শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:০১ পূর্বাহ্ন

মা দিবসের উদযাপন কবে কীভাবে শুরু হয় এবং রোববার কেন?

  • Update Time : রবিবার, ১২ মে, ২০২৪, ৫.২৪ পিএম
বাংলাদেশেও মে মাসের ২য় রোববার মা দিবস উদযাপন হয়

মা দিবসটা একটি বিশেষ দিন যেদিন সব মায়েদের এবং যারা মায়েদের মত, তাদের সম্মান জানানো হয়।

বিশ্বজুড়ে এটি পালিত হয় এবং কোথাও কোথাও এর পরিচিতি মা-ময় রোববার হিসেবে।

কিন্তু এই মা দিবস বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পালিত হতে দেখা যায়। কীভাবে উদযাপিত হয় এটি? কে প্রথম এর প্রচলন করেন? চলুন জানা যাক মা দিবসের যত কথা।

মা দিবসের ইতিহাস

মধ্যযুগে এক চর্চা চালু হয়েছিল যে, যারা কাজের জন্য যেখানে বড় হয়েছেন সেখান থেকে চলে গিয়েছেন, তারা আবার তাদের বাড়িতে বা মায়ের কাছে এবং ছোটবেলার চার্চে ফেরত আসবেন। সেটা হবে খ্রিস্টান ধর্মের উৎসব লেন্টের চতুর্থ রোববারে।

সেসময় ১০ বছর বয়স হতেই কাজের জন্য বাড়ির বাইরে চলে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক ছিল। তাই এটা ছিল সবাই মিলে পরিবারের সঙ্গে আবারও দেখা করার ও একসাথে সময় কাটানোর একটা সুযোগ ।

এভাবে ব্রিটেনে এটা মায়ের রোববার হয়ে উঠে। কিন্তু যেহেতু লেন্টের তারিখ পরিবর্তিত হয়, তাই এই রোববারও নির্দিষ্ট থাকে না।

১৯০৮ সালের এই ছবিতে মা দিবসে মায়ের জন্য সন্তানদের উপহার নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে

আধুনিক যুগে মা দিবসের উৎপত্তি যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সেখানে প্রতি বছরের মে মাসের ২য় রোববার পালিত হয় এটি।

এই চিন্তাটা প্রথম আসে ফিলাডেলফিয়ার আনা জারভিসের মাথা থেকে। তিনি ১৯০৭ সালে ১২ই মে তার মাকে নিয়ে এক ছোট্ট স্মরণসভার আয়োজন করেন। আনা জারভিসের মা নারীদের একসঙ্গে করে বন্ধুত্ব ও স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতেন। মায়েদের সন্তান মানুষ করাটা যে অনেক পরিশ্রমের কাজ সেটা সবাইকে জানাতে চেয়েছিলেন তিনি।

ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্র্যাফটনে আনা জারভিসের মা, আনা রিভস জারভিস মায়েদের একটা ‘ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেন যার লক্ষ্য ছিল শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে আনা।

কারণ মিজ জারভিস নিজেও তার নয়টি সন্তান হারিয়েছিলেন। তিনি মারা যান ১৯০৫ সালের ৯ই মে। আর তার স্মরণসভার জন্য আনা জারভিস ১২ই মে বেছে নেন কারণ ওটাই ছিল তার মা মারা যাবার কাছাকাছি একটা রোববার। তার মা যে চার্চে যেতেন সেখানে তার মার উদ্দেশ্য একটি ছোট্ট অনুষ্ঠান করেন।

এরপরের পাঁচ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সবকয়টি রাজ্যে মা দিবস পালনের চল শুরু হয়। আর ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এ দিনটাকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন।

এরপর থেকে প্রতি বছরের মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বেশিরভাগ জায়গায় মা দিবস পালন হয়ে আসছে।

মা দিবস একেক দেশে একেক দিনে ভিন্ন ভিন্নভাবে পালিত হয়

মা দিবস একেক দেশে একেক ভাবে ও একেক দিনে উদযাপিত হয়

মা দিবস বিশ্বজুড়ে বছরের বিভিন্ন সময় ও বিভিন্ন ঋতুতে পালিত হতে দেখা যায়।

ইথিওপিয়াতে বর্ষার শেষে ও শরতের শুরুতে তিনদিন ব্যাপি এক উৎসব হয় – অ্যানট্রোস্ট, এটি ঘিরেই এখানে পালিত হয় মা দিবস।

আবহাওয়া পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পরে পরিবারের সব সদস্যরা একসাথে মিলিত হয়, একসাথে সবজি, চিজ আর মাংস মিলে একটা খাবার প্রস্তুত হয়, এরপর সবাই মিলে একসাথে নাচ-গান করে।

