটরা কী চায় তার সাথে অবিরত যুদ্ধ করা।


কিন্তু তারা বাস্তবতা নিয়ে চিন্তিত না হলেও, বাস্তবতা তাদের নিয়ে চিন্তিত। তাদের গভীর অগুরুত্ব আমেরিকা ও বিশ্বের অনেক ক্ষতি করতে পারে – এবং ইতিমধ্যেই করছে।

 

 

লেখক: অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী। তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমসে নিয়মিত কলাম লেখেন।

( তার বক্তব্য ও ভাষার সঙ্গে মিল রেখে অনুদিত)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024