সারাক্ষণ ডেস্ক
সম্প্রতি এক বাঙালি গৃহবধু’র বাড়ির পাশের থাইল্যান্ড ভ্রমনের অভিজ্ঞতার প্রথম বক্তব্য, এখানে সব জায়গায় এত মেয়েরা কেন? থাইল্যান্ডের পাশের ও আমাদের খুব কাছের দেশ সিঙ্গাপুর বৈষম্য পিছে ফেলে এশিয়া প্যাসিফিকে প্রথম স্থান দখল করেছে নারী অগ্রগতিতে। পৃথিবীতে আটতম স্থানে নিজেদের অবস্থান নিয়েছে। সিঙ্গাপুরে মেয়েরা এই বৈষম্যকে পিছে ফেলছে তা শুধু ছোট খাট কাজে নয়, ব্যবস্থাপনাসহ নানান সিদ্ধান্ত নেবার পদেও।
বাংলাদেশে মেয়েরা যে সকলে ঘরে বন্দী থাকে তা নয়। বাংলাদেশেও অধিকাংশ না হোক বড় অংশ মেয়ে বাইরে কাজ করছে। তবে এর বড় অংশ কৃষিকাজে। তারপরে গার্মেন্টেসে। কিন্তু সেখানেও খবর নিয়ে চমকে ওঠার মতো ঘটনা। আগে সেখানে মেয়েদের সংখ্যা বেশি ছিলো, সেটাকে পিছে ফেলে এখন ছেলেরা সে জায়গা দখল করেছে। সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে মেয়েদের অংশ গ্রহন এখনও সিঙ্গেল ডিজিটের খুব বেশি দূর এগোয়নি। শুধু এ নয়, বাংলাদেশে যদি শতকরা হারে হিসেব করা হয় তাহলে দেখা যাবে শিক্ষিত মেয়েদের বড় অংশ নিজেদেরকে চার দেয়ালে বন্দী রেখেছে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রনীতি শতভাগ মেয়েদের প্রতিকূল নয়। তারপরেও এখনও নীতিটি রয়ে গেছে, মেয়েরা গৃহলক্ষ্মী তাদেরকে পায়রার মতো আদর যত্ন করে রাখা হোক। তাই প্রতি দশকে দশকে পার্লামেন্টে অলংকারের মতো তাদের আসন সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। যেমন করে তাদের গহনার বাক্সে জমে একটার পর একটা গহনা। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনের মাঠে মেয়েদেরকে জায়গা ছাড়ছে না। লোক সংখ্যা অনুপাতে সংসদের আসন বাড়িয়ে মাঠে মেয়েদেরকে জায়গা ছাড়ার কোন চিন্তা আছে বলে কোথাও আভাস পাওয়া যায় না।
অন্যদিকে বাস্তব পরিবশে ও মানসিকতা এখনও নারীদের কাজের পক্ষে নয়। যেমন চিকিত্সক পেশায় মেয়েদের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু বেশিভাগ যেমন গাইনীর ডাক্তার তেমনি হাসপাতালে রাতে ডিউটি করার মতো পরিবেশ বা কাজ শেষে রাতে ফেরার মতো পরিবেশ আছে বলে তারা মনে করে না। তাই সকলে দিনে ডিউটি চায়।
আবার জোর করে কোন কিছু করলে যে তার ফল ভালো হয় না তা প্রাইমারী শিক্ষার ক্ষেত্রে দেখা গেছে। এরশাদ মেয়েদের শিক্ষকতায় আনার জন্যে স্কুল ফাইনাল পাশ করার পরেই প্রাইমারী শিক্ষক হবার সুযোগ দিয়েছিলেন। যদিও নানান কারণে দেশের শিক্ষার মান নেমে গেছে। তারপরেও এটাও একটা কারণ। তাই সেখান থেকে পিছু হটতে হয়েছে।
যদিও তাড়াহুড়ো করে কোন ভালো কিছু করা যায় না। তবে এ সত্য যে অর্ধ শতকের বেশি পথ দেশটি পার হয়ে এসেছে। আর এই সময়ের মধ্যে ওইসব দেশগুলো এগিয়ে বর্তমানে পৃথিবীর উন্নত দেশের সঙ্গে লড়ছে।
তাই প্রকৃত সত্য, নারীদেরকে এগিয়ে নেবার মতো কোন বাস্তবসম্মত নীতি আমাদের রাষ্ট্রে ও সমাজে গ্রহন করা হয়নি তারই প্রকাশ বর্তমান অবস্থা। এই সত্যের ওপর দাঁড়িয়ে যদি সকলে মিলে ভবিষ্যত চিন্তা করা যায়, তাহলে হয়তো আগামী অর্ধ শতক পরে হলেও প্রকৃত সুফল মিলবে।
Leave a Reply