মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৩৬ অপরাহ্ন

পুতিন ও পাশ্চাত্যের উপর “শারীরিক আক্রমণে”র ষড়যন্ত্র করছেন

  • Update Time : বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ৭.৩০ পিএম

সারাক্ষণ ডেস্ক

ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়া পশ্চিমা বিশ্বের উপর “শারীরিক আক্রমণ” চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশনস হেডকোয়ার্টারসের (জিসিএইচকিউ) প্রধান এমএস কিস্ট-বাটলার এ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। যখন ব্রিটিশ ও আমেরিকান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মস্কো ও বেজিংয়ের দ্বৈত হুমকি উন্মোচন করছেন, তখন সে সতর্কবাণী উচ্চারিত হল।

অ্যান কিস্ট-বাটলার ব্রিটেনের সিগন্যালস ইন্টেলিজেন্স অপারেশনসের নেতৃত্ব দিতে গত মে মাসে নিযুক্ত হন। তিনি তাঁর প্রথম বড় ধরনের ভাষণে ক্রেমলিনের অত্যাসন্ন হুমকি এবং যুক্তরাজ্য ও এর মিত্রদের উপর চীনের আরোপিত এক ভয়াবহ ঝুঁকির বিষয়গলো গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন।

জিসিএইচকিউ ডিরেক্টর বার্মিংহামে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের এক সমাবেশে বলেন যে, মস্কো কেবল সাইবারস্পেসে হামলা চালানোর বাইরেও এগিয়ে যাওয়ার দিকে দৃষ্টি রাখছে বলে তাঁর এজেন্সি বিশ্বাস করে। “সিগন্যালস এজেন্সি সাইবার হামলা চালানো এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের উপর নজরদারি ও নাশকতা চালানোর জন্য রুশ গোয়েন্দা সার্ভিস ও প্রক্সি গ্রুপগুলোর মধ্যে বর্ধিত মাত্রায় সংযোগ স্থাপন নিয়ে ক্রমশই উদ্বিগ্ন।”

কিস্ট-বাটলার বলেন, মস্কো সাইবার হামলাকারী দলগুলোকে “লালন-পালন ও উৎসাহিত” করছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে দৃশত পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধে দৈহিক হামলাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করছে। এজেন্সির ১০৫ বছরের মধ্যে তিনিই প্রথম এ পদের দায়িত্ব পালন করছেন।

গত সপ্তাহে লন্ডনে এক অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এক ব্রিটিশ ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউটরগণ রুশ আধা-সামরিক সংগঠন ওয়াগনার গ্রুপের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ আনেন।

সাইবারইউকে কনফারেন্সে ভাষণ দিতে গিয়ে এমএস কিস্ট-বাটলার বলেন, “পুতিন উক্রাইনের জনসমষ্টিকে তাঁর বশ্যতাস্বীকারে বাধ্য করার সর্বোচ্চ লক্ষ্য পিছ পা হননি।

তিনি আরও বলেন, কিয়েভের প্রতি যুক্তরাজ্যের সমর্থন “সুদৃঢ়”ই রয়ে গেছে। ব্রিটিশ গোয়েন্দারা দেশের সাইবার প্রতিরক্ষা-ব্যবস্থা জোরদার করে যাচ্ছেন।

পশ্চিমা সংগঠনগুলোকে হামলার লক্ষ্যস্থলে পরিণত করে থাকে এমন সাইবার গ্যাংগুলোকে আশ্রয়দানের দায়ে রাশিয়াকে দীর্ঘকাল ধরে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এসব গ্যাংকে রাশিয়া নির্বিবাদেই অত্যাধুনিক হ্যাকিং চালাতে দেয় বলে সেই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

গত সপ্তাহে ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি এক র‍্যানসম আদায়কারী গ্রুপ লকবিটের হোতা হিসাবে এক রুশ নাগরিক দিমিত্রি খোরোশেভের নাম উল্লেখ জানায়। এ গ্রুপটি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শত শত লক্ষ পাউন্ড চুরি করেছিল।

