সারাক্ষণ ডেস্ক
তাপদগ্ধ জ্যৈষ্ঠের প্রথম পক্ষে এসে প্রবল গতিতে ধেয়ে আসছে মৌসুমের প্রথম ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। উত্তাল হচ্ছে সাগর। গত বছরের ডিসেম্বর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় ছিল মিগযাউম। অতঃপর পাঁচ মাস সাগর ছিল নিরুত্তাল। পুনরায় চোখ রাঙাচ্ছে বড় ঘূর্ণাবর্ত।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দক্ষিণ মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি আগামীকাল শুক্রবারের পর তার গতিপথ চূড়ান্ত করতে পারে। এটি বাংলাদেশের খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোতে প্রচণ্ড গতিতে আঘাত হানতে পারে বলে এখনই ধারণা করা হচ্ছে। এ সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার; যা দমকা হাওয়াসহ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি যদি জোয়ারের সময় উপকূলে আঘাত হানা শুরু করে, তবে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকাগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে।
আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি ধীরে ধীরে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের দিকে সরে আসছে। শক্তি বাড়িয়ে এটি কাল শুক্রবার শেষ রাতের দিকে নিম্নচাপ এবং শনিবার এটি উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে এসে পৌঁছাবে। সেদিনই প্রবল সাইক্লোনে রূপ পরিগ্রহ করতে পারে। এর ব্যাপ্তি এবং স্থায়িত্ব অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের থেকে প্রবল হতে পারে। গতকাল রাত ১০টায় লঘুচাপ কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩৫ থেকে ৪৫ কিলোমিটার, যা ৫৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আজ বৃহস্পতিবার গতিবেগ ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তার পরদিন এটির গতি বাড়তে পারে ৭০ কিলোমিটারে। তবে লঘুচাপটি এখনো বাংলাদেশের উপকূল থেকে অনেক দূরে এবং তামিলনাড়ু ও অন্ধ্র উপকূলের কাছাকাছি থাকায় দেশের মাছ ধরা ট্রলার ও নৌকাগুলোর জন্য কোনো সতর্কতা নেই।
এদিকে জাপানের কৃত্রিম ভূউপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র থেকে মেঘের শীর্ষের তাপমাত্রা ও মেঘের গঠন বিশ্লেষণ করে কানাডার সাসকোচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ? বলেন, গতকাল বুধবার সকাল ৯টার পর দক্ষিণ মধ্য বঙ্গোপসাগরে ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে (ব্লেয়ার বন্দরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে) একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ ২৬ মে সকাল ৬টার পর থেকে রাত ১২টার মধ্যে বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলা থেকে শুরু করে; চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার মধ্যবর্তী উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করতে পারে। তিনি আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় বৃত্তের অগ্রবর্তী অংশ উপকূলীয় এলাকায় প্রবেশ করতে পারে সকাল ৬টার পর থেকে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাব্য সময় ২৬ মে দুপুর ১২টার পর থেকে বিকাল ৬টার মধ্যে। ঘূর্ণিঝড় বৃত্তের পেছন দিকের অর্ধেক অংশ পুরোপুরি স্থলভাগে প্রবেশ করতে রাত ১২টা পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়টি যদি জোয়ারের সময় উপকূলে আঘাত হানা শুরু করে, তবে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকাগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোর উপকূলে আঘাতের সময় ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার; যা দমকা হাওয়াসহ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্ট (ইসিএমডব্লিউএফ) জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার বা শুক্রবারের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণে সুন্দরবনের কাছে ২৬ থেকে ২৭ মে আঘাত হানতে পারে। আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। লঘুচাপটি আগামীকাল শুক্র বা শনিবার নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। পরে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ভারতের আবহাওয়া বিজ্ঞানী এম শর্মা জানিয়েছেন, শনিবার ঘূর্ণিঝড় রিমালে পরিণত হতে পারে। লঘুচাপটির সর্বোচ্চ শক্তি সঞ্চয় করার সম্ভাবনা রয়েছে। কোনো কোনো মডেল বলছে, এটির গতিপথ হতে পারে বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলের দিকে। আবার কোনো কোনো মডেল বলছে, পশ্চিমবঙ্গে এটি আছড়ে পড়তে পারে। উপকূলে আসতে আঘাত করবে আগামী ২৬ মের দিকে। সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, লঘুচাপটি আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হবে। শনিবার থেকে দেশের প্রায় সব জায়গায় কম-বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।’ আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, বর্তমান যে প্রেডিকশন, তাতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ, মিয়ানমার বা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা এই অঞ্চলের দিকেই এর গতিপথ। তবে এর গতিপথ ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তিত হচ্ছে। আজ বা কাল শুক্রবারের মধ্যে লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। পরে ২৪ মে রাতে বা ২৫ মে সকালের দিকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত এটার গতিপথ পরিবর্তিত হচ্ছে, রাতে একটা গতিপথ থাকছে, আবার সকালে আরেকটা হচ্ছে; অর্থাত যতক্ষণ পর্যন্ত না নিম্নচাপে রূপ নেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তার আগের সব গতিপথ পরিবর্তিত হবে। যখন নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে, তখন গতিপথ স্থির হবে। তখন স্পষ্টভাবে বলা যাবে, এটা কোন এলাকায় বা স্থানে আঘাত হানতে পারে।
‘রেমাল’ অর্থ কী
আরবসাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোনসংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেওয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) অধীন জাতিসংঘের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগরতীরের এই ১৩টি দেশ হলো—বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, সৌদি আরব ও ইয়েমেন। নামের ক্রম অনুযায়ী এবার বঙ্গোপসাগরে কোনো ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে তার নাম হবে ‘রেমাল’। ‘রেমাল’ নামটি ওমানের দেওয়া। রেমাল শব্দটি আরবি, যার অর্থ ‘বালি বা বালুকণা’।
সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় মিগযাউম
এদিকে সর্বশেষ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় মিগযাউম, যা পরে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করে। সে ঝড়ের তেমন কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়েনি। ২০২০ সালের ২০ মে দেশের উপকূলে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। বেশ বিধ্বংসী ছিল ঘূর্ণিঝড়টি। তবে সুন্দরবনের কারণে সে যাত্রায় বহুলাংশে রক্ষা পেয়েছিল দেশের উপকূল। এর আগে ২০০৯ সালে এই মে মাসেই ২৫ তারিখে সুন্দরবনে আঘাত হেনেছিল প্রলয়ংকরী আইলা।
চলতি বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্স যাচ্ছেন এবং সেই সফরে এয়ারবাস ক্রয়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সই হবে বলে আশাবাদী ঢাকাস্থ ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই। বুধবার ঢাকায় নিজ বাসায় এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ফ্রান্সসহ তিন দেশের বহুজাতিক মালিকানাধীন এয়ারবাস এডি থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার পাশাপাশি একই প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট নেয়ার আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত প্যারিস সফরের আগেই এটি চূড়ান্ত করতে নীতিগতভাবে সম্মত দুই দেশ। স্বল্পসংখ্যক মিডিয়া প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপে ফ্রান্সের দূত দুই দেশের সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে কথা বলেন। ফরাসি রাষ্ট্রদূত জানান, দুই দেশের সম্পর্কের কৌশলগত সহযোগিতায় মহাকাশ ও আকাশপথে সংযুক্তি, প্রতিরক্ষা, ইন্টারনেট ও সাইবার সংক্রান্ত বিষয়গুলো রয়েছে। এয়ারবাস থেকে ১০টি উড়োজাহাজ ও স্যাটেলাইট ক্রয় বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, গত ছয় মাসে এয়ারবাস গ্রুপের নির্বাহী কমিটির তিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাংলাদেশে এসে উড়োজাহাজ ও স্যাটেলাইটের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। দুটি বিষয়েই আলোচনা ভালোভাবে এগুচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন প্যারিস সফরে এ বিষয়গুলো নিয়ে চুক্তি চূড়ান্ত হবে। তাদের প্রস্তাবকে সেরা প্রস্তাব দাবি করে তিনি বলেন, এ কারণেই আমরা বেশ আশাবাদী।
