সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩০ পূর্বাহ্ন

রাফা অভিযান চালাতে ইসরাইলের কি আরও মার্কিন অস্ত্র প্রয়োজন?

  • Update Time : শনিবার, ১১ মে, ২০২৪, ৯.৪৩ এএম

সারাক্ষণ ডেস্ক

গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলকে দেওয়া মার্কিন সামরিক সাহায্যের পরিমাণ থেকে একটা জিনিস বোঝা যায়: মর্কিন বোমা, শেল ও অন্যান্য গোলাবারুদের অব্যাহত সরবরাহ ছাড়া গাজার উপর প্রচুর আক্রমণ চালানো সম্ভব হত না। এদের কোন কোনটির সরবরাহ বন্ধ করে দিতে সাত মাসের লড়াইয়ের পর এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হুমকি দিচ্ছেন। অস্ত্র সরবরাহের সঠিক তথ্য জানা কঠিন। এর অন্যতম কারণ যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র চালানের পরিমাণ প্রকাশযোগ্য সীমার নীচে রাখতেই সতর্ক থাকে। তাছাড়া, কংগ্রেসের পুরানো অনুমোদনের উপর নির্ভর করে নতুন অনুমোদন ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠাতে পারে। কিন্তু এমনকি সীমিত মাত্রায় প্রকাশিত তথ্য থেকেও এসব অস্ত্রের গুরুত্ব বোঝা যায়। কর্মকর্তারা মার্চে ঘরোয়াভাবে কংগ্রেসকে জানান যে, ৭ অক্টোবরের পর ১০০ বারেরও বেশি ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি করা হয়েছে। আর এক মার্কিন গবেষণা-সংস্থা জানায়, এত বেশি পরিমাণ অস্ত্র চালানের অপেক্ষায় ছিল যে, সেগুলো পাঠানোর মত বিমান পেতে পেন্টাগনকে কখনো কখনো হিমশিম খেতে হয়েছিল। বারাক ওবামা মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ২০১৬ সালে ১০ বছর মেয়াদী এক স্থায়ী চুক্তি সই হয়। এতে ২০১৮ সাল থেকে বছরে ৩৩০ কোটি ডলারের অস্ত্র এবং বছরে আরও ৫০ কোটি ডলারের বিমান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহের সংস্থান ছিল। তদুপরি কংগ্রেস গত মাসে আরও ১,৩০০ কোটি ডলারের সামরিক সাহায্যদান অনুমোদন করে। এর মধ্যে ৫২০ কোটি ডলার বর্তমান বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার খাতে ব্যয় হওয়ার কথা। এটি এক নিরাপত্তা সম্পর্ক ১৯৬০-এর দশকে যার শুরু।

যুক্তরাষ্ট্র আজ পর্যন্ত ১২ হাজার ৩শ’ ডলারেরও বেশি দামের সামরিক সহায়তা দিয়েছে। ইসরায়েলের আমদানীকৃত অস্ত্রের শতকরা ৬৯ ভাগই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয় হয় বলে স্টকহোম পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট জানায়। অস্ত্র সরবরাহে বিরতি ঘটে না বললেই চলে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ইসরায়েলের লেবানন আক্রমণে অসন্তুষ্ট হয়ে ১৯৮২ সালে একবার এফ-১৬ বিমান হস্তান্তর আটকে দিয়েছিলেন। বর্তমান সংঘর্ষের সময় পেন্টাগন পাঠানো সাহায্যের খুঁটিনাটি কেবল সময়ে সময়েই প্রকাশ করেছে: নবেম্বরে ৩২ কোটি ডলারের প্রিসিশন বোম কিট, এবং ডিসেম্বরে ১০ কোটি ৬০ লাখ ডলারের ১৪ হাজার ট্যাংক শেল, এবং ১৪ কোটি ডলারের ৫৭ হাজার ১৫৫ মিলিমিটারের আর্টিলারি শেল এবং তাদের ফিউজ ও প্রাইমার. সেই সঙ্গে ৩০ হাজার হাওউইটজার চার্জ। এদিকে, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী জানায়, তারা মধ্য-ফেব্রæয়ারিতে হামাসকে নির্মূল করতে গাজায় ২৯ হাজার বার নির্দিষ্ট লক্ষ্যস্থলে আঘাত আনে।

ব্যাপক মাত্রায় এই বোমবর্ষণের ফলে ৩৪,৭৮০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয় বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়। আশ্চর্যের কথা, যুক্তরাষ্ট্র তখনও ১,৭০০টি ৫০০ পাউন্ডের বোমা, বিশেষত ১,৮০০টি ২ হাজার পাউন্ডের বোমা সরবরাহের কথা ভাবর্ছিল, যা এখন বাইডেন থামিয়ে রেখেছেন। একটি ২ হাজার পাউন্ডের বোমা একটি ছোট এপার্টমেন্ট বøক উড়িয়ে দেওয়া ও ১২ মিটার প্রশস্ত ফাটল সৃষ্টি করার মত যথেষ্ট শক্তিশালী। যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, কোন জনবহুল এলাকায় অনেক লোককে হত্যা করতে সক্ষম এসব ভারী বোমা রাফায় ইসরায়েলের চূড়ান্ত হামলায় ব্যবহৃত হতে যাচ্ছে। বাইডেন বুধবার রাতে সিএনএনকে বলেন, গাজায় জনাকীর্ণ এলাকায় ঐসব বোমার আঘাতে বেসামরিক লোকজন নিহত হয়েছেন। বাস্তব কথা হল, বাইডেন সীমিত শ্রেণীর অস্ত্রশস্ত্রের ইসরায়েলে চালান থামিয়ে দিয়েছেন। এগুলো বাদ দিলে ট্যাংক রাউন্ড ও আর্টিলারি শেলসহ অন্যান্য ধরনের অস্ত্রশস্ত্র দৃশ্যত ইসরায়েলের হাতে রয়েই গেছে।

ইসরায়েলের বিমানবাহিনী বহুলাংশে অক্ষত আছে; ২০০৮ সালে কংগ্রেসের সম্মতিপ্রাপ্ত এক চুক্তির অংশ হিসাবে আরও ২৫টি এফ-৩৫ জঙ্গী বিমান মার্চে বিক্রির জন্য অনুমোদিত হয়। স্বল্প মেয়াদের কথা বলতে গেলে, ইসরায়েল ইচ্ছা করলে রাফা আক্রমণের হুমকি বাস্তবায়নের কাজে এগিয়ে যেতে প্রায় নিশ্চিতভাবেই সক্ষম, যদিও তা সেখানে আশ্রয় নিয়ে থাকতে মরিয়া দশলাখ ফিলিস্তিনির মধ্যে যে এক ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি করবে তা প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু সেটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে ইসরায়েলের সম্পর্কে ফাটল আরও গভীর হওয়ারঝুঁকি রয়েছে ।–গার্ডিয়ান

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024