শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৬৩)

  • Update Time : বুধবার, ২২ মে, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

তাঁহার সমাধি অদ্যাপি বর্ত- মান আছে। সরফরাজের সহিত আলিদ্দীর যে যুদ্ধ হর, তাহা দিরিয়া আমের নিকট এবং ভাগীরথীর পূর্ব তীরে। এক্ষণে তাহার ভিন্নদাশ ভাউরগীর পশ্চিম তীরে ও কিয়দংশ তাহার গর্ভস্থ হইয়াছে, অরণিরাংশ অভাপি পূর্ব্ব পারেই অবস্থিত রহিয়াছে। গওস খাঁ নন্দলালের সৈরুদিগকে সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করিয়া ফেলেন, নন্দলালও ইহজীবনের লীলা শেষ করিতে বাধ্য হয়। গওস খাঁ তৎপরে প্রভুর সাহায্যের জন্ত গিরিয়াভিমুখে যাত্রা করেন। কতক দূর অগ্রসর হইয়া তিনি জানিতে পারেন যে, তাঁহার প্রভু বন্দুকের গুলির আঘাতে হস্তিপৃষ্ঠে শায়িত হইয়াছেন।

তখন তিনি অনন্তোপার হইয়া স্বীয় পুত্রস্বর মহম্মদ কুতুব ও মহম্মদ পীরকে আহবান করিয়া যাহাতে আলিবর্দীকে সম্পূর্ণরূপে বাধা প্রদান করিতে পারেন, তাহার জন্য পরামর্শ করিলেন। তাঁহারা কাপুরুষের ন্যায় পলায়ন করা অপেক্ষা যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণবিসর্জন করিতে কৃতসঙ্কল্প হইলেন এবং আপনাদিগের সৈন্য সমবেত করিতে লাগিলেন; কিন্তু তাহাদের অধিকাংশই সরফরাজের মৃত্যুশ্রবণে ভগ্নোৎসাহ হইয়া মুর্শিদাবাদ অভিমুখে ধাবিত হইয়াছিল। যাহারা অবশিষ্ট ছিল, গওস খাঁ তাহাদিগকে লইয়া হস্তিপৃষ্ঠে আরোহণ পূর্ব্বক আলিবন্দীর সৈন্যসাগর মথিত করিবার জন্য অগ্রসর হইলেন।

তাঁহার বীর পুত্রদ্বয়ও পিতার পথের অনুসরণ করেন। তাঁহাদের তরবারিচালনে আলিবর্দীর সৈন্যগণ অত্যন্ত ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠিল। গওস খাঁ আলিবন্দীর গোলন্দাজ সেনাপতি ছেদন হাজারীর একটি বন্দুকের গুলিতে আহত হইয়া যেমন হস্তিপৃষ্ঠ হইতে অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণ করিতে, ‘যাইতেছিলেন, অমনি আরও দুইটি গুলি আসিয়া তাঁহাকে ভূতলশায়ী করিয়া ফেলে। কুতুব ও পীরের তরবারিচালনে ছেদন হাজারী বিশেষরূপে আহত হন, পরে অব্যর্থ গুলির আঘাতে পিতার পশ্চাৎ পশ্চাৎ সেই পিত্রাদেশ-পরায়ণ পুত্রদ্বয়ও ইহজগৎ হইতে চিরবিদায় লইতে বাধ্য হন।

যে স্থানে তাঁহাদের পবিত্র দেহ নিপতিত হইয়াছিল, সেই স্থানে তাঁহাদিগকে সমাহিত করা হয়। কিন্তু গওস খাঁর গুরু সা হায়দরী নামে জনৈক ফকীর তাঁহাদিগের মৃতদেহ গিরিয়া- হইতে উত্তোলন করিয়া ভাগলপুরে লইয়া যান এবং তথায় তাঁহা- দিগকে পুনঃসমাহিত করেন। সা হায়দরী ভাগলপুরেই বাস করিতেন, সিয়াধর্ম্মের প্রতি তাঁহার অত্যন্ত অনুরাগ ছিল। সা হায়দরী একসময়ে গওস খাঁকে কোন সাংঘাতিক রোগ হইতে মুক্ত করায়, তিনি তাঁহার শিষ্যত্ব ও সিয়াধৰ্ম্ম গ্রহণ করেন। গওস খাঁর মৃত্যুশ্রবণে সা হায়দরী মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হইয়া আলিবদ্দীকে যৎপরোনাস্তি ভৎসনা করিয়াছিলেন। আলিবর্দ্দদী তাঁহার কথার প্রতিবাদ করিতে সাহস করেন নাই।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024