সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০১:৫৫ অপরাহ্ন

আমাদের শিল্পের দিগন্ত

  • Update Time : রবিবার, ১০ মার্চ, ২০২৪, ৭.৩৭ পিএম

শিকোয়া নাজনীন

জোসেফ ব্রদস্কি তাঁর ‘লেস দ্যান ওয়ান’ রচনাতে বলেছেন, কবির জীবন বললে যত না বোঝায় তার চেয়ে কবির মৃত্যু কথাটার গভীরতা অনেক বেশি। জীবন ঝাপসা, অস্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট এবং আকারহীন, খানিকটা কবির মতোই চাপগ্রস্ত। সেই তুলনায় মৃত্যু অনেক বেশি গভীর, বহুদূর বিস্তৃত স্বাধীন, যা চেতনার মূলে গিয়ে হানা দেয়।

মৃত্যুর কারণে আমার কাছে প্রিয় কবি লোরকা। আমি কবি লোরকাকে প্রথম আবিষ্কার করি অন্ধকার তৃণপ্রান্তরে। যেন লোরকা জানতেন না তখনো সামনে যে- দিন আসছে তা তাঁকে আমূল বদলে দেবে। বলা হয়, কোনো এক অলীক উপায়ে তিনি তাঁর নিজের মৃত্যুর পূর্বদৃশ্য দেখতে পেতেন।

আমার আম্মা ছিলেন ইংগ্রিদ বার্গম্যানের মতো দেখতে। কিন্তু তাঁর ছিল স্কিৎজোফ্রেনিয়া অসুখ। তিনিও অনেকটা লোরকার মতো নিজের মৃত্যুদৃশ্য দেখতে পেতেন। তাঁর হৃদয় ছিল রুশ গল্পের ইভান উবিনির মতো একদম নিখুঁত একটা আদ্যন্ত মৌচাক। মৌমাছির গুঞ্জরণ ম-ম করতো তাঁকে ঘিরে। তাঁর ছিল মৌমাছিদের সাথে সখ্য। মৌমাছিদের প্রতি তাঁর এই আগ্রহের আতিশয্যের জন্য তাঁকে ডাকতে ইচ্ছে হতো শেষ মোহিকান। তাঁর দৃষ্টি ছিল অরণ্যের মতো আঁকাবাঁকা। কিন্তু মা ছিল তুন্দ্রা থেকে আগত এলিজি, যাঁর জীবনকে ঘিরে কোনো অরণ্যরোপিত হয়নি কোনোদিন। কেমন করে যেন শুধু ভালো মানুষ রুশ মেয়ের মতো কমলালেবু, আনারস, মুরগি, অলিভ তেল আর সেরেনাদ সঙ্গীত জড়িয়ে থাকত তাঁর দেহে। তিনি ব্যাপৃত থাকতেন নিরাসক্ত সময়ের বিবিধ বিচরণে। আমার বেড়ে ওঠার পৃথিবী – উত্তরে সুমেরু বৃত্তের ওপাশে, মাঝে মাঝে পাহাড়ে সেখানে ফুল ফোটে, সেই পাহাড়ের রঙ সাদা হলে বোঝা যায় মেঘবেরি আর বিলাবেরি ফুটেছে। শ্রাবণ মাসে যেখানে উইল্লো গুল্ম ফুটতে শুরু করে। তখন আমার আম্মার কথা মনে পড়ে।

