শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:০৮ পূর্বাহ্ন

ক্যাব’র প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত

  • Update Time : সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪, ৩.৫৮ পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের জাতীয় প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ভবনের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

ক্যাব সভাপতি ও সাবেক সচিব গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি জামিল চৌধুরী, সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণা) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন এবং পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান।

প্রধান অতিথি জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিটা পদে পদে যেভাবে অতি মুনাফার প্রবণতা ছড়িয়ে গেছে। আমরা সেই বিষয়ে কাজ করছি। কিন্তু কৃষকের ক্ষেত থেকে শুরু হওয়ার পর প্রতিটি পর্যায়ে সিন্ডিকেট রয়েছে। নকল প্রডাক্টে ভরে গেছে।’ ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘দেশে এখন পাকা কাঠাল পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কাঠাল জৈষ্ঠ্য মাসে পাকে। কিন্তু এটা কেমিক্যাল মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে। এগুলো খেয়ে আরও ক্ষতি হচ্ছে। এগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। আর এটা হচ্ছে সেই প্রতিবাদের প্লাটফর্ম। আপনাদের দীর্ঘদিনের আইনের ফলে এই অধিদপ্তরের জন্ম হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ক্যাব আমাদের কাছে জানতে চাইবে- ভোক্তা অধিকার রক্ষায় কেন আপনারা পারছেন না। কারণ আপনারা মানুষের জন্যে কাজ করার প্রত্যাশা নিয়ে এই সংগঠনের বিভিন্ন কমিটিতে রয়েছেন। আপনারা ওষুধের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ করেছেন, হাইকোর্টে রিট করেছেন, তার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মূল্য বৃদ্ধি না করার আদেশ দিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বছর কয়েক আগে ডিজেলের দাম বাড়ায় ডিমপ্রতি খরচ বাড়লো ৮/৯ পয়সা। কিন্তু দাম বাড়ালো ২/৩ টাকা করে। আমরা সেই সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়েছি। আমাদের আইনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরা ইচ্ছে করলেই সব কিছু করতে পারি না। কিন্তু আপনারা তো স্বাধীন। আপনারা কেন ভয়েস রেইজ করতে ভয় পান। আপনার তো আমাদেরকে প্রতিনিয়ত বিরক্ত করবেন। কেন ভোক্তা প্রতারিত হবে। এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বা ভোক্তা সংগঠনের নামে ভাইফোঁর অনেক প্রতিষ্ঠান দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। তারা কমিটি দিচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় ভোক্তা অধিদপ্তরের নামে চাঁদাবাজী করছে। আপনাদের ভয়েস আর আমাদের কার্যক্রম দুটো মিলাতে পারলে ভোক্তার অধিকার রক্ষা হবে। আপনাদের কাছে একটাই চাওয়া- একটু অ্যাকটিভ হোন।’ তিনি বলেন, ‘সরকারি আইন দিয়ে কখনোই ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। আমাদের সবার কার্যক্রমের মাধ্যমে ভোক্তাকে জাগিয়ে তুলতে হবে। আমাদের এখানে প্রতিদিন অন্তত ১০০টি করে অভিযোগ পড়ছে। আমরা সেটা সমাধান করার চেষ্টা করছি।’

 ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, সম্মেলনের প্রধান লক্ষ্য- ক্যাবের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী করা। মাঠ পর্যায়ে কি কাজ হচ্ছে, সেটা পর্যালোচনা করা এবং ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যক্রম দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া। তিনি বলেন, দেশে হঠাৎ করে ডিমের দাম বেড়ে গেল। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য আমরা প্রতিনিয়তই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। কিন্তু সরকার অজানা কারনে সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এর বিরুদ্ধে ক্যাব-জেলা ও উপজেলা কমিটির জোরালো প্রতিবাদ করা গেলেই, সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। ক্যাব যদি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে, তাহলে ভোক্তা অধিদপ্তরের কাজ করা সহজ হবে। কারণ ক্যাব ভোক্তা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। নাজের হোসাইন বলেন, আমাদের ভয়েস রেইজ করাটাই গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্য দিয়েও আপনারা যতটুকু কাজ করছেন, তাতে আমরা সন্তুষ্ঠ। নতুন প্রজন্মকে ক্যাবের সাথে যুক্ত করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে সংকট বাড়বে। তাই ক্যাবে নতুনদের যুক্ত হওয়ার পথ খোলা রাখতে হবে।

ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি জামিল চৌধুরী বলেন, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে যদি গ্রামে গ্রামে ক্যাবকে শক্তিশালী করতে না পারি, তাহলে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব নয়। আর ক্যাবকে শক্তিশালী করতে হলে জেলায় জেলায় ক্যাবের অফিস থাকতে হবে। কারণ অফিস ভাড়া নিয়ে ক্যাবের কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই তাদের (জেলা পর্যায়ে) দিকেও তাকাতে হবে। তিনি বলেন, এই দেশটা আমাদের। তাই দেশটার জন্য আমাদেরই কাজ করতে হবে। তাই আপনাদের কাছে আহ্বান- ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে ক্যাবকে শক্তিশালী করুন। সেই সাথে সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়নে ভোক্তা অধিদপ্তরকে সহযোগিতা করতে হবে।

ক্যাবের সদস্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব শওকত আলী খান বলেন, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে ভোক্তা অধিদপ্তর যে কার্যক্রম নিয়েছে তাতে সাধুবাদ জানাই। সবার সম্মিলিত কার্যক্রমের মাধ্যমে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষিত হবে। তিনি বলেন, ক্যাবের নিজস্ব কোনো অফিস নেই। তাই কেন্দ্রীয় কমিটিকে ভাড়া বাসায় অফিস পরিচালনা করতে হয়। তাই ক্যাবের নিজস্ব কার্যালয় থাকা দরকার।

ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণা) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন বলেন, ক্যাব নিজের খেয়ে বনের মোষ তারাচ্ছে। এটাতে জনকল্যানমুলক কাজ হিসেবে নিজেদেরকে যুক্ত করেছে। তারা ভোক্তা প্রতিনিধি হয়ে সরকারকে সহায়তা করছে। আবার সরকারের কাজের অনিয়মের প্রতিবাদও করছে। তাদের এই সেচ্ছাসেবী কাজকে ভোক্তা অধিদপ্তর সাধুবাদ জানায়।

ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ক্যাবের আন্দোলনের ফসল ভোক্তা অধিদপ্তর। আপনারা তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করছেন। আপনাদের হাতে অনেক তথ্য থাকে। আপনারা যদি সেই তথ্য দিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরকে সহায়তা করেন, তাহলে আমাদের কাজ করা আরও সহজ হয়। বিভিন্ন সময় মার্কেট (নিত্যপণ্যের বাজার) উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ বিষয়ে আপনারা কাজ করতে পারেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করার এখনই উপযুক্ত সময়, আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব।

এছাড়াও, ক্যাবের জেলা-উপজেলা প্রতিনিধিবৃন্দ সহ গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে ক্যাব জেলা কমিটির জন্য নিজস্ব কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা, ক্যাবের জেলা-উপজেলা কমিটিগুলোর কার্যক্রম আরও বেগমান করতে অর্থ সরবরাহ করা এবং তৃণমূলে ক্যাবকে কার্যকর করতে নতুন কমিটি গঠনের দাবি তুলে ধরেন জেলা পর্যায়ের ক্যাব নেতৃবৃন্দরা।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024