নাদিরা মজুমদার
আমাদের সৌর মন্ডল সাকুল্যে আটটি গ্রহ রয়েছে : বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন। তাছড়াও, সৌর মন্ডলের আওতায় আরো রয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত পাঁচটি বামণ গ্রহ : সেরীজ (ঈবৎবং), প্লুটো, হমিয়া/হাউমিয়া (ঐধঁসবধ), মাকেমাকে/মাকিমাকি (গধশবসধশব) এবং এরিস (ঊৎরং)।
সূর্যের কাছের আভ্যন্তর চারটি শিলাজ বা পাথুরে (রকি) গ্রহ হলো, যথাক্রমে : বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গল। (এদের সবারই পৃষ্ঠদেশ কঠিণ, তাই ’টেরিস্ট্রিয়াল’ গ্রহ বলা হয়।)।
বাইরের গ্রহগুলো বা মঙ্গলের পরের বাকি চারটে গ্রহের হালহকিকত একেবারে ভিন্ন প্রকৃতির। বৃহস্পতি ও শনি গ্রহদুটো বি-শা-ল সাইজের এক একটি গ্যাসের দানব, এবং ইউরেনাস ও নেপচুনও এক একটি বরফের দানব হয়ে অবস্থান করছে। এদের পরিচয় হলো ’জোভিয়ান গ্রহ’। নেপচুনের পরেই, সেরীজ বাদে বাকি চারটি বামণ গ্রহ, যার মধ্যে এককালের ’গ্রহ’ সম্মানে সম্মাানিত দীর্ঘদিনের প্রিয় প্লুটো রয়েছে, তারা রাজত্ব করছে। সেরীজ বামণ গ্রহটি মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মাঝখানে নিরিবিলি নিঃস্ব অবস্থানে রয়েছে।
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের সুবাদে : সৌর জগতের সীমানা পেরিয়ে, হাজারে হাজারে আরো অ-নে-ক গ্রহের হদিস পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা এই সব গ্রহকে বলেন ’বর্হিগ্রহ’ (বীড়ঢ়ষধহবঃং)।
সৌর জগতে : আটটি গ্রহের মধ্যে প্রচুর অমিল রয়েছে, বা অন্যভাবে প্রতিটি গ্রহ যার যার নিজস্বতা, ব্যক্তিত্ব নিয়ে অবস্থান করছে; যেমন : আমাদের পৃথিবী। সূর্য থেকে পৃথিবী তৃতীয় গ্রহ এবং পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ। এবং পৃথিবী ছাড়া আর কোথাও প্রাণিজ ও প্রাণি সত্তার বসতি আছে কিনা আমরা জানি না। তাই পৃথিবীই হলো একমাত্র ’গোল্ডিলক্স জোন’। অথচ সূর্য থেকে দ্বিতীয় গ্রহ শুক্র পৃথিবীর নিকটতম প্রতিবেশি এবং এতোটাই নিকটতম যে কখনোবা পৃথিবীর যমজ বলে ডাকা হয়। কিšতু সে সৌর জগতের উত্তপ্ততম গ্রহ; দুই যমজের মধ্যে কি আকাশপাতাল পার্থক্য!