আম্মা খুব ভোরবেলা যে-স্টেশনে আমাদের দু-বোনকে ট্রেনে তুলে দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই ট্রেন যাওয়ার কথা ছিল পিঙ্গল এক সবুজ দ্বীপে। কথা ছিল ট্রেন একটি নির্জন স্টেশনে আমাদের নামিয়ে দেবে আর আমরা দেখতে পাব বিরাটাকারের শৈলমালা। শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে এক প্রান্তিক স্টেশনে নেমে দেখি মেরুন রঙ রেলগাড়ি সব সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে। আম্মা বলেছিল, মাঝে মাঝে তুমি বর্ষায় দেখতে পাবে পাহাড়ে মেঘবেরি ফুটেছে। দেখতে পাবে পাটল বর্ণের পাহাড় কিংবা জেরিনিয়াম, সেখানে আমাকে পাবে তুমি। আমরা দেখলাম মেরুন রঙের একটা প্যাসেঞ্জার ট্রেন থেমে আছে। রাতদিন কয়লার ইঞ্জিনের ঘুসঘুসে ধোঁয়ায় রেড অক্সাইড জমে জমে বিমর্ষ ফিকে হওয়া ট্রেন। কিন্তু আম্মা কোথাও নেই।

১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর ময়নামতি পাহাড়ি জনপদের পোড়ামাটির অপূর্ব মন্দির, টেরাকোটা ধ্বংসাবশেষ নিয়ে থমকে থাকা পাঁচ হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস ফেলে এক বর্ষার ভিজে রাতে আব্বা ট্রেনে চেপে

 

আলোকচিত্রী: অজ্ঞাত, উনিশ শতকের কলকাতা

কলকাতায় গিয়েছিলেন। সেখানে মাঠের মধ্যিখানে প্রকাণ্ড ঝুরি-নামানো বটগাছের পাশেই বয়ে চলেছিল চূর্ণী নদী। ওপারে আড়ংঘাটা, ইতিহাসের পরিত্যক্ত বনজঙ্গল ঘেরা এক অচেনা ভূখণ্ডে জীবন শুরু করেছিলেন তিনি। আম্মার বাগানে নিশ্চয়ই পুষ্পময় বৃন্ত ঘিরে গুবরে পোকারা হাঁটাচলা করছিল তখনো। সেই তুন্দ্রায় ফুটতে শুরু করেছিল অজস্র বুনো মটর আর উইলো গুল্ম। ভার্জিনিয়া উলফ বলতেন – তাঁর অন্তর্নিহিত সত্তা ছিল দ্বিধাবিভক্ত। একটা ছিল সুমেরু রাত্রির বিষন্ন পৃথিবী- আমার আম্মার মতো। তাঁরও ছিল এক অলীক জানালা। সেখানে রাতের বেলা ঘুম

দেখতে পেতেন আশ্চর্যসব দৃশ্য। তার মধ্যে একটি ছিল রাশি রাশি তুষার দ্রবণে জড়ো হওয়া জিরানিয়ামের শত শত পোকা তাঁর শরীর বেয়ে ওপরে উঠে আসছে, মৌমাছিদের আগমনের প্রতীক্ষায় মগ্ন থাকতেন আম্মা। একদিন আমার সুমেরু রাত্রির অমৃত প্লাবন দ্রবীভূত হতে থাকে। বিমূর্ত রূপ কল্পনার প্রথম পাঠ আম্মার কাছ থেকে পাওয়া।

ছোটবেলায় আম্মার গ্রামের বাড়ির পথে দিগ্বিদিক উদ্বেলিত জারুলগাছে আচ্ছন্ন এক প্রান্তিক জনপদ দেখতাম। ঠিক পালামৌর মতো জঙ্গলে একদিন সাঁওতাল নারী দেখেছিলাম। মধুপুর, শিমুলতলা, রিখিয়া-গিরিডি হাজারীবাগের গল্প শুনেছি ছোট মামার কাছে, দেখেছিলাম জয়নুল আবেদিনের ছবি। রুক্ষ পাহাড়ি মাটির এক উজ্জ্বল দপদপে রঙ ছিল ছবিতে। গোলাপ সুন্দরীর নিবিড় অন্তর্জগতের বৃত্তান্ত শুনেছিলাম, তার ভৌগোলিক পটভূমি না থাকলেও সেই প্রকৃতির মতোই ছিল সেই গ্রাম। সেখানে দূরে পাহাড় ছিল, যেখানে লালমাটি ঘেরা পথে স্তন্যদানরত মা বসে থাকে উদাস। বাঁকবাহী লোক আসে। সেই থেকে এই ভূখণ্ড অমর হয়েছে আমার জীবনে। এক নকশাল তরুণের পায়ের গুলির ক্ষত থেকে রক্ত ঝরছিল সেদিন, অভ্রের গুঁড়া মেশা লাল কাঁকুরে ভূমিতে তার রক্তের দাগ পরে জয়নুলের ছবিতে আবিষ্কার করেছিলাম।

