শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩২ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৬০)

  • Update Time : রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

গিরিয়া

মুর্শিদাবাদ হইতে প্রায় পঞ্চদশ ক্রোশ উত্তরে এবং বর্তমান জঙ্গী- শুর উপবিভাগের নিকট, একটি বিশাল প্রান্তর ভাগীরথীর সলিল-প্রবাহ দ্বারা দ্বিধা বিভক্ত হইয়া বিরাজ করিতেছে। এই প্রান্তরের সাধারণ নাম গিরিয়া। ইহার বক্ষঃস্থিত গিরিয়ানামক একটি প্রসিদ্ধ পল্লী হইতে উক্ত প্রান্তরের নামকরণ হইয়াছে। যদিও এই বিশাল প্রান্তর ভাগীরথীর উভয় তীরবর্তী হওয়ার দুইটি পৃথক্ প্রান্তর বলিয়া বোধ হয়, তথাপি ইহা একই নামে অভিহিত হইয়া আসিতেছে। সম্ভবতঃ গিরিয়া বাতীত অন্য কোন প্রসিদ্ধ স্থান ইহার নিকটে না থাকায়, ভাগীরথীর উভয়তীরস্থ চারি পাঁচ ক্রোশব্যাপী প্রান্তরের উক্ত নাম হইয়া থাকিবে। কিন্তু কখনও কখনও ভাগীরথীর পশ্চিম তীরবর্তী প্রান্তরকে সূতীর ময়দানও কহিয়া থাকে।

সূতী ভাগীরথীর পশ্চিম তীরের একটি প্রসিদ্ধ স্থান; সেই জন্য তাহাকে সূতীর ময়দান কহে। পশ্চিম পারের প্রান্তরকে সময়ে সময়ে স্বতীর ময়দান বলিলেও, দুই প্রান্তরই সাধারণতঃ গিরিয়া প্রান্তর নামে কথিত হয়। গিরিয়া প্রান্তর ভাগীরথীর পবিত্র সলিল দ্বারা সিক্ত হইলেও, তাঁহার চঞ্চলগতিপ্রভাবে স্থানে স্থানে ছিন্ন ভিন্ন হইয়া গিয়াছে। এই বিশাল প্রান্তর দুই বার নরশোণিতদ্বারা রঞ্জিত হইয়াছিল। যাতা পুণ্যসলিলা ভাগীরথীর পূতধারাপ্লাবনে পবিত্রীকৃত হইয়া থাকে, দুই বার তাহা নররুধিরধারায় কলঙ্কিত হয়। মুর্শিদাবাদে গিরিয়ার ন্যায় বিশাল প্র ন্তর আর নাই। এই জন্য ইহা খৃষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে বারম্বর মহাসমর-ক্রীড়ার রঙ্গভূমি হইয়া উঠে। সুপ্রসিদ্ধ পলাশী- প্রান্তর হইতেও গিরিয়ার আয়তন বৃহৎ।

গিরিয়ার বিস্তৃত সমরক্ষেত্রকে কোন ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদের পাণিপথ বলিয়া অভিহিত করিয়া- ছেন। সুবৃহৎ পাণিপথক্ষেত্র যেরূপ ভারতসাম্রাজ্যের রাজধানী দিল্লী নগরীর নিকটে অবস্থিত, গিরিয়ার বিশাল রণভূমিও সেই রূপ বঙ্গরাজ্যের রাজধানী মুর্শিদাবাদ হইতে অধিক দূর নহে। পাণিপথে যেরূপ মোগল- সাম্রাজ্যস্থাপনের সূচনা ও মহারাষ্ট্রীয় শক্তি চূর্ণ বিচূর্ণ হইয়া যায়, গিরি- য়ায়ও সেইরূপ আলিবদ্দী খাঁর রাজ্যপ্রাপ্তি ও মীরকাসেমের বাঙ্গলা হইতে চিরবিদায় সংঘটিত হয়। পলাশীর ন্যায় গিরিয়াও মুর্শিদাবাদের একটি স্মরণীয় স্থান। উভয়েই মুর্শিদাবাদ হইতে প্রায় সমদূরবর্তী এবং এই দুইটি প্রান্তর ব্যতীত মুর্শিদাবাদের আর কোন স্থল প্রকৃত সমরক্ষেত্রে পরিণত হয় নাই।

পলাশীতে ইংরেজরাজত্বের সূচনা হস; কিন্তু গিরিয়াতে তাহার পথ এক রূপ নিষ্কণ্টক হইয়া যায়। উধূয়ানালায় (উদয়নালা) মীর কাসেমের সৈন্য সর্ব্বতোভাবে বিধ্বস্ত হইয়া গেলেও তথার প্রকৃত যুদ্ধ সংঘটিত হয় নাই। মীরকাসেমের সৈন্যের সহিত ইংরেজদিগের শেষ যুদ্ধ গিরিয়াতেই হইয়াছিল। উধুয়ানালায় ইংরেজেরা চৌৰ্য্যবৃত্তি অবলম্বনে মীরকাসেমের শিবির আক্রমণ করিয়া, তাহা ছিন্ন ভিন্ন করিয়া ফেলেন। সুতরাং গিরিয়ার পর তাঁহাদের মধ্যে যে আর প্রকৃত যুদ্ধ হয় নাই, ইহা অনায়াসে বলা যাইতে পারে। পলাশীর ন্যায় গিরিয়াও বাঙ্গলার ইতিহাসে একটি শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করিয়া রাখিবে।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024