শ্রী নিখিলনাথ রায়
গিরিয়াপ্রান্তর পূর্ব্ব-পশ্চিমে চারি ক্রোশের অধিক হইবে এবং উত্তর দক্ষিণে খামরা হইতে সূতী পর্যন্তও প্রায় চারি ক্রোশ। গিরি- স্নার স্থাননির্ণয় লইয়া নানা লোকে নানা কথা বলিয়া থাকেন। টিফেন- খেলার ইহাকে ভাগীরথীর পূর্ব পারে নির্দেশ করিয়াছেন। অৰ্ম্মে গিরিয়া প্রান্তরকে পশ্চিমতীরস্থ বলিয়াছেন।। রেনেলের কাশী মবাজার দ্বীপের ‘মানচিত্রে গিরিয়া গ্রাম পূর্ব্ব পারে ও সিরিয়াসমরক্ষেত্র পশ্চিম পারে নিদ্দিষ্ট হইয়াছে। ১৮৫২ খৃঃ অব্দ হইতে ৫৫ অব্দ পর্যন্ত জরিপ- বিভাগকৃত মুর্শিদাবাদ জেলার মানচিত্রে ও বর্তমান সময়ে গিরিয়াগ্রাম ভাগীরথীর পূর্ব পারেই আছে এবং বর্তমান গিরিয়াগ্রাম যে স্থলে অব- স্থিত, সেস্থান কখনও ভাগীরথীর গর্ভস্থ হয় নাই।
কিন্তু এক্ষণে ভাগী রখী তাহার প্রান্তদেশ দিয়া প্রবাহিত হইতেছেন। কালে সিরিয়া যে ভাগীরথী গর্ভস্থ হইবে না, এ কথা কে বলিতে পারে? এই ভিন্ন ভিন্ন মতের সামঞ্জস্ত করা দুরূহ নহে। পূর্ব্বের বিবরণ এবং বর্তমান সময়ের অবস্থানুসারে ইহা স্থির সিদ্ধান্ত হয় যে, গিরিয়াগ্রাম বরাবরই ভাগীরথীর পূর্ব্ব পারেই অবস্থিত রহিয়াছে। কিন্তু ভাগীরথীর উভয়তীরবর্তী বিস্তৃত প্রান্তর গিরিয়াপ্রান্তর নামে অভিহিত হওয়ায়, কেহ কেহ গিরিয়া- প্রান্তরকে কেবল পশ্চিমতীরস্থ বলিয়াছেন। কিন্তু উভয়তীরবর্তী প্রান্তরের নামই গিরিয়া। যাঁহারা গিরিয়াপ্রান্তরকে ভাগীরথীর, পশ্চিম- তীরে নিদ্দেশ করিয়াছেন, তাঁহারা আলিবন্দীর সহিত সরফরাজের যুদ্ধ- প্রসঙ্গে সে কথার উল্লেখ করেন।
আলিবর্দ্দদী পশ্চিম তীরে অবস্থান- করায় এবং প্রথমেই পশ্চিম পারে যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ায়, তাঁহারা সেই জন্ম কেবলই পশ্চিম পারের কথা লিখিয়াছেন। কিন্তু আলিবদীর যুদ্ধও উভয় পারেই হইয়াছিল। আবার আলিবদ্দীর যুদ্ধস্থল হইতে মীরকাসেমের যুদ্ধস্থল স্বতন্ত্র। এই সকল স্থানের এক্ষণে অনেক পরিবর্তন ঘটিয়াছে। আমরা দুই যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত মৰ্ম্ম প্রদান করিয়া কোন্ কোন্ স্থানে কিরূপভাবে যুদ্ধ হইয়াছিল এবং তাহাদের এহ্মণেই বা কিরূপ পরিবর্তন হইয়াছে, তাহার একটি বিবরণ প্রদান করিতেছি।
গিরিয়ার প্রথম যুদ্ধ নবাব সরফরাজখ। ও আলিবদ্দী খাঁর মধ্যে সংঘটিত হয়। নবাব সরফরাজ খাঁকে সিংহাসনচ্যুত করিয়া আলি- বন্দীকে বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার একেশ্বর করিবার জন্য সরফরাজের মন্ত্রী হাজী আহম্ন্দ, জগৎশেঠ ফতেচাঁদ ও রায়রায়ান আলমচাঁদ প্রভৃতি যে বড়যন্ত্রের সূচনা করেন, গিরিয়াযুদ্ধে তাহার অভিনয় শেষ হয় এবং নবাব সরফরাজকে চিরদিনের জন্ম মরধাম পরিত্যাগ করিতে হইয়া- ছিল। আলিবর্দ্দী খাঁ পাটনা হইতে মুর্শিদাবাদাভিমুখে ধাবিত হইয়া রাজমহল, ফরকা ও পরে স্বতীর নিকট ভাগীরথীর মোহনার নিকটস্থ শাহ মোর্তাজা হিন্দীর সমারিস্থল হইতে জঙ্গীপুরের নিকট বালিঘাটা পর্যন্ত।
Leave a Reply