মেরির এমন আচরণ তার কাছে এতোটাই বিস্ময়কর মনে হয়েছে যে তিনি তার প্রচলিত চিকিৎসাবিদ্যা থেকে সরে এসে মৃত্যু পথযাত্রী মানুষ কেমন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যান সে বিষয়ে গবেষণার সিদ্ধান্ত নেন।
‘শান্তির অনুভূতি’
মেরির সাথে দেখা হওয়ার ২৫ বছর পর, মি. কের মৃত্যু পথযাত্রী মানুষদের স্বপ্ন এবং তারা শেষ সময়ে কী দেখেন সে সংক্রান্ত গবেষণায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞদের একজন হয়ে উঠেছেন।
তিনি বলেছেন, জীবন সায়াহ্নে থাকা এসব মানুষ সাধারণত তাদের মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে এমন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাওয়া শুরু করেন এবং মৃত্যুর সময় যতো ঘনিয়ে আসে ততোই এর তীব্রতা বাড়তে থাকে।
কের বলেছেন, তিনি মৃত্যু পথযাত্রী মানুষদের তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো পুনরুজ্জীবিত হতে দেখেছেন এবং সেই সাথে তিনি দেখেছেন তারা তাদের মা, বাবা, সন্তান এবং এমনকি পোষা প্রাণীদের সাথে কথা বলছেন যারা বেশ কয়েক বছর আগেই মারা গেছেন।
এই রোগীরা যা দেখতেন সেই দৃশ্যগুলো তাদেরকে একদম বাস্তবতার অভিজ্ঞতা, অনুভূতির গভীরতা এবং শান্তির অনুভূতি দিতো।
“এই সম্পর্কগুলো প্রায়ই খুব অর্থপূর্ণ এবং আরামদায়ক অনুভূতি নিয়ে ফিরে আসে, যা তার এতোটা বছর বেঁচে থাকাকে সার্থকতা দেয় এবং ফলস্বরূপ, মৃত্যুর ভয় কমিয়ে দেয়”, কের বিবিসি নিউজ ব্রাজিলকে এসব কথা বলেন।
এই রোগীরা এমন নয় যে তারা বিভ্রান্ত বা অসংলগ্ন। কের জোর দিয়ে বলেছেন তাদের শারীরিক স্বাস্থ্য ক্ষয় হতে থাকলেও তারা মানসিক এবং আধ্যাত্মিকভাবে উপস্থিত থাকতেন।
যাই হোক, অনেক চিকিৎসক এসব ঘটনাকে রোগীর হ্যালুসিনেশন বা বিভ্রান্তির কারণে হচ্ছে বলে হিসাবে উড়িয়ে দিয়েছেন।
তাদের মতে, এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে আরও বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রয়োজন।
ফলস্বরূপ মি. কের ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে এই সংক্রান্ত গবেষণা শুরু করেন। তিনি মূলত এ সংক্রান্ত একটি আনুষ্ঠানিক জরিপ চালান।
যেখানে মৃত্যুর কাছাকাছি আসা মানুষদের কাছে জানতে চাওয়া হয় তারা কী দেখছেন।
ক্রিস্টোফার কের মৃত্যুর কাছাকাছি থাকা মানুষের অভিজ্ঞতার উপর গবেষণা করেছেন
জরিপে অংশ নেওয়ার আগে সমস্ত রোগীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় এটা নিশ্চিত হতে যে তারা কেউ মানসিকভাবে বিভ্রান্ত নন।
এই গবেষণার আগে, এসব অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো বেশিরভাগ তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকেই এসেছে।
অর্থাৎ রোগী তার শেষ সময়ে কী ভাবছেন, কী দেখছেন সেটা তারা নিজেদের মতো নথিভুক্ত করতো।
ওইসব ফলাফল সুইডিশ ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনসহ বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
মি. কের এসব অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যা করার মতো এখনও কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর খুঁজে পাননি।
তিনি বলেছেন যে, রোগীদের এসব অভিজ্ঞতার কারণ খুঁজে বের করা বা ব্যাখ্যা করা তার গবেষণার মূল ফোকাস নয়।
“আমি উৎস ব্যাখ্যা করতে পারিনি এবং এই প্রক্রিয়াটি কখনোই রোগীর অভিজ্ঞতাকে বানোয়াট প্রমাণ করতে চায়নি,” তিনি বলেছেন।
মি. কের এখন নিউ ইয়র্ক রাজ্যের বাফেলোতে প্যালিয়েটিভ কেয়ার সেবা দেয় এমন একটি সংস্থার প্রধান নির্বাহী।
প্যালিয়েটিভ কেয়ার হলো ক্যান্সার বা হার্ট ফেইলিউরের মতো গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ চিকিৎসা সেবা।
কের বলেছেন সম্পর্কগুলো নানাভাবে ফিরে আসে।
মি. কের-এর বই, ‘ডেথ ইজ বাট এ ড্রিম: ফাইন্ডিং হোপ অ্যান্ড মিনিং অ্যাট লাইফস এন্ড’, ২০২০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল এবং বইটি ১০টি ভাষায় অনূদিত হয়।
তিনি তার গবেষণা এবং জীবনে সায়াহ্নে শেষ সময়ের অভিজ্ঞতার অর্থ সম্পর্কে বিবিসি নিউজ ব্রাজিলের সাথে কথা বলেছেন।
এত বছর পর, আপনি এই অভিজ্ঞতাগুলো থেকে কী জানতে পেরেছেন।
“মৃত্যু সময় আমরা মানুষের যে শারীরিক ক্ষয় হতে দেখি, আমি মনে করি মৃত্যু তার চেয়েও বেশি কিছু। মৃত্যুর সময় মানুষের সুবিধার জায়গাটা বদলে যাবে, উপলব্ধির জায়গায় পরিবর্তন আসবে এবং এর মধ্যে এমন কিছু উপাদান যুক্ত হয় যা জীবন সম্পর্কে ভীষণ ইতিবাচক করে তোলে।”
“মৃত্যু আপনাকে জীবনের এক প্রতিবিম্বের সামনে দাঁড় করায়। মানুষ তখন তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর ফোকাস করে, যা জীবদ্দশায় তাদের সবচেয়ে বড় অর্জন। আর সেটা হলো তাদের সম্পর্কগুলো।”
“আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই ভাবনা প্রায়শ খুব অর্থপূর্ণ এবং শান্তিদায়ক উপায়ে ফিরে আসে, যা জীবনকে সার্থকতা দেয় এবং ফলস্বরূপ, মৃত্যুর ভয় কমে যায়।”
“আমরা যেটা মনে করি, মানুষ যখন শেষ সময়ের মুখোমুখি হয় তখন তারা ক্রমেই বাড়তে থাকা মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যায়। আমরা প্রায়শ সেটা দেখতে পাই না৷”
Leave a Reply