শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে কোনও প্রকার আপোস করবে না

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪, ৭.২৭ পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ৮ম জাতীয় সম্মেলনে গৃহীত নতুন কর্মসূচি ঘোষণা এবং নতুন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির পরিচিতি বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নির্মূল কমিটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা পরিষদের নবনির্বাচিত সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। তিনি সংবাদ সম্মেলনে নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদকে পরিচয় করিয়ে দেন। নতুন কর্মসূচির বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করেন সংগঠনের নবনির্বাচিত সভাপতি শহীদজায়া শিক্ষাবিদ শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, সংগঠনের অন্যতম উপদেষ্টা অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, নির্বাহী সভাপতি কাজী মুকুল, সাধারণ সম্পাদক নাট্যজন আসিফ মুনীর, সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল ও যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ব্লগার লেখক মারুফ রসূল।

নির্মূল কমিটির নবনির্বাচিত সভাপতি শহীদজায়া শিক্ষাবিদ শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী যেকনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি অতীতে যেভাবে সোচ্চার ছিল তেমনি ভবিষতেও থাকবে। ’৭২-এর সংবিধান পুনপ্রবর্তন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে নির্মূল কমিটি কোনও প্রকার আপোস করবে না।’

নির্মূল কমিটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন আরও বেগবান করার জন্য সম্মেলনে নতুন কর্মসূচি যেমন আমরা গ্রহণ করেছি, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও ঢেলে সাজিয়েছি। ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত ৭ম জাতীয় সম্মেলনে নির্বাচিত ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির শতকরা ৬০ ভাগ সদস্যকে নতুন কমিটিতে রাখা হয়নি তাদের বয়সোচিত মন্থরতা কিংবা অন্যান্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ার কারণে, যাদের একজন স্বয়ং আমি। আমরা আগামীতে সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবে ৮ম জাতীয় সম্মেলনে নির্বাচিত ৯১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করব।

নির্মূল কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন হয় কিন্তু আলামতের অভাবে তারা অনেক সময় সুষ্ঠু বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। আমরা নির্মূল কমিটির চিকিৎসা সহায়ক কমিটি গঠন করেছি, যাতে ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যর্থতার কারণে ভিকটিমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়।’

নির্মূল কমিটির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক তাপস কান্তি বল বলেন, ‘মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ভিকটিমদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের জন্য নির্মূল কমিটির আইন সহায়ক কমিটি কাজ করছে। আগামীতে জেলায় জেলায় আইন সহায়ক কমিটি তৃণমূল পর্যায়ে নির্যাতিত মানুষকে আইনি সহযোগিতা প্রদান করবে।’

নির্মূল কমিটির নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদের ভবিষ্যত কর্মসূচিগুলোর মধ্যে অনলাইনবিষয়ক কয়েকটি কর্মসূচির প্রতি গুরুত্বারোপ করে সংগঠনের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ব্লগার লেখক মারুফ রসূল বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মের নামে যেভাবে উগ্রবাদ ছড়ানো হচ্ছে, ফেসবুক ইউটিউবে ওয়াজের নামে যেভাবে ধর্ম ও জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত হচ্ছে না। এ বিষয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগের দাবিতে রাজপথে যেমন আন্দোলন অব্যাহত রাখা হবে, তেমনি অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রমও গ্রহণ করবে নির্মূল কমিটির নব-নির্বাচিত কেন্দ্রীয় পরিষদ। কারণ, যথাযথ কাউন্টার ন্যারেটিভ ছাড়া উগ্রবাদী গোষ্ঠীর ছড়ানো ধর্মান্ধ ও আধিপত্যবাদী এসব বক্তব্যের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া একা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণেই নির্মূল কমিটির নতুন কার্যনির্বাহী পরিষদ এ বিষয়ে অনলাইনে ও অফলাইনে সমানভাবে তৎপর থাকবে।’