বলা যেতে পারে যে ফ্রান্সের কৌশলে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয় ইইউ’র কৌশল। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের বিষয়ে ব্যবসা, বাণিজ্য, কারিগরি ও শৈল্পিক আবিষ্কারের বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি অন্য জোটের চেয়ে আলাদা। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বেশ সহযোগিতামূলক। সাংঘর্ষিক নয়। এখানে চীন, ভারত ও অন্য দেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দৃষ্টিতে সবার সঙ্গে সহযোগিতা ও সংলাপ বজায় রাখা জরুরি। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ের নিবিড় সহযোগিতার ধারাবাহিকতায় কয়েক মাসের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে আসছেন ফ্রান্সের মন্ত্রিসভার একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য। ভ্রমণ, ব্যবসা ও পড়াশোনা সব মিলিয়ে ফ্রান্স যেতে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসার আবেদনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগের চেয়ে এখন অনেক বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী ফ্রান্সে যাচ্ছেন। এই বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে। তারা রাজধানী ছাড়াও চট্টগ্রামে যাবেন।
গাজীপুরের ধীরাশ্রম স্টেশনে তুরাগ এক্সপ্রেসের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে জয়দেবপুর-ঢাকা রেলরুটের একটি লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধীরাশ্রম রেল স্টেশনে এই ঘটনা ঘটে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান টংগী রেলস্টেশন মাস্টার রাকিবুর রহমান।
ট্রেনের যাত্রী ও রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ঢাকাগামী তুরাগ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ধীরাশ্রম স্টেশনে পৌছার পর ট্রেনের দ্বিতীয় বগিটি লাইনচ্যুত হয়। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় ঢাকা-জয়দেবপুর রেলরুটের একটি লাইন বন্ধ হয়ে গেছে।
জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের প্রধান স্টেশন মাস্টার হানিফ আলী বলেন, তুরাগ এক্সপ্রেস ট্রেনের দুই নম্বর বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। বগি উদ্ধার করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ চলছে।
ঝিনাইদহের মহেশপুরে গত ২৮ এপ্রিল ৩ কোটি টাকার স্বর্ণের বারসহ দুই ভাইকে গ্রেফতার করে ৫৮ বিজিবি। সীমান্তরক্ষী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সীমান্ত দিয়ে পাচারের সময় এ স্বর্ণ জব্দ করা হয়। এর কিছুদিন আগে ১৬ এপ্রিল মহেশপুরেই সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা মূল্যের ৪০টি স্বর্ণের বার জব্দ করেন বাহিনীটির সদস্যরা। ৪ কেজি ৬৩৩ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এ ঘটনায়ও দুজনকে আটক করা হয়। প্রায় প্রতি মাসেই জেলার সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের সময় স্বর্ণ ধরার এমন ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা।
একই পরিস্থিতি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়াসহ সীমান্তবর্তী প্রতিটি জেলার। প্রতি বছর সীমান্তবর্তী এ জেলাগুলো থেকেই ভারতে পাচারের সময় স্বর্ণ আটক হয় সবচেয়ে বেশি। আবার রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিমানবন্দরেও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোর মাধ্যমে দেশে পাচারকৃত স্বর্ণ আটক হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, সিংহভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এসব স্বর্ণ অবৈধভাবে দেশে আনা হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পাচারের উদ্দেশে।