প্রথম চারটি গ্রহের সমাহারে সৃষ্ট শিলাজ বা পাথুরে গ্রহের সীমানা পেরোলেই – বাকি চার গ্রহের, জোভিয়ান গ্রহমালার আধিপত্যের শুরু হয়। প্রথম জোভিয়ান হলো বৃহস্পতি গ্রহ; সূর্য থেকে পঞ্চম ও সৌর মন্ডলের বৃহত্তম, প্রবীনতম বয়োজ্যেষ্ঠ গ্রহ সে। ৪.৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে সূর্যের গঠন কালে ধূলা ও গ্যাসের অবশিষ্টাংশ থেকে তার জন্ম হয়। বৃহস্পতি ছিলো সৌর মন্ডলের ’ফার্স্ট বর্ণ’ গ্রহ, প্রথম গ্রহ; জন্মকালে সম্ভবত সূর্যের কাছে ছিলো। এরকম মনে করার কারণ হলো যে – এপর্যন্ত যে কয়েক হাজার ’বহির্গ্রহ’ (বীড়ঢ়ষধহবঃং), (অর্থাৎ সৌর মন্ডলের চৌহদ্দির বাইরে বিদ্যমান গ্রহ, যারা আমাদের সূর্য নক্ষত্রের মতো অন্য নক্ষত্রকে ঘিরে ’নক্ষত্র সিস্টেম’ সৃষ্টি করেছে), আবিস্কার হয়েছে সেসব নক্ষত্র সিস্টেমে বৃহস্পতি-সদৃশ গ্রহরা যার যার তার তার নক্ষত্রের কাছাকাছি অবস্থান করছে। তাই বিজ্ঞানীরা মনে করছেন যে সূর্য-কেন্দ্রিক সিস্টেমেও নিশ্চয় বড়ো মাপের গ্রহগুলো আদিকালে সূর্যের কাছাকাছি ছিলো।
মোটামুটিভাবে চার বিলিয়ন বছর পূর্বে অভিকর্ষ প্রচন্ড ভাবে ঠেলা দিয়ে দিয়ে বৃহস্পতিকে বর্তমান অবস্থানে নিয়ে আসে। সেসময়ে স্থান বদলের এই অভিকর্ষীয় প্রক্রিয়া চলাকালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরা যেসব গ্রহাণুপুঞ্জ ও ধূমকেতু নবজাতক পৃথিবীর ওপরে সজোরে দড়াম দড়াম করে পড়েছিলো, সম্ভবত তাদের মাধ্যমে পৃথিবীতে জলের আগমন ঘটে – যা নাকি পৃথিবীতে প্রাণ সঞ্চারের মূল উপাদানের কাজ করে।
আকারে বৃহস্পতি এতোটাই বিশাল যে ওর ভেতরটা যদি ফাঁপা শূন্যগর্ভ হতো তো তার ভেতরে অনায়াসে এক হাজারটি পৃথিবীকে (১,০০০) ঢোকানো যেত। গ্যাস সর্বস্ব এই সু-বি-শা-ল গ্যাস-দানবের ভরের পরিমাণ কতো হবে? হিসেব করে বলা হচ্ছে যে সৌর মন্ডলের বাকি সাতটি গ্রহের ভরগুলো যোগ করে যা পাব, সেই যোগফলের আড়াই গুণের বেশি ভর নিয়ে বৃহস্পতি সৌর মন্ডলের বৃহত্তম গ্রহের স্থান দখল করে আছে; অথবা সূর্যের ভরের এক হাজার ভাগের এক ভাগ পরিমাণ ভরের চেয়ে যৎসামান্য কম ভর তার। বৃহস্পতি যদি আ-রো আ-রো ভর সংগ্রহ করে করে আরো বি-শা-ল হতে পারত তো সে কিšতু নিজেই অগ্নিদাহ ঘটিয়ে (সূর্যের মতো) নক্ষত্র হতে পারত। কিšতু বৃহস্পতি তা করতে পারেনি, তাই তার নিজস্ব ’নক্ষত্র মন্ডল’ হয়নি।
বৃহস্পতির লালচে রঙিন অঞ্চলটি ঝড়বাদলা ও বজ্রপাতের আখড়া।
সৌজন্যে : উইকিপিডিয়া, নাসা, জেপিএল; পাবলিক ডমেইন
তার শরীরকে পেঁচিয়ে থাকা ডোরাকাটা দাগ হলো ঘূর্ণায়মান মেঘ। কয়েক শতাব্দী ধরে বিদ্যমাণ ’গ্রেট রেড স্পট’ নামে পরিচিত লাল রঙের দাগটির অর্থ – পৃথিবীর চেয়েও অ-নে-ক অ-নে-ক বিশাল মাপের ঝড়বাদল ও বজ্রপাত সৃষ্টির আঁতুরঘর এখানে। ওর বায়ুমন্ডলও ঘন পুরু; আরো রয়েছে ঊষা মেরুর আলোকচ্ছটা, পৃথিবীতে সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে যেমন দেখা যায়। অবশ্য পার্থক্য হলো যে বৃহস্পতির ঊষা মেরুর আলোকচ্ছটা নন-স্টপ সর্বক্ষল বিদ্যমাণ, এবং তা অ-নে-ক গুণ শক্তিসম্পন্ন, উদ্যমী তেজীয়ান। গ্যাস-দানব বলে বৃহস্পতির কোনো কঠিণ পৃষ্ঠদেশ নেই। তবে হয়ত তার কেন্দ্রে কঠিণ পদার্থ দিয়ে সৃষ্ট কেন্দ্রীয় মর্মস্থল বা ’কোর’ (পড়ৎব) রয়েছে; অথবা কঠিণ না হয়ে ঘন নিবিড় স্যূপের মতোও হতে পারে। পৃথিবীর হিসেবে, পৃথিবীর দশ ঘন্টা বৃহস্পতির একদিন, এবং পৃথিবীর ৪,৩৩৩ দিন বা এগারো দশমিক আট বছরে বৃহস্পতির এক সৌর বছর হয় বা একবার সূর্যকে পরিক্রমণ করে। বৃহস্পতির অন্যান্য তথ্য, যেমন : বৃহস্পতির বায়ুমন্ডলের চাপ যেখানে যেখানে পৃথিবীর সমুদ্র-সীমায় বায়ু চাপের অনুরূপ, সেখানে বৃহস্পতির গড় তাপমাত্রা মাইনাস একশোআট (-১০৮) ডিগ্রী সেলসিয়াস; সূর্য থেকে বৃহস্পতি প্রায় সাতশো উনআশি মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে, অর্থাৎ সূর্য থেকে পৃথিবী যে দূরত্বে রয়েছে তার চেয়ে প্রায় পাঁচ দশমিক দুই (৫.২) গুণ দূরে রয়েছে; বৃহস্পতির ব্যাস এক লাখ বিয়াল্লিশ (১৪২,৯৮৪) হাজার নয়শো চুরাশি কিলোমিটার, অর্থাৎ পৃথিবীর চেয়ে বৃহস্পতি প্রায় এগারো দশমিক দুই (১১.২) গুণ চওড়া। এবং বৃহস্পতির বায়ুমন্ডলে প্রধানত প্রায় নব্বই শতাংশ হাইড্রোজেন ও প্রায় দশ শতাংশ হিলিয়াম দিয়ে গঠিত, অন্যান্য আরো যেসব গ্যাসের সংমিশ্রণ রয়েছে পরিমাণে এক শতাংশেরও কম।
তার রয়েছে সরকারিভাবে স্বীকৃত পঁচানব্বই (৯৫)টি চাঁদ। এবং এদের মধ্যে আবার চারটি চাঁদ : আইয়ো (ওড়), ইউরোপা (ঊঁৎড়ঢ়ধ), গেনামীড (এধহুসবফব), ও ক্যালিস্টো (ঈধষষরংঃড়)-কে অসাধারণ চাঁদ বললে অত্যুক্তি হয় না। সাইজের বিবেচনায় চাঁদ চারটি পৃথিবীর চাঁদের চেয়ে ছোটো থেকে বুধ গ্রহের চেয়ে বড়ো এবং এরা খু-উ-ব সক্রিয়। আইয়ো মূলত আগ্নেয় কর্মকান্ড নিয়ে বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে, বাকি তিন চাঁদের পৃষ্ঠদেশের নিচেয় রয়েছে তরল-জলের মহাসাগর। তাই, প্রাণের বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। অ-নে-কগুলো লাখ লাখ বছর পরে, বৃহস্পতির এই চারটি চাদের বাসযোগ্য অঞ্চলে (হ্যাবিটেব্ল্ জোন) রূপান্তরিত হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে। অর্থাৎ বায়ুমন্ডল বিহীন, অক্সিজেনবিহীন, ম্যাগনেটোস্ফিয়ারবিহীন মঙ্গল গ্রহ নয় বরং বৃহস্পতির চাঁদ চারটি পৃথিবীর মানুষের ও তাবৎ প্রাণিজগতের বিকল্প বাড়ি হতে পারবে।
বৃহস্পতির চারটি চাঁদ বা উপগ্রহ। বামদিক থেকে ডানদিকে, বৃহস্পতি থেকে দূরত্ব অনুযায়ী : আইয়ো; ইউরোপা; গেনামীড; ক্যালিস্টো।
সৌজন্যে : উইকিপিডিয়া, নাসা, জেপিএল; পাবলিক ডমেইন
নক্ষত্র হওয়ার মতো যথেষ্ট ভর তার নেই বটে তবে চারটে গ্রহ-সদৃশ চাঁদের আগ্নেয় ও পৃষ্ঠদেশের নিচে মহাসাগরের অস্তিত্ব থাকার বৈশিষ্ট্য নিয়ে বৃহস্পতি নিজের জন্য নিজস্ব একটি মিনিয়েচার গ্রহীয় সিস্টেম সৃষ্টি করে নিয়েছে। আমাদের এই জ্ঞান, জানা – মহাজগতে, কোথায় করব প্রাণের সন্ধান সম্বন্ধে আমাদের উলব্ধিকে নাড়া দেয় কিন্তু!
