সারাক্ষণ ডেস্ক
শিশুদের সাথে যারা মেলামেশা করেন, তারা যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারেন। এ কাজে পরিবারের প্রাপ্তবয়স্কদের একটি পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব রয়েছে যেখানে শিশুরা নিরাপদ ও নিজেকে ভয়মুক্ত মনে করতে পারে। এমনকি নির্দিদ্ধায় তাদের প্রতি যে আচরণ হয়েছে সেটা যেন পরিবারের বড়দেরকে বলতে পারে। এমনটি মনে করেন, ক্লিনিকাল মনোবিজ্ঞানী পূজা হেমন্ত।
“শিশু যৌন নির্যাতন সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরী। এবং এটি ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই ঘটে। সিঙ্গাপুরে ২৫২টি শিশু যৌন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নির্যাতনের ঘটনা জানতে বেশি সময় লাগে যখন অপরাধী পরিবারের সদস্য হয়, অথবা প্রথম নির্যাতনের সময় শিশুর বয়স কম থাকে।
প্রারম্ভিক শিক্ষা থেকে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধের জন্য শিক্ষা প্রদান করা উচিত, বলেছে সিঙ্গাপুর শিশু সমাজের গবেষণা এবং সমর্থন বিভাগের পরিচালক এবং গ্রুপ লিডার লিন জিয়াওলিং। এ ধরনের শিক্ষার মাধ্যমে শিশুরা তাদের শরীরের নিরাপত্তা সম্পর্কে আরো সজাগ হয়, তারা অন্যায় কাজগুলো চিনতে এবং নির্যাতনের কথা বলতে বেশি সাহসী হয়। এই শিক্ষার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তাদের ব্যক্তিগত শরীরের অংশগুলির সঠিক নাম জানানো, সঠিক ও ভুল কার্যক্রমের পার্থক্য করা, এবং কিভাবে সহায়তা চাওয়া যায় তা বোঝানো।
পূজা বলেছেন, “শারীরিক লক্ষণ থাকতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ সময়, ভুক্তভোগীরা স্পষ্ট নির্যাতনের লক্ষণ দেখায় না।” তাদের অস্বস্তি তাদের আবেগ ও আচরণে পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিফলিত হতে পারে যেমন বেশি কান্না, একা সময় কাটানো, বা আত্মহানি বা আত্মহত্যার প্রবণতা।
“সংবেদনশীলভাবে জিজ্ঞাসা করুন কে তাদের বিরক্ত করছে, জিজ্ঞাসা করুন কেউ কি তাদের আঘাত করছে বা অস্বস্তি দিচ্ছে, এবং তারা হ্যাঁ বললে জিজ্ঞাসা করুন তাদের প্রতি যৌন নির্যাতিত হচ্ছে কি না,” ? “সামাজিক সংস্কারের কারণে যৌনতা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য অস্বস্তিকর মনে হতে পারে, কিন্তু আমরা যদি চাই যে শিশু খোলামেলা ও ঘটনার কথা বলুক, তাহলে আমাদের খোলামেলা এবং সংবেদনশীলভাবে এটি নিয়ে কথা বলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”
কিভাবে সাহায্য করবেন
সমাজ ও পরিবার উন্নয়ন মন্ত্রণালয় পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী, প্রাপ্তবয়স্করা শিশুদের কথাকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করুণ। “একটি সন্দেহজনক নির্যাতনের ঘটনা রিপোর্ট করা কঠিন হতে পারে, কিন্তু এটি আগেই প্রতিহত করা ভালো,” এ কথা বলেন মনোবিজ্ঞানি। যারা প্রকাশ করতে দ্বিধা করে তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করা এবং তাদের গতি অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। ঘটনাটি প্রকাশের জন্যে শিশুদের কখনও কখনও সময় এবং নীরবতা প্রয়োজন, এ কারণে প্রাপ্তবয়স্করা দ্রুত প্রশ্ন করতে যাবেন না যা শিশুদের ভয় দেখাতে পারে।
“তাদের আত্মমূল্যায়নকে নিশ্চিত করা প্রয়োজন, শিশুরা যে কাজ বা খেলাগুলো ভালোবাসে সেগুলি তাদের করতে দিন এবং ধীরে ধীরে তাদের ঘটনার কথা বলাতে সাহায্য করার জন্য অন্যান্য উপায় খুঁজে বের করুন,” তিনি বলেন।শিশুরা যদি তাদের বন্ধুদের মাধ্যমে নির্যাতনের কথা জানে, তাদের শিক্ষক বা তাদের নিজস্ব বাবা-মায়ের কাছে রিপোর্ট করতে শেখানো উচিত। প্রাপ্তবয়স্কদের এমন প্রশ্ন এড়ানো উচিত যা শিশুদের মনে সন্দেহ জাগাতে পারে।
ডাক্তারদের শিশুর সাথে মেলামেশার সময় সংবেদনশীল হতে হবে যাতে মানসিক অস্বস্তি কম হয়, কিন্তু ঘটনা সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য যা চিকিৎসা মূল্যায়ন ও যত্ন নির্দেশ করে। তাছাড়া, পেশাদারদের সন্দেহ এবং প্রকাশগুলি তৎক্ষণাৎ রিপোর্ট করা উচিত, এবং নিশ্চিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা উচিত নয় যে নির্যাতন ঘটেছে কিনা।
মনোবিজ্ঞানিরা বলেন শিশুর ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পিতা বা অভিভাবককে সব সময় তাদরে প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে। এবং তাদের যে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে তার মাধ্যমে কীভাবে তারা নিজেকে যোগ্য করেছে এবং কিভাবে তারা ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি প্রতিরোধ করতে পারে সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।
Leave a Reply