যশোরের নিউমার্কেট এলাকায় গত ১৮ মার্চ সোয়া তিন কেজি ওজনের ৩২টি স্বর্ণের বারসহ দুজনকে আটক করে পুলিশ। আটককৃত স্বর্ণের বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। পুলিশ জানায়, এ স্বর্ণ যশোর হয়ে ভারতে পাচারের জন্য ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশে স্বর্ণ চোরাচালান উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এখন পর্যন্ত এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে উড়োজাহাজের ক্রু, বিমানবালা, বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্তরের কর্মী থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোর বিভিন্ন স্তরের অনেক মানুষ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে।
সর্বশেষ দেশে স্বর্ণ চোরাচালান বেড়ে যাওয়ার ঘটনাকে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে ভারতে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। বিভিন্ন সময় তার বিরুদ্ধে স্বর্ণ পাচারসহ চোরাচালান কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। কয়েক বছর আগেও ইন্টারপোলের ওয়ান্টেড তালিকায় নাম ছিল তার।
প্রভাবশালীদের সংশ্লিষ্টতাই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাচালানের বড় হাব করে তোলায় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্যমতে, প্রতি বছর যে পরিমাণ স্বর্ণ পাচারের সময় আটক হয়, পাচার হয় তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। সীমান্ত ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এখন পর্যন্ত অনেক পাচারকারীকে ধরতে সক্ষম হলেও এর মূল হোতারা সবসময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে।
শুধু যশোরেই গত এক দশকে স্বর্ণ জব্দের ঘটনায় অন্তত ৬০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলার অর্ধেকের বেশি বিচারাধীন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিচার চলছে বছরের পর বছর ধরে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আসামিরা জামিনে রয়েছে। আবার এখন পর্যন্ত এসব মামলায় যাদের সাজা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকেই স্বর্ণ বহনকারী। এসব মামলার তদন্তেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এম ইদ্রীস আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘স্বর্ণ চোরাচালানসহ সব পুরনো মামলার কাজ শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছে বিচার বিভাগ। দ্রুতই অনেক স্বর্ণ চোরাচালান মামলার কাজ শেষ করা হবে। সাক্ষীর অভাবে এসব মামলার কাজ শেষ করতে বিলম্ব হচ্ছে। অনেক সময় তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে দেরি করেন। এ কারণেও বিচারে ধীরগতি রয়েছে।’
বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত স্বর্ণের প্রধান গন্তব্য ভারত। বর্তমানে বৈশ্বিক স্বর্ণ আমদানি ও স্বর্ণের গহনা রফতানি—দুদিক থেকেই দেশটির অবস্থান শীর্ষে। সেখানে প্রতিনিয়তই সম্প্রসারণ হচ্ছে স্বর্ণের কালোবাজার। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) গত বছর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, বিশ্বব্যাপী গৃহস্থালি পর্যায়ে স্বর্ণের সবচেয়ে বড় মজুদ রয়েছে ভারতে। দেশটির পরিবারগুলোর কাছে জমা স্বর্ণের পরিমাণ কমপক্ষে ২৫ হাজার টন। বিয়ে, ধর্মীয় উৎসব ও পারিবারিক নানা অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য দেশটিতে স্বর্ণের চাহিদা নিয়মিতভাবে বাড়ছে।
ক্রমবর্ধমান এ চাহিদা ভারতকে এখন বৈশ্বিক স্বর্ণ চোরাচালানের শীর্ষ গন্তব্য করে তুলেছে। দুই দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও শুল্ক গোয়েন্দাদের তথ্যমতে, ভারতে চোরাচালানকৃত স্বর্ণের বড় একটি অংশ আসছে দেশের প্রধান শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে।