জাপানে আগে প্রতি বছরের ৬ই মার্চ মা দিবস পালন করা হত – কারণ এদিনটা সম্রাজ্ঞী কোজুনের জন্মদিন। তবে ১৯৪৯ সাল থেকে মে মাসের ২য় রোববার নিয়ে যাওয়া হয়েছে এটিকে।

এসময় মা দিবসে মূলত সেইসব মায়েদের সান্ত্বনা দেয়া হত যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তাদের সন্তানকে হারিয়েছে এবং প্রথাগতভাবে এইদিন তাদের বিভিন্ন রঙিন ফুল উপহার দেয়া হত।

মেক্সিকোতে, মা দিবসকে বলা হয় দিয়া দে লাস মাদরেস – যা ১০ই মে পালিত হয় এবং দিনটি ঘিরে ব্যাপক আয়োজন হয় সেখানে। এদিনে সবাই তার মা-কে খেতে নিয়ে যায় রেস্টুরেন্টে। সেখানে বিভিন্ন মেক্সিকান ব্যান্ডদল তাদের বিখ্যাত জন্মদিনের গান “লাস মানিতাস” পরিবেশন করে।

এছাড়া বিশ্বজুড়ে এদিন ঘিরে দেশে দেশে নানান বাণিজ্যিক আয়োজনও থাকে।

মা দিবস চালু করে সেটি নিয়েই আক্ষেপ

আনা জারভিসের হাতেই মা দিবসের শুরু

১৯০৭ সালে আনা জারভিস তার মাকে নিয়ে স্মরণসভার করার পরের বছর থেকে আস্তে আস্তে অন্যান্য জায়গাতেও মা দিবস পালিত হতে থাকে। ১৯১০ সালে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়, আর ১৯১৪ সালে তো পুরো আমেরিকাজুড়েই এটি ছুটির দিনে পালিত হয়।

আর এই দিবসটি বিভিন্ন কোম্পানি আর প্রতিষ্ঠানকেও আকৃষ্ট করে।

“আনা কখনোই এটার বাণিজ্যিকরণ চাননি,” বলেন ইতিহাসবিদ ও অধ্যাপক ক্যাথেরিন আন্তোলিনি। “কিন্তু শুরু থেকেই এটার বাণিজ্যিকরণ হতে থাকে, ফুলের ব্যবসা, কার্ড, চকোলেট বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান নানান অফার নিয়ে হাজির হতে থাকে, এ দিনটি জনপ্রিয় করার পেছনে অবশ্য তাদেরও অবদান আছে।”

কিন্তু আনা এই ঘটনা মেনে নিতে পারেন নি।

একবার যখন এ দিন ঘিরে ফুলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, তখন তিনি একটা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এটার নিন্দা জানান: “আপনি এসব ঠকবাজ, ডাকাত, দস্যু, কিডনাপার ও অন্যান্য উইপোকাদের সাথে কি করবেন যারা এরকম একটা সুন্দর, মহান ও সত্যিকারের একটা উদযাপন ও আন্দোলনকে তাদের লোভ দিয়ে ঢেকে দিচ্ছে?”

১৯২০ সালের দিকে তিনি মানুষকে আহবান জানান যাকে কেউ আর ফুল না কেনে।

১৯৫১ সালের মা দিবসের পোস্টার বানাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পেইন্টার নরমান রকওয়েল

ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া কলেজের অধ্যাপক আন্তোলিনি জানান, আনা তার এই আবেগপূর্ণ দিনটি কোন সংস্থার ব্যবহার করা নিয়েও হতাশ ছিলেন। সেটা যদি কোন দাতব্য প্রতিষ্ঠান এই দিনকে কাজে লাগিয়ে তহবিল সংগ্রহ করে সেটা নিয়েও আপত্তি ছিল তার।

“এই দিনটা আসলে মায়েদের নিয়ে উদযাপনের, তাদের করুণা করার জন্য নয়,” ব্যাখ্যা করেন আন্তোলিনি।

কিন্তু এই দিনটা যিনি চালু করেন, সেই আনা ছাড়া বাকি সবাই এই দিনটা থেকে সুবিধা নিতে থাকে। এমনকি ফুলের শিল্প-প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা দিতে চাইলেও তিনি সেটা গ্রহণ করেন নি। বরং নিজের সঞ্চিত সমস্ত অর্থ দিয়ে এই দিনটার বাণিজ্যিকরণের বিরুদ্ধে লড়ে যান তিনি।

তবে সবকিছু বাণিজ্যিক হলেও মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা আসলে প্রকৃতই থেকে যায়।

বিবিসি নিউজ বাংলা

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024