শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন

ভারত ও চায়নার সাথে নীতির ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা শ্রীলঙ্কার

  • Update Time : শনিবার, ১১ মে, ২০২৪, ৬.৫৪ পিএম
চাইনিজ গবেষণা জাহাজ ইউওয়ান ওয়াং -৫ হামবানটোটায় ভিড়ছে। আগস্ট,২০২২। এই পোর্টটা চা্য়নার অর্থায়নে নির্মিত এবং চায়না পরিচালিত।

সারাক্ষণ ডেস্ক

শ্রীলংকার রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমাসিংহের প্রশাসন তার দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলির জন্য ভারতীয় কোম্পানিগুলিকে বেছে নিচ্ছেন কারন শ্রীলঙ্কা এখন তার দেশে চায়নার শক্তিশালী উপস্থিতিকে কামনা করছেনা।

হামবানটোটা বন্দর

মঙ্গলবার, শ্রীলঙ্কা সরকার বলেছে ,  ভারতের ‘আদানি গ্রিন এনার্জির’ সাথে  তার দেশ ২০-বছরের একটি  বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি অনুমোদন করেছে। আদানি ৪৮৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে $৪৪২ মিলিয়ন বিনিয়োগ করবে।এবং প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে  উত্তরে মান্নার এবং পুনেরিনে দুটি বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উন্নয়ন ঘটবে।

দ্বীপ রাষ্ট্রটির একসময়ের  নিষ্ক্রিয়  মাত্তালা রাজাপাকসে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (MRIA) এর একটি ভারতীয়-রাশিয়ান যৌথ উদ্যোগকে  নিয়ন্ত্রণ প্রদানের কয়েক সপ্তাহ পরে ঘোষণাটি আসে। অবশ্য বিমান বন্দরটি চাইনিজ অর্থায়নে নির্মিত হয়েছিল ।

বিদ্যৎকেন্দ্রগুলিই একমাত্র প্রকল্প নয় যা ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির গ্রুপ শ্রীলঙ্কায় সুরক্ষিত করেছে। ২০২১ সালে ভারত সরকার কর্তৃক ঠিকাদার হিসাবে মনোনীত হওয়ার পরে একটি আদানি কোম্পানীকে কলম্বোতে $৭০০ মিলিয়ন পোর্ট টার্মিনাল প্রকল্পে ভূষিত করা হয়েছিল।

২০২৩ সালে, ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কর্পোরেশন আদানি পোর্টস এবং স্পেশাল ইকোনমিক জোনের নেতৃত্বে কলম্বোতে একটি কন্টেইনার টার্মিনাল প্রকল্পে $৫৫৩ মিলিয়ন বিনিয়োগের ঘোষণা করেছে।

হামবানটোটা বন্দর

শ্রীলঙ্কার গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে ভারতের প্রভাব বাড়ার সাথে সাথে অনেকেই বিশ্বাস করেন যে ভারত সরকার সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে চায়নার প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য পদ্ধতিগতভাবে চেষ্টা করছে।

কলম্বো থেকে ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে হাম্বানটোটাতে অবস্থিত, বিশ্বের সবচেয়ে খালি বিমানবন্দর হিসাবে পরিচিত মাত্তালা রাজাপাকসে ইন্টারন্যাশনাল। এটি $২০৯ মিলিয়ন ব্যয়ে চায়নার এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক দ্বারা অর্থায়ন করা হয়েছিল।

এটি ২০১৩ সালে মাহিন্দা রাজাপাকসে রাষ্ট্রপতি থাকার সময় উদ্ভোধন করা হয়েছিল।কিন্তু  কোনও ফ্লাইট না থাকার কারণে এটি বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল সারাবছর। যার ফলে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ব্যাপক লোকসান গুনতে হয়েছে দেশটির৷

শ্রীলঙ্কার সরকারের মুখপাত্র বন্দুলা গুনাওয়ার্দেনা কলম্বোতে সাংবাদিকদের বলেছেন যে  ভারতের শৌর্য অ্যারোনটিক্স এবং রাশিয়ার এয়ারপোর্টস অফ রিজিয়ন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির যৌথ উদ্যোগ মাত্তালা বিমানবন্দর পরিচালনা করবে কারণ এই মুহুর্তে দেশটি তার সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকট থেকে বের হতে চেষ্টা করছে।

্এরিয়াল ভিউ /হামবানটোটা বন্দর

গুনাওয়ার্দেনা বলেছেন যে এই বছরের শুরুতে সরকার এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশের আহ্বান জানানোর পরে যৌথ উদ্যোগটি বেছে নেওয়া হয়েছিল।বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে বিমানবন্দরের দায়িত্ব হাতে নেয়া একটা গভীর ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবকে সামনে আনছে। বিশেষ করে সম্প্রতি দেশটিতে চায়নার ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং ভারতের ক্রমাগত প্রচেষ্টার মধ্যে সেখানে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য।