ভারতের ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্সের তথ্য অনুযায়ী, চাহিদা অনেক বেশি হলেও দেশটিতে বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানি করতে হলে বড় অংকের শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। এ কারণে দেশটিতে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের অনেকেই এখন পণ্যটি চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। আর দেশটিতে চোরাচালানকৃত স্বর্ণের সবচেয়ে বড় উৎস এখন বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। ভারতে এখন পর্যন্ত আটক করা পাচারকৃত স্বর্ণের ৭৩ শতাংশই এসেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে। দেশটিতে চীন থেকে আসা স্বর্ণ চোরাচালান হচ্ছে মিয়ানমার হয়ে। আবার মিয়ানমারেও বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ স্বর্ণ চোরাচালান হচ্ছে। সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্য-আফ্রিকাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে পাচার হওয়া স্বর্ণের সবচেয়ে বড় করিডোর এখন বাংলাদেশ।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) মোট ২৭ কেজি ৭১৩ গ্রাম স্বর্ণ পাচারের সময় আটক করেছে বাহিনীটি। এর মধ্যে শুধু মার্চেই আটক হয়েছে ১৯ কেজি ৬৮৭ গ্রাম। ২০২৩ সালে বাহিনীটির সদস্যদের হাতে ২৬০ কেজি ৫৬৭ গ্রাম স্বর্ণ আটক হয়েছে।
শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতেও এ দেশ থেকে পাচার হওয়া প্রচুর পরিমাণ স্বর্ণ আটক হচ্ছে। এর বেশির ভাগই আটক হচ্ছে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোর সীমান্তসংলগ্ন এলাকায়। গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া ১০ কেজি ৭৩ গ্রাম স্বর্ণ জব্দের তথ্য জানান পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার হোরান্দিপুর আউটপোস্টের বিএসফ জওয়ানরা।
যশোর সীমান্তবর্তী ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার আংরাইলে জানুয়ারিতে ৩০টি স্বর্ণের বার ও বিস্কুট জব্দ করে বিএসএফ। আটককৃত স্বর্ণের পরিমাণ ৪ কেজি ৮২০ গ্রাম।
গত এক দশকে বাংলাদেশ প্রান্তে শুধু যশোরেই প্রায় দেড় হাজার কেজি স্বর্ণ জব্দ করেছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এর মধ্যে ২০২০ সালে ৪১ কেজি ৭২২ গ্রাম, ২০২১ সালে ১৩ কেজি ১৪৩, ২০২২ সালে ১৫০ কেজি ও ২০২৩ সালে ৫০ কেজির বেশি স্বর্ণ জব্দ করা হয়। জেলায় এখন পর্যন্ত স্বর্ণের সবচেয়ে বড় চালান আটক হয় ২০১৮ সালের ৯ আগস্ট। শার্শার শিকারপুর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা ৭২ কেজি ৪৫০ গ্রাম ওজনের ৬২৪টি স্বর্ণবার জব্দ করেন। মামলাটি তদন্ত করে নয়জনের নামে চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি। প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে এর বিচার চলছে। মামলার আসামিদের মধ্যে চারজন জামিনে। বাকি পাঁচ আসামি এখনো পলাতক।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, ‘স্বর্ণ চোরাকারবারিদের রিমান্ড চেয়ে চালান দেয়া হয়। রিমান্ডে বহনকারীরা মুখ না খোলায় এবং পর্যাপ্ত তথ্য না দেয়ায় আড়ালে থাকা ব্যক্তিরা পার পেয়ে যায়। এছাড়া তথ্য পেলেও পর্যাপ্ত প্রমাণ ও সাক্ষীর অভাবে বের হয়ে যায় অপরাধীরা।’
৪৯ বিজিবি যশোর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আহমেদ হাসান জামিল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চোরাচালান রোধে বিজিবি সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে আমাদের গোয়েন্দা দল কাজ করছে। এর সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের ছাড় দেয়া হবে না। বিজিবি অভিযান চালিয়ে স্বর্ণ জব্দ করে এবং আসামির বিরুদ্ধে মামলা দেয়। এরপর এসব মামলার তদন্তভার পুলিশের ওপর বর্তায়। নেপথ্যে থাকা চোরাকারবারিদের সামনে আনবে তদন্তকারী ইউনিট। এর পরও বিজিবি সজাগ ও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’
সাম্প্রতিক সময়ে বৈধ চ্যানেলের পরিবর্তে হুন্ডি-হাওলায় প্রবাসীদের অর্থের বড় অংশ দেশে আসার অভিযোগ উঠেছে। আবার স্বর্ণ চোরাচালানেও লেনদেনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে হুন্ডি-হাওলা। অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি চোরাচালান কার্যক্রমেরও প্রধান ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে লেনদেনের অবৈধ ও অপ্রাতিষ্ঠানিক মাধ্যম হুন্ডি-হাওলা। এমপি আনোয়ারুল আজীমের বিরুদ্ধে হুন্ডির কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলাও এখন ভারতে স্বর্ণ চোরাচালানের একটি বড় রুট হয়ে উঠেছে। এখানেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্বর্ণ পাচার করতে গিয়ে প্রতি বছর প্রচুর ‘বহনকারী’ ধরা পড়ছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, যারা ধরা পড়ছে, তারা মূলত কিছু অর্থের বিনিময়ে স্বর্ণ পাচার করে। সীমান্ত ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মূলত তারাই আটক হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত চোরাকারবারিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সাঈদ মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান বলেন, ‘স্বর্ণ চোরাকারবারিরা আমাদের আওতাধীন কোনো এলাকা দিয়ে যাতে স্বর্ণের অবৈধ চালান পাচার করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা সতর্কতা অবলম্বন করছি। কোনো চোরাচালান হতে না দেয়ার জন্য আমরা নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই।’
