শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন

আফসানা মিমি কি ভেঙ্গে পড়েছিলো না পড়েনি

  • Update Time : রবিবার, ১২ মে, ২০২৪, ৯.৪০ এএম

চিত্রা নদীতে ডুব দিয়ে  বালিকা থেকে তরুণীতে পা দেয়া আফসানা মিমি ভেসে ওঠেন  আর তখন থেকেই তার  অভিনয় শুরু হয় তানভীর মোকাকাম্মেলের চিত্রা নদীর পাড়ে ছায়াছবিতে।

বাস্তবে ঋত্বিক ঘটক, রাজেন তরফদারদের পরে একমাত্র পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল যাকে প্রতি মুহূর্তে নাড়া নিয়েছে দেশভাগ। বিশেষ করে বাংলাভাগ।

আর এ নিয়ে তিনি তৈরি করেছেন একের পরে এক ছায়াছবি ও ডকুমেন্টারি।

চিত্রা নদীর পারে পরিপূর্ণ দেশভাগ নিয়ে একটা ছায়াছবি। যার শুরু অনেকটা ১৯৪৮ থেকে আর শেষ ১৯৬৪ এর দাঙ্গার পরে।

তার ভেতর আফসানা মিমির অভিনয়ের সময়কালটা বছর পাঁচেকেরও কম। স্কুল থেকে কলেজ ছাত্রী অবধি।

আফসানা মিমিকে দুইবার পর্দায় পাওয়া যায় পরিপূর্ণ ডুব সাঁতারে।

কবি মোহাম্মদ রফিক বলতেন, একটা কিশোরী বা তরুণীকে কখনও অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের মতো স্মান ঘরে নগ্ন দেখে পরিপূর্ণ বোঝা যায় না। কিশোরী বা তরুণী’র পরিপুর্ণ রূপ দেখতে হয় নদী বা পুকুরের ডুব সাতারে।

বাস্তবে বাংলাদেশ থেকে ক্রমেই ডুব সাতার চলে যাচ্ছে। সকলে শাওয়ারের নীচে যাচ্ছে। আর হয়তো এর সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাবে সেই চিরকালের বাঙালি কিশোরী বা তরুণী। যার ভেতর শুধু একজন আগত নারী নতুন সূর্যের মতো প্রকাশিত হবার জন্যে উঁকি দেয়। আর মনে হয় শুধু বাঙালির নয়, সব দেশের আবহওয়া অনুযায়ী তার দেশটি ফুঁটে ওঠে কিশোরী বা তরুণীর রূপের মধ্যে।

আগের গ্রাম বাংলার পরিপূর্ণ রূপটি তাই সত্যিই ছিলো গ্রামের বা গ্রামের মতো ছোট ছোট শহরের কিশোরী বা তরুণীদের ডুব সাঁতারের মধ্যে।  আফসানা মিমি তার দুইবারের ডুব সাতাঁরে শুধু বাঙালি নারী নয়, সেই সময়ের বাংলাদেশের রূপ ফুটিয়ে তুলতে সমর্থ হন।

বাস্তবে তানভীর মোকাম্মেল তার ছায়াছবিতে জলকে বড় চমত্‌কার ভাবে কাজে লাগাতে পারেন। আর সেই সুযোগটি শতভাগ কাজে লাগিয়েছেন আফসানা মিমি। এখানেই তার অভিনয়ের জোর। যে জোরটি তিনি মঞ্চে দেখাতেন রক্ত করবীর নন্দীনিতে।

চিত্রা নদীর পারে ছায়াছবিটি মর্মমূলে রয়েছে দেশভাগের টানাপোড়েনে পূর্ব পাকিস্তানের একটি হিন্দু পরিবার। যে পরিবারের প্রধান চলে যেতে চায় না দেশ ছেড়ে কিন্তু পরিস্থিতি প্রতি মুহূর্তে তাকে তাড়াচ্ছে।

এই পরিবারে লা্উয়ের লতার মতো বেড়ে উঠা মেয়ে আফসানা মিমি। যার বন্ধু দাঙ্গার সুযোগে একদল দুর্বৃত্তের হাতে রেপ হয়ে দুর্গা প্রতিমার মতো নিজেকে নদীতে বিসর্জন দিয়ে প্রতিমার ভাঙ্গা অংশের মতো ভেঙ্গে ভেসে থাকে।

ঠিক সেই সময়ের টানাপোড়েনটা আফসানা মিমি অর্থাত্‌ মিনতির চরিত্রে আসে দুইভাবে। একদিকে তার পরিবার যাবে কি থাকবে এখানে এই নিয়ে টানা পোড়েন । অন্যদিকে তার প্রতিবেশী মুসলিম তরুণকে সে ভালোবাসে।

এই দুই টানা পোড়েনে সে ভেঙ্গে পড়ছে নাকি পড়ছে না-তাকে আফসানা মিমি বেশ এক রহস্যের মধ্যে রেখে দেয় তার অভিনয়ে। যে রহস্য বা পর্দাটাই তার অভিনয়ের এখানে সব থেকে বড় মুন্সিয়ানা।

কোলকাতা থেকে তার প্রিয় মানুষটির চাওয়া দৃষ্টিপাত বইটি কিনে এনে সে তাকে দিতে গিয়ে দেখে- তাদের বাড়িতে তার প্রিয় মানুষের জন্যে মিলাদ হচ্ছে। পুলিশের গুলিতে ছাত্র আন্দোলনে মারা গেছে সে।

এ সময়ে আফসানা মিমির অভিনয় বড় আশ্চর্য করে সকলকে। সে ভেঙ্গে পড়ে কিন্তু ভেঙ্গে যায় না।

আসলে এখানেই মনে হয় তিনি ছায়াছবি ও তার চরিত্রটি পরিপূর্ণ উপলব্দি করেছিলেন। যে পরিস্থিতিতে সে বা তার পরিবার পাড়ি দিচ্ছে সেখানে যে কোন কিছুই ঘটতে পারে। সেখানে ভেঙ্গে পড়ার মতো পরিস্থিতি সামনে আসবে ঠিকই। তবে সে ভেঙ্গে পড়ছে কি পড়েনি তার  ওপর রয়ে যাবে রহস্যর পর্দা। যে পর্দা থাকে সারা পৃথিবীতে সংখ্যালঘুদের শরীরে। তাই সে আফ্রিকান আমেরিকান হোক, আর ভারতের মুসলিম হোক সিরিয়ার ক্রিশ্চিয়ান হোক আর পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দু হোক।

–               কালান্তর

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024