বিমানবন্দরটি হাম্বানটোটা বন্দর থেকে ৩০ কিলোমিটারেরও কম দূরে অবস্থিত। এটি চাইনিজ অর্থায়নেই নির্মিত হয়েছিল এবং চায়নাই এটা পরিচালনা করছে।

শ্রীলঙ্কার একজন কূটনৈতিক ইতিহাসবিদ, জর্জ আই.এইচ. কুক বলেছেন: “ভারতের পররাষ্ট্রনীতি ভারতকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। এটি সাধারণভাবে কার্যকরভাবে কাজ করছে, তবে শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে আরও কিছু করা দরকার।”

তিনি আরো বলেন, “বর্তমানে প্রকল্পগুলি ভারতকে চালকের আসনে রাখে না। এই মুহুর্তে শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন বিনিয়োগ অংশীদার যারা প্রযুক্তি স্থানান্তরে অবদান রাখবে এবং এটি ভারতকে বাকিদের থেকেও এগিয়ে রাখবে।”

প্রাক্তন এই কূটনীতিক বলেন, “আমি মনে করি না যে একটি দেশের বিরুদ্ধে অন্য দেশের নেতিবাচক কোন খেলা ভাল। তবে এটি যখন মাত্তালার মতো একটি বিষয় সামনে আনে , যেখানে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে তখন সেটি ব্যবহার করা উচিত। যদি আমরা ভারতীয়দের ও  রাশিয়ানরা আনতে পারি এবং আমাদের সাহায্য করে তাহলে এটি খুবই ভাল হয়।”

তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন যে সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে এটি এইভাবে তার বিনিয়োগ থেকে সর্বোত্তম সুফল পেতে পারে।

কলম্বোতে ভারতীয় হাইকমিশনের একজন মুখপাত্র বলেছেন যে বিমানবন্দরের চুক্তিতে জয়ী যৌথ উদ্যোগ একটি প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিল।

মুখপাত্র নিক্কেই এশিয়াকে বলেছেন, “ভারত সরকার উল্লিখিত প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ছিল না।” কিন্তু  এটি ভারতীয় কোম্পানিগুলিকে শ্রীলঙ্কাকে একটি সম্ভাব্য বিনিয়োগ গন্তব্য হিসাবে দেখতে উত্সাহিত করেছিল৷

কলম্বো-ভিত্তিক সামুদ্রিক বিশেষজ্ঞ এবং শিপার্স একাডেমি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা রোহান মাসাকোরালা বলেছেন যে ভারত, একটি উদীয়মান বৈশ্বিক শক্তি হিসাবে, ভূ-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া উভয়ের সাথেই ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো যখন রাশিয়া চায়নার সাথে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে এসেছে। এটা সকলেরই জানা উচিৎ যে বর্তমান ভূ-রাজনীতি খুবই জটিল এবং একে অপরের সাথে জড়িত।

ভারত মহাসাগর হল এশিয়ার দুই জায়ান্ট চায়না ও ভারতের জন্য ফোকাস করার একটি নতুন ক্ষেত্র, যারা বৈশ্বিক ব্যবসার পাশাপাশি সামরিকভাবে শক্তিশালী।

মাসাকোরালা বলেন, “শ্রীলঙ্কা এবং এর কৌশলগত বন্দরগুলির ভূমিকা শুধুমাত্র বাণিজ্যকে সমর্থন ও সক্ষম করা এবং ভারত মহাসাগরকে শান্তিপূর্ণ কার্যকলাপের জন্য নিশ্চিত করা উচিত।”

“শ্রীলঙ্কার পক্ষ নেওয়ার ক্ষেত্রে কূটনৈতিক কৌশল এড়ানো উচিত কারন তার উচিৎ হবে সবধরনের অংশীদারদের সাথে কাজ করা। সবচেয়ে ভাল সম্ভাব্য ব্যাপারটি হল বৈশ্বিক জায়ান্টদের মধ্যে সেতু তৈরি করা যাতে দ্বন্দ্বের পরিবর্তে বাণিজ্য হয়।”

হর্ষ বর্ধন, দিল্লিতে অবস্থিত একজন অভিজ্ঞ বিমানচালনা বিশেষজ্ঞ এবং স্টারএয়ার কনসাল্টিংয়ের চেয়ারম্যান এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক পটভূমি সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেন যে, শ্রীলঙ্কার কৌশলগত অবস্থান শুধুমাত্র ভারত এবং চায়না নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো দেশগুলির মতো অন্যান্য প্রধান খেলোয়াড়দেরও প্রতিযোগী দৃষ্টি একে টানে।

তিনি চায়নিজ “ঋণ ফাঁদ” এর প্রতি শ্রীলঙ্কার দুর্বলতার দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন এবং এই পরিস্থিতি পরিচালনা করার চ্যালেঞ্জগুলিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছিলেন।

যাইহোক, তিনি যোগ করেছেন যে বিমানবন্দরের উন্নয়ন লক্ষণীয় হলেও, এটি এই অঞ্চলের ব্যাপক ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতায় উল্লেখযোগ্য অবদান নাও রাখতে পারে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024