আমাদের সৌর মন্ডলে, জোভিয়ান গ্রহ মাত্রেরই রিং বা আংটি রয়েছে। বলাবাহুল্য যে তাই বৃহস্পতিরও রিং বা আংটি রয়েছে। চারটি আংটি, তবে সেগুলো এতোই ক্ষীণ যে সনাক্ত করা সহজ নয়। ভয়েজার ১, পাইয়োনীয়ার ১০ ও ১১সহ অনেক নভোযান তাকে দর্শণ দিয়েছে, দর্শণ অব্যাহত রয়েছে। হাব্ল্ নভোটেলিস্কোপ এবং সর্বশেষ স্মার্ট ওয়েব নভোটেলিস্কোপ বৃহস্পতির চমৎকার ছবি বা প্রতিচ্ছবি তুলেছে। বর্তমানে বৃহস্পতির বিচিত্র বৈশিষ্ট্যগুলোকে পর্যবেক্ষণের জন্য প্রায় সব সময়ে কোনো না কোনো নভোযান এবং পৃথিবীতে অবস্থিত টেলিস্কোপগুলো সচেতন পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
বৃহস্পতির চারটে আংটিকে চারটি প্রধান সেকশনে ভাগ করা হয়েছে। ছবিতে, আমরা দেখছি যে বৃহস্পতির প্রথম প্রধান আংটি-টি হলো ’হেইলো রিং’ বা আংটি এর পরেই রয়েছে দুটো ক্ষীণাকার ’গসামার’ (মড়ংংধসবৎ) আংটি, তাদের নামকরণ হয়েছে ’আমলথিয়া’ (অসধষঃযবধ) ও ’থীব’ (ঞযবনব)। থীব আংটি-টির আবার অস্পষ্ট ক্ষীণাকার সম্প্রসারণ বা ব্যাপ্তী রয়েছে।
এই রূপরেখায় বৃহস্পতির আংটি সিস্টেমের চারটি প্রধান উপাদান দেখানো হয়েছে। সরলিকরণের জন্য,
মেটিস ও আড্রাস্টী তাদের কক্ষপথ শেয়ার করছে, দেখানো হয়েছে। (বাস্তবে মেটিস বৃহস্পতির কিছুটা নিকটবর্তী)।
সৌজন্যে : উইকিপিডিয়া, নাসা, জেপিএল; পাবলিক ডমেইন
এই ছবিটিতে, চারটি প্রধান আংটি-র কথা বলতে গিয়ে চার চারটি অপরিচিত নাম : ’মেটিস’ (গবঃরং), ’আড্রাস্টী’ (অফৎধংঃবধ), ’আমলথিয়া’ ও ’থীব’ ব্যবহার হয়েছে। এরা কারা? এরা হলো বৃহস্পতির চারটি ক্ষুদে চাঁদ, এবং তারা সবাই বৃহস্পতির বি-শা-ল চাঁদ ’আইয়ো’র কক্ষপথের মধ্যে অবস্থান নিয়ে পরিক্রমণ করছে, যেনোবা পরিবারের জ্যেষ্ঠ জনের আশ্রয়ে রয়েছে। পরিক্রমণ কালে এইসব ক্ষুদে চাঁদের আংটিগুলোর সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়া হচ্ছে; যেমন : দুই ক্ষুদে চাঁদ- মেটিস ও আড্রাস্টী বৃহস্পতির প্রধান আংটির বাইরের দিককার প্রান্তে রয়েছে; ক্ষুদে চাঁদ আমলথিয়া আবার ’আমলথিয়া’ ও ’থীব’ আংটি দুটোর সঙ্গে শেয়ার করেছে; এবং ক্ষুদে চাঁদ থীব ভাগাভাগির মধ্যে না গিয়ে স্বাধীনভাবে ’থীব আংটি’র বাইরের দিককার প্রান্তে থেকে পরিক্রমণ করছে। অর্থাৎ ক্ষুদে চাঁদ চারটি আংটি ধারন করে ’আংটি-চাঁদ’-য়ে রূপান্তরিত হয়েছে।