মারুফ রসূল আরও বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে একপেশে ব্যবহার চলছে গত কয়েক বছর ধরে, তা ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য একটি অশনী সংকেত বলে মনে করছে নির্মূল কমিটির নব-নির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদ। ওয়াজের নামে যারা ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, যারা মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে অপমান করে নানা সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট তৈরি করছে, বাঙালি সংস্কৃতির শাশ্বত উপাদানগুলো নিয়ে কটূক্তি করছে, তাদের বিরুদ্ধে এই আইনের কোনো কার্যকর প্রয়োগ আমরা দেখতে পাই না। উল্টোদিকে ‘ধর্মানুভূতির’ ধুয়া তুলে নানা সময় সাংবাদিক-ব্লগার-শিক্ষার্থী-সংস্কৃতিকর্মীসহ মুক্তচিন্তার মানুষদের হয়রানি করা হচ্ছে। নির্মূল কমিটি অতীতের ৫৭ ধারা এবং পরবর্তীতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হয়রানির শিকার ভিকটিমদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং তাঁদের আইনি সহায়তা দিয়েছে।’ তিনি, সরকারের কাছে মুক্তিসংগ্রামের ঐতিহাসিক আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র এবং নথিপত্রগুলোকে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানান।মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে নির্মূল কমিটির নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদের আগামী ৩ বছরের গৃহীত কর্মসূচি উপস্থাপন করেন সাধারণ সম্পাদক নাট্যজন আসিফ মুনীর।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন ও এর কার্যকারিতার গুরুত্বারোপ করে নির্মূল কমিটি উপদেষ্টা পরিষদের নবনির্বাচিত সদস্য বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বক্তব্য প্রদান করেন। নির্মূল কমিটি উপদেষ্টা পরিষদের নবনির্বাচিত সদস্য অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন নির্মূল কমিটির আন্দোলনের গুরুত্ব এবং এর ভবিষ্যৎ কর্মপরিধি নিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন।সংগঠনের নবনির্বাচিত নির্বাহী সভাপতি কাজী মুকুল ৮ম জাতীয় সম্মেলনে নির্বাচিত ৯১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির নাম ঘোষণা করেন।

সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের নির্মূল কমিটির সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশিত তিনটি প্রকাশনা প্রদান করা হয়।১) নির্মূল কমিটির ৮ম জাতীয় সম্মেলনের স্মরণিকা, ২) একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনের সচিত্র ইতিহাস এবং ৩) ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০০১ পরবর্তী সহিংসতা: সাহাবুদ্দিন চুপ্পু কমিশনের প্রতিবেদনের সারাংশ।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী আবুল বারক আলভী, শিক্ষাবিদ মমতাজ লফিত, মানবাধিকার নেতা কাজল দেবনাথ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূ-তত্ত্ববিদ মো. মকবুল-এ ইলাহী চৌধুরী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান শহীদ। কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক শওকত বাঙালি, বিভাগীয় সম্পাদক সাংবাদিক হারুন আর রশিদ, সহসাধারণ সম্পাদক চলচ্চিত্রনির্মাতা ইসমাত জাহান, ছাত্রনেতা পলাশ সরকার, ছাত্রনেতা আশেক মাহমুদ সোহান।

এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন,সহসাংগঠনিক সম্পাদক সমাজকর্মী কামরুজ্জামান অপু, ছাত্রনেতা হারুণ অর রশিদ, ছাত্রনেতা অপূর্ব চক্রবর্তী, অর্থ সম্পাদক লেখক আলী আকবর টাবি, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক শরীফ নুরজাহান, সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সাংবাদিক সুশীল মালাকার, প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদক সাংবাদিক আবু সালেহ রণি, সাংস্কৃতিক সম্পাদক চলচ্চিত্রনির্মাতা পিন্টু সাহা, পাঠাগার সম্পাদক সমাজকর্মী হাসনাত আব্দুল্লাহ বিপ্লব, দফতর সম্পাদক সাংবাদিক সাইফ রায়হান, সহদফতর সম্পাদক সমাজকর্মী শিমন বাস্কে, কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য সমাজকর্মী পূর্ণিমা রানী শীল, চারুশিল্পী ফাইজা আহমেদ, সমাজকর্মী সুমনা লতিফ, ডা. সাদমান সৌমিক সরকার, মানবাধিকারকর্মী ফয়সাল হাসান তানভীর, সমাজকর্মী প্রাণতোষ তালুকদার, সমাজকর্মী আবদুল হালিম বিপ্লব ও অনলাইন এক্টিভিস্ট এইচএম রিয়াজ আবীর প্রমুখ।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024