সারাক্ষণ ডেস্ক
গণতন্ত্র ও সুশাসন নিশ্চিত না করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ আর ফাইভ পার্সেন্ট অবৈধ ডামি সরকারের পতন কোনভাবেই ঠেকানো যাবেনা’ বলে সতর্ক করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি। আজ বেলা ১২ টায় বিজয়নগরস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেন দলের নেতারা।
অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, আমদানি-রপ্তানির নামে ডলার পাচার ও উচ্চ-দ্রব্যমূল্যে জনগণের চরম ভোগান্তির প্রতিবাদে এই মিডিয়া ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে এবি পার্টি। মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন দলের আহ্বায়ক সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু ও পার্টির অর্থ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম এফসিএ। এসময় নেতৃবন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পার্টির যুগ্ম আহবায়ক বিএম নাজমুল হক, যুগ্ম সদস্যসচিব ও দফতর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, মহানগর উত্তরের আহবায়ক আলতাফ হোসাইন সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
ব্রিফিংয়ে সোলায়মান চৌধুরী আরও বলেন, দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে এটা সত্য কিন্তু আসলে কি উন্নয়ন হয়েছে? নাকি উন্নয়নের নামে লুটপাট হয়েছে! সেটা একটা বিরাট প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, পাচটি ধানে যদি একটি চাল উৎপাদন হয় তাকে আমরা কি উন্নয়ন হিসেবে গ্রহণ করবো? কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জের নামে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে, যা সরকারের বিভিন্ন সিন্ডিকেট সদস্যরা করেছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, দেশের মানুষ কাজ পাচ্ছে না অথচ প্রতিবেশী একটি দেশের হাজার হাজার মানুষ এখানে অবৈধভাবে কাজ করছে, দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক গুলো জবর দখল করে দলীয় লোকজনের মধ্যে বন্টন করা হয়েছে। যার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিলো জনগণের আমানত যেনতেন ভাবে নিজেদের পকেটে ঢুকানো। তিনি বলেন, রিজার্ভ আজ শুন্য হতে চলেছে। দেশ আজ অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার চোরাবলিতে আটকে গেছে। অর্থনৈতিক এই সংকটে দেশের সবাইকে তিনি সচেতন ভুমিকা রাখার আহবান জানান।
মিডিয়া ব্রিফিংয়ে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, এই সরকার কম গণতন্ত্র বেশি উন্নয়নের শ্লোগান দিয়ে দেশের মানুষ ও বুদ্ধিজীবী মহলকে বোঝাতে চেয়েছেন তারা দেশকে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডের মতো উন্নত দেশে পরিণত করবেন। তাদের কাছে গণতন্ত্র, মানবাধিকার গুরুত্বপূর্ণ নয়, তথাকথিত উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ।
বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের চিত্র তুলে ধরে জনগণকে ধোকা দিয়ে নিজেদের সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে সরকার দলীয় লোকজন ও কিছু আমলা। প্রকৃতভাবে এখন আমরা কি দেখতে পাচ্ছি, দেশে রিজার্ভের পরিমাণ এসে দাড়িয়েছে ১৩ বিলিয়ন ডলারে, যদিও সরকার বলছে এর পরিমাণ ১৮ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আইএমএফ সহ আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমুহ বলছে ব্যবহার যোগ্য রিজার্ভ রয়েছে ১৩ বিলিয়ন ডলার।
তিনি বলেন, বহু বছর ধরে দেশে ঘাটতি বাজেট দেয়া হচ্ছে, ব্যাংকগুলো আজ লুটপাট হয়ে গিয়েছে। সিপিডি বলছে ৯২ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লুটপাট হয়েছে ২৪ টি পার্টিকুলার অনিয়মের মাধ্যমে যা বাংলাদেশের ব্যাংকের গোচরে হয়েছে। খেলাপি ঋণ এখন দাড়িয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকার উপরে যা ২০০৮ সালে ছিলো ২২ হাজার কোটি টাকা।
এই সরকার ক্ষমতা অবৈধভাবে আঁকড়ে থাকার সুবিধার্থে সরকারি চাকুরীজীবিদের খুশী রাখতে তাদের বেতন ভাতা বাড়িয়েছে। শত শত কর্মকর্তাদের বসিয়ে রেখে জনগণের টাকায় বেতন দেয়া হচ্ছে যাদের কোন কাজ নেই। বিদ্যুৎখাতের লুটপাটের বিষয়েতো পৃথিবীতে অনন্য রেকর্ড গড়ার মত। এই সকল অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের মূল কারণই হচ্ছে একটি অনির্বাচিত দখলদার সরকারের ক্ষমতায় বসে থাকা। তিনি বলেন, রিজার্ভের পতন ও ডলারের দরপতনের সাথে সাথে এই অবৈধ ডামি সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে উঠেছে।
সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে আমিনুল ইসলাম এফসিএ বলেন, দেশের অর্থিক সংকট শুরু হয়েছে রাজনৈতিক ভাবে এর সমাধানও রাজনৈতিক ভাবে হতে হবে। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ২০১০ সালে শেয়ার বাজার লুটপাট করা হয়েছে যার ফলে দেশের মানুষের কান্না আমরা দেখতে পেয়েছি। বর্তমান সকল আর্থিক সংকট এই ধরনের রাজনৈতিক লুটপাটের মাধ্যমেই হয়েছে। কাজেই পরিকল্পিত ভাবে যারা দেশের মানুষের শেয়ারবাজারের টাকা, ব্যাংকের টাকা, ঋণের টাকা লুটপাট করেছে তাদের পতন ছাড়া সংকট উত্তরণের কোন উপায় নাই।
ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির সিনিয়র সহকারী সদস্যসচিব আব্দুল বাসেত মারজান, যুবপার্টির সদস্যসচিব শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, যুবপার্টি মহানগর উত্তরের আহবায়ক হাদিউজ্জামান খোকন, এবি পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক গাজী নাসির, যুগ্ম সদস্যসচিব কেফায়েত হোসেন তানভীর, আহমেদ বারকাজ নাসির, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম নান্নু, যুবপার্টি মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব সেলিম খান, যুবপার্টি মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব শাহিনুর আক্তার শীলা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মশিউর রহমান মিলু, শরণ চৌধুরী, আমেনা বেগম, সুমাইয়া শারমিন ফারহানা সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
Leave a Reply