রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০৩ অপরাহ্ন

কক্সবাজার উপকূলে শুঁটকি পল্লিতে ব্যস্ত সময় পার করছে শ্রমিকরা

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪, ৪.১০ পিএম

জাফর আলম

কক্সবাজার উপকূলে শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে শ্রমিকরা। শুঁটকি পল্লীগুলোতে বেড়েছে ব্যস্ততা। কক্সবাজার উপকূল উখিয়া,টেকনাফ শুঁটকি মহালগুলোতে এখন শুঁটকির গন্ধ।

কক্সবাজারের উখিয়ার মনখালী,টেকনাফ বাহারছড়া,শামলাপুর,শিলখালী,জাহাজপুরাসহ উপকূলীয় কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, শতশত শ্রমিক শুঁটকি উৎপাদনে মহাব্যস্ত। সাগর থেকে নৌকা,ট্রলার মাছ আহরণ করে উখিয়ার মনখালী,টেকনাফ বাহারছড়ার শামলাপুর,শিলখালী,জাহাজপুরা ঘাটে ভিড়ছে। এসব নৌকার আসা বিভিন্ন কাঁচা মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি করা হচ্ছে। এদিকে এই সময়ে  সাগরে মাঝিদের ফিশিং ট্রলারে  বিভিন্ন প্রজাতির মাছও ধরা পড়ছে বেশি। আর এ সুযোগে সাগরের কাঁচা মাছ সহনীয় দামে ক্রয় ও সংগ্রহ করা হয়। এসব মাছ  রোদে শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করার ব্যস্ত সময় পার করছেন শুটকি পল্লীর বাসিন্দারা।

সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের দু’পাশে অন্তত ২০ থেকে ২৫ টি পল্লীতে মাছ শুকানো কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে।এছাড়াও টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর শিলখালী,জাহাজপুরা উখিয়ার মনখালী, শাহপরীরদ্বীপে শুটকি মাছের বড় পল্লী রয়েছে।বিশেষ করে  সেন্টমার্টিন দ্বীপে আধুনিক প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে কাঁচা মাছ শুকানো হয় ।

এদিকে মৌসুম শুরু হওয়ায় প্রত্যেক পরিবারের নারী পুরুষ থেকে শুরু করে ছেলে মেয়েরা পর্যন্ত সাগরের কাঁচা মাছ রোদে শুকানোর কাজে নেমে পড়েছেন। উখিয়ার মনখালি গ্রামের মোহাম্মদ তৈয়ব টেকনাফ উপজেলার শামলাপুর গ্রামের বাবু জানান, শুষ্ক মৌসুম হচ্ছে কাঁচা মাছ শুকানোর সময়।আর এ সময় সাগরে জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়ে প্রচুর। তাদের মতে কম মূল্যে সাগরের বিভিন্ন প্রজাতির কাঁচা মাছ ক্রয় করে তারা রোদে শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে শুটকি মাছে পরিণত করে। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ও ঢাকা শহরের ব্যবসায়ী মহাজন’ এবং স্থানীয় বহদ্দার অগ্রিম টাকা দেয় শুটকি পল্লীতে।

স্হানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে সাপ্তাহিক পিক আপ ও মিনি ট্রাক ভর্তি করে শুটকি মাছের চালান দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। শুটকি পল্লীতে বসবাসকারী অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কেবল লবণের পানি ব্যবহার করে কাঁচা মাছ গুলো রোদে শুকানো হয়। কোন অবস্থাতে কীটনাশক বা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে না।

স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,প্রক্রিয়াজাতকরণে বাস্তবসম্মত প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে গুণগত মানসম্পন্ন শুটকি উৎপাদন সম্ভব হতো। অথচ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা কোন প্রকার সহযোগিতা ছাড়াই এখানকার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক মৎস্যজীবীরা কাঁচা মাছ রোদে শুকিয়ে শুটকি মাছে  রূপান্তর করছেন। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানকার মাছ বেশি স্বাদ ও মজাদার হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে শুটকির চাহিদা রয়েছে।তবে পরিবেশবান্ধব মানসম্মত শুঁটকি উৎপাদনে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি প্রশিক্ষণের দাবি করছেন কর্মজীবী শ্রমিকরা।

নৌকার মালিক বেলাল বলেন,শুটকি পল্লির শ্রমিকরা রাতদিন পরিশ্রম করে।ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতি আন্তরিক হলে শুটকি পল্লির শ্রমিকদের মুখে হাসি থাকবে।আন্তরিক হওয়া একান্ত প্রয়োজন বলে জানান তিনি।শুটকি ব্যবসায়ী বাবু জানান,কক্সবাজারের উপকুলের শুটকি ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্হানে যায়।উপকুলের শুটকি গুলো বিশুদ্ধ।তাই চাহিদা বেশী।ছুরি,লইট্টা,ফাইস্সা,পোয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শুটকি হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী বাবু।

কিশোর,নারী শ্রমিক বেশীর ভাগ শুটকি পল্লিতে কাজ করে।জীবিকার তাগিদে এসব শ্রমিকরা শুটকি পল্লিতে কাজ করে সংসার চালায়।কক্সবাজার উপকুলের শুটকি ব্যবসায়ীরা শ্রমিকদের শ্রমের দাম দিয়ে তাদের মুখে ফোটান বলে জানান তিনি। আরও কয়েকজন শুঁটকি ব্যবসায়ী জানান , এবার চড়া মূল্যে কাঁচা মাছ কিনতে হচ্ছে বলে গত বছরের তুলনায় শুঁটকির দাম অনেক বেড়েছে বলে জানালেন তারা। কক্সবাজার জেলা মৎস্য অফিস জানান,  কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপকূলে শুঁটকি উৎপাদিত হয়েছে। প্রতিদিন যে পরিমাণ শুঁটকি উৎপাদিত হচ্ছে, তাতে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম হতে পারে বলে আশা করা যায়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024