মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০৯ অপরাহ্ন

নানা আয়োজনে শুরু হলো ৪২তম বার্ষিক রবীন্দ্রসংগীত অধিবেশন

  • Update Time : শনিবার, ৯ মার্চ, ২০২৪, ২.৪৪ পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

বিশ্বের নানা প্রান্তে যুদ্ধ-সহিংসতা চলছে। অন্যায়-অবিচারের প্রেক্ষাপটে দুর্নীতি যখন গোটা সমাজকে গ্রাস করে নিয়েছে; তখন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে, কবিতায় মুক্তির পথ খুঁজছেন সংস্কৃতিজনরা।

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা, প্রকৃতি ও মানবপ্রেমের ভাবনায় এই সমাজকে নতুন করে বিনির্মাণ করে তারা এনে দিতে চান কাঙ্ক্ষিত মুক্তির পথ।

 

গতকাল শুক্রবার জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের ৪২তম বার্ষিক অধিবেশনে এই প্রত্যয় জানান তারা। এদিন সকালে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। পরিষদের নির্বাহী সভাপতি ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়।

 

এর আগে ‘আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে’ এই গানের মধ্য দিয়ে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন অতিথিরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আজিজুর রহমান তুহিনের গ্রন্থনায় গীতিআলেখ্য ‘সত্যের আনন্দরূপ এই তো জাগিছে’ মঞ্চস্থ হয়।

 

দুপুরে কিশোর বিভাগের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় এই ভেন্যুতে লিলি ইসলামের গ্রন্থনায় নৃত্যালেখ্য ‘তুমি অনন্যা’, ‘তুমি অনন্যা, রবীন্দ্রগীতি নৃত্যনাট্যে নারী’ মঞ্চস্থ হয়। একক সংগীত পরিবেশন করেন ইফফাত আরা দেওয়ান, সেজুতি বড়ুয়া, কাঞ্চন মোস্তফা, মহাদেব ঘোষ, মানসী সাধু, সত্যম কুমার দেবনাথ, ফারহিন খান জয়িতা, শামা রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান তূর্যসহ আরো অনেকে। আবৃত্তি পরিবেশন করেন বেলায়েত হোসেন। সম্মেলক গান পরিবশেন করেন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ উত্তরা শাখা।

 

তিনদিনব্যাপী সম্মিলনের দ্বিতীয় দিনে আজ বিকেলে শিল্পকলা একাডেমিতে ‘রবীন্দ্র শিক্ষাদর্শ ও বাংলাদেশের নবশিক্ষাযাত্রা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পাঠ, গান, নৃত্যসহ রয়েছে নানাবিধ আয়োজন।

 

আতিউর রহমান বলেন, আজকে আমরা রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলনের আয়োজন করছি এমন এক সময়ে যখন চারিদিকে নানা অসঙ্গতি। সমাজের নিস্ক্রিয়তা আমাদের হতাশ করে। অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি, সমাজকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। আজও আমরা উদারবাদী, অসাম্প্রদায়িক চেতনাসম্পন্ন সৃষ্টিশীল শিক্ষা আমরা দিতে পারিনি। সেখান থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই। আমরা সেখানে রবীন্দ্রনাথের গান, নাটক, নাচে, কথার মাধ্যমে সমাজকে জাগিয়ে তুলতে চাই।

 

রামেন্দু মজুমদার তার বক্তব্যের শুরুতে সমাজের চলমান প্রেক্ষাপটে সংস্কৃতিকর্মীদের হতাশার কথা জানান। তিনি বলেন, দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বহনকারী সরকার। অর্থনৈতিক অবকাঠামোর ক্ষেত্রে দেশে অনেক দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে।

যদিও ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বেড়েই চলেছে। উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে অধোগতি হয়েছে মূল্যবোধের, মানবিক আচরণের। অপসংস্কৃতি আমাদের সমাজকে গ্রাস করেছে। দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাসা বেধেছে। আজ খলনায়কেরা আমাদের কাছে নায়কের মর্যাদা পাচ্ছে। সমাজ চলে গেছে মৌলবাদীদের দখলে।

 

শুক্রবার ছিলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এ দিবসের প্রেক্ষাপট নিয়ে রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘আমাদের দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। পুরুষের সাথে সমান তালে নারীর অগ্রগতি না হলে সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়ন হবে না। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য সরকারিভাবে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সমাজ ও পরিবারে নারীর অবদান হতাশাব্যঞ্জক।

 

নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি যে সহিংস ঘটনা ঘটে চলেছে সমাজে, তা রুখতে আইনের বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ করেন তিনি। বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়েও সংস্কৃতিকর্মীদের প্রবল আতঙ্ক প্রকাশ পায় রামেন্দু মজুমদারের ভাষ্যে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে ফিলিস্তিনে চলমান যুদ্ধের ভয়াবহতায় প্রাণহানি ও মানবতাবিরোধী অপরাধের কথা তুলে ধরেন তিনি। এই উন্মত্ততা ও অমানবিকতা রুখতে রবীন্দ্রনাথের শান্তি ও সাম্যের বাণী ও গান অনুসরণের কথা বলেন তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024