এই চারটি আংটি প্রধানত ধূলা এবং ক্ষুদে চাঁদগুলোতে ধ্বসে পড়া উল্কাপিন্ডের ছোট্ট ছোট্ট গাঢ় রঙের কণিকা দিয়ে গঠিত। এদের আয়ু এক মিলিয়ন বছরের চেয়ে কম; সম্ভবত বৃহস্পতির বিকিরণ অথবা অভিকর্ষের তাড়নায় বিরামহীনভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে হয়ে মূল গ্রহের মধ্যে বিলীন হচ্ছে, পুনরায় জন্ম নিচ্ছে, পুনর্জন্ম হচ্ছে।
বৃহস্পতির আংটিগুলোর সমাহার; শক্তিশালী সম্মুখগামী ছড়িয়ে পড়া সূর্যালোক; ছবিটি নভোযান ভয়েজার ২ তুলেছিলো বৃহস্পতির
ছায়ার আড়ালে থেকে এবং আংটিগুলো থেকে পাঁচ (৫) মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থান নিয়ে।
সৌজন্যে : উইকিপিডিয়া, নাসা, জেপিএল; পাবলিক ডমেইন
সাইজের দিক দিয়ে : ভেতরের ’হেইলো আংটি’ থেকে বাইরের ’থীব আংটি’ অব্দি প্রায় একশোবাইশ (১২২,০০০) হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এই সাইজ নিয়ে আংটিগুলো কিন্তু অনায়াসে বৃহস্পতির চারটি বড়ো মাপের চাঁদ : আইয়ো, ইউরোপা, গেনামীড, এবং ক্যালিস্টো-র যেকোনো একটির কক্ষপথে আরাম করে বসতে সক্ষম। কিন্তু পরিবারের এই ঘনিষ্ঠ জ্যেষ্ঠরা সুনির্মিত আংটি-সিস্টেম গঠণে বাধা দিয়ে আসছে। যাহোক, আংটিগুলোর পুরুত্ব প্রায় একশো কিলোমিটার থেকে ’হেইলো আংটি’র প্রায় দশ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত।
’জোভিয়ান’ নামকরণটি হয়েছে বৃহস্পতির ইংরেজি ’জুপিটার’ থেকে। সৌর মÐলের গ্যাস সর্বস্ব ’গ্যাস-গ্রহ’গুলোকে জোভিয়ান বা জুপিটার-সদৃশ গ্রহ বলা হয়। অন্যথা, জোভিয়ান গ্রহ’রা ’গ্যাস-দানব’ (এধং মরধহঃং) নামেও অভিহিত হয়। অবশ্য গ্যাস-দানব’রা কেবলমাত্র অফুরন্ত পরিমাণ গ্যাস দিয়ে তৈরি নয়, তাদের রয়েছে শিলাজ কেন্দ্রীয় মর্মস্থল বা কোর (পড়ৎব)।
শনি হলো দ্বিতীয় জোভিয়ান বা দানব-গ্রহ। মহাসমারোহপূর্ণ আংটিধারি শনি’কে ’লর্ড অব দি রিংস’ বলা যায়। পরবর্তীতে শনি’র কাহিনি বলব।
লেখক : অনন্যা ও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত, সিনিয়র সাংবাদিক
Leave a Reply