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন যশোর প্রতিনিধি আব্দুল কাদের ও চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি রিফাত রহমান)
আনোয়ারুল আজীমকে ধরিয়ে দিতে ২০০৭ সালে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করেছিল বাংলাদেশ পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে দেশের আদালতেও তখন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। এরপরও তিনি পলাতক থাকায় ২০০৮ সালে চুয়াডাঙ্গার একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাঁকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা জমা দেন, তাতে তিনি নিজের বিরুদ্ধে ২১টি মামলা থাকার কথা উল্লেখ করেন। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মামলাগুলোর কোনোটিতে খালাস, কোনোটিতে অব্যাহতি পান তিনি, সে বিষয়টিও হলফনামায় তুলে ধরেন। এখন ভারতের কলকাতায় তাঁর খুন হওয়ার ঘটনার প্রেক্ষাপটে দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, এর পেছনে সীমান্তে চোরাচালান-সংক্রান্ত বিরোধের বিষয় থাকতে পারে।
আনোয়ারুল আজীমের বিরুদ্ধে এমন নানা অভিযোগের মধ্যে তিনি কীভাবে তিন দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন; তাঁকে দেশের অন্যতম একটি প্রধান দল আওয়ামী লীগই–বা কীভাবে মনোনয়ন দিয়ে আসছে, এখন এসব প্রশ্ন সামনে এসেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, রাজনৈতিক দলের দুর্বলতার কারণেই নানা ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ ওঠার পরও একজন ব্যক্তি সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ পান। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দলের দুর্বলতা আছে বলেই ২১টি মামলা থাকার পরও আনোয়ারুল আজীমকে বারবার মনোনয়ন দিতে হয়েছে।
আনোয়ারুল আজীমের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার বিষয়েও নানা আলোচনা ছিল। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন বিএনপি নেতা আবদুল মান্নানের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন আনোয়ারুল আজীম। সেই আবদুল মান্নান যখন ১৯৯৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন, তখন তাঁর সঙ্গে আনোয়ারুল আজীমও আওয়ামী লীগে আসেন।
তবে আনোয়ারুল আজীমকে ঘিরে যেসব প্রশ্ন উঠছে, সেগুলো আমলে নিতে চান না আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব। দলটির সূত্রগুলো বলছে, আনোয়ারুল আজীম রাজনীতির নানা সিঁড়ি পার হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন। ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, যশোর ও খুলনার কিছু অংশ একসময় সন্ত্রাসের জনপদ ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেটা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারকে সহযোগিতা করেছিলেন আনোয়ারুল আজীম। এটাও তাঁকে সংসদের টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, হুন্ডি ব্যবসা, সোনা চোরাচালানসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি ছিল ২০০৮ সাল পর্যন্ত। এ কারণে তিনি ২০০৮ সালে দলীয় মনোনয়ন পাননি বলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ইন্টারপোল থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ফৌজদারি মামলার পরও কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে থাকে। সেই যুক্তি কতটা গ্রহণযোগ্য, সে প্রশ্নও তোলা যেতে পারে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচনী আইনেই অনেক ধোঁয়াশা রয়েছে, সে কারণে বিভিন্ন অভিযোগ থাকার পরও আনোয়ারুল আজীমের মতো কেউ কেউ বারবার সংসদ সদস্য হয়ে আসছেন।
Leave a Reply