রয়েল মেইল গত বছর লকবিটের এক হামলার শিকারে পরিণত হয়। রাশিয়াভিত্তিক ঐ গ্রুপটি চিঠিপত্র ও পার্শেলকে বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে পোষ্টাল সার্ভিসের সামর্থ্যকে অচল করে দিয়েছিল। এর আগে লকবিট লন্ডনের তালিকাভুক্ত কার ডিলারশিপ পেড্রাগনকেও হামলার শিকারে পরিণত করে। গোষ্ঠীটি পেন্ড্রাগনের ২০০ কর্মস্থল জুড়ে কম্পিউটারগুলোকে লক করে দেয় এবং সেগুলো আনলক করার জন্য ৬ কোটি পাউন্ডের র‍্যানসম দাবী করে। পাশ্চাত্যে দৈহিক হামলা চালানো পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি রাশিয়ার বৈরিতা বৃদ্ধিরই এক লক্ষণ হবে।

তিনি বলেন, চীনই ব্রিটেনের প্রতি সবচেয়ে বড় হুমকি। এটি হল “যুক্তরজ্যের প্রতি এক সত্যিকারের ও ক্রমবর্ধমান সাইবার ঝুঁকি”।

এমএস কিস্ট-বাটলার বলেন, যুক্তরাজ্য জলবায়ু পরিবর্তন বা আর্টিফিসিয়েল ইন্টেলিজেন্স সেফটির মত “পারস্পরিক সুবিধাজনক” ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে আলোচনা করতে রাজী হয়েছে, তবে তিনি একথাও বলেন যে, “গণপ্রজাতন্ত্রী চীন আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের প্রতি এক গুরুতর ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।

তিনি বলেন, চীন “এর নিজস্ব অনুকূলে” বিশ্ব-প্রযুক্তির মানদণ্ড নির্ধারণ করতে চাচ্ছে। দেশটি “পরবর্তী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে এর আধিপত্য তুলে ধরতে চায়”। চীনকে নিয়ে এ সতর্কবাণী আসার দিন কয়েক আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঠিকাদার এক হ্যাকার হামলার কবলে পড়েন বলে খবর বেরোয়। বেজিংকে এ হামলার জন্য দোষারোপ করা হয়। ২,৭০, ০০০ জন বর্তমান ও সাবেক সামরিক কর্মীদের বেতনের তথ্য এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ভোল্ট তাইফুন নামে অভিহিত এক হ্যাকিং গ্রুপের মাধ্যমে এর গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে অনুপ্রবেশের জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালানোর দায়ে চীনকে অভিযুক্ত করেছে।

হোয়াইট হাউসের ন্যাশনার সাইবার ডিরেক্টর হ্যারি কোকার সতর্ক করে দেন যে, কোন সংর্ঘষের সময় যুক্তরাষ্ট্রের গতিশীলতায় বাধাদানের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক অবকাঠানোর ভয়াবহ ক্ষতি সাধন করতে চীন এর ইতিপূর্বে মোতায়েন-রাখা হ্যাকিং করার সরঞ্জামগুলোকে কাজে লাগাতে পারে। তিনিও সাইবারইউকে-তে উপস্থিত ছিলেন।

জিসিএইচকিউর সাইবার আর্ম ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি সেন্টারের চিফ এক্সিকিউটিভ ফেসিলিটি ওসওয়াল্ড বলেন, অত্যাবশ্যক নেটওয়ার্কগুলোকে ঝুঁকির মুখে ধরে রাখতে চীন যে মরিয়া তা নিয়ে স্পষ্ট সতর্কবার্তা হয়েছে। আর যুক্তরাজ্যের অত্যাবশ্যক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ সতর্কবার্তাকে উপেক্ষা করতে পারে না।

হংকংয়ের পক্ষে গুপ্তবৃত্তির দায়ে সোমবার তিন ব্যক্তি অভিযুক্ত হওয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রী লর্ড ক্যামেরন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূতকে এক বৈঠকে তলব করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, “সরকার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় একথা জানাচ্ছে যে, সাইবার হামলা, গুপ্তচরবৃত্তির যোগাযোগ সংক্রান্ত খবর এবং কার্য উদ্ধারের জন্য পুরস্কার ঘোষণাসহ যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে চীনের আচরণের সাম্প্রতিক ধরন গ্রহণযোগ্য নয়।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024