অনেকদিন পরে জেনেছিলাম, আমরা যাদের উপনিবেশ ছিলাম সেই ইংল্যান্ড ছিল আর্টলেস আইল্যান্ড। যে-ঘটনাপ্রবাহের ভেতরে আসলে আমাদের জীবন অজান্তেই বিলীন হয়েছিল। ব্রিটিশ রাজকর্মচারীর গেজেটিয়ারে অথবা এক নকশাল তরুণের দিনলিপির পাতায়, উনিশ শতকের ভ্রমণকাহিনিতে, অথবা নভেলে, সিনেমায় আমরা খুঁজতে শুরু করেছিলাম নিজেদের হারানো দেশ, হারানো ছবি। আমাদের দুর্ভাগ্য, সেই ঔপনিবেশিক শিল্পচৈতন্য আমাদের আরণ্যক চেতনাকে – আমাদের সহস্র বছরের শিল্পের ইতিহাসকে উপেক্ষা করেছিল।

এদেশে যন্ত্র এনেছিল ইংরেজ। বাষ্পীয় ইঞ্জিন দিয়ে সারাদেশে গঙ্গার জল প্রবাহিত করেছে, বাতি জ্বালিয়েছে তারা। এসব কাজের বিজ্ঞানবিদ্যার অনুশীলনের জন্য তাঁরা মেকানিক্স ইনস্টিটিউট নামে একটি বিদ্যালয় বানিয়েছিল। সেটি আদৌ শিল্পবিদ্যালয় ছিল না। তখন আমাদের হাজার বছরের শিল্পকলার পরম্পরা থাকলেও, মন্দিরে নগ্ন মূর্তির বিচিত্র বিভা দেখেও, আমাদের ঠিক শিল্পবোধ জন্মায়নি। আর ইউরোপ থেকে যে-সব ছবি তখন আসত সেগুলো ছিল জীবন্ত মানুষের আদলে গড়া। অবিকল প্রতিরূপ অংকনরীতি। সেগুলো খানিক অচেনা ছিল এদেশে। বুর্জোয়া পুঁজিপতিরা ঠিক করেছিলেন- শিল্পীরা কাজ করবে নামহীন, পরিচয়হীন। কারণ তারা ঈশ্বরের কাছে নিবেদিত। ভারতের ইলোরা গুহা যেমন পাহাড় কেটে মন্দির বানানো হয়েছিল। আর তার গায়ে ছিল সহস্র মূর্তি। কৈলাস মন্দির ছিল সারা পৃথিবীর বিস্ময়। মন্দির স্থাপত্য আর ভাস্কর্যে তা অবিস্মরণীয় সৃষ্টি। আট শতকের রাজা রাষ্ট্রকূট রাজা প্রথম কৃষ্ণ অকালবর্ষ শুভতুঙ্গের পৃষ্ঠপোষকতায় এই মন্দির নির্মাণ করেন। নির্মাতা প্রথম কৃষ্ণের নাম ইতিহাসে ঠাঁই পেলেও যে-স্থপতির কল্পনা থেকে এই বিস্ময়কর শিল্পশৈলী আর স্থাপত্য সৃষ্টি হয়েছিল তাঁর নাম কেউ জানতে পারেনি। ইলোরায় শুধু একটি তাম্রফলক পাওয়া গিয়েছিল। যেখানে এই অনামা স্থপতি বা মুখ্য শিল্পী জানিয়েছিলেন যে, এই অলৌকিক কাজ ঈশ্বরের করুণা ছাড়া সম্ভব নয়। তাঁকে দিয়ে ঈশ্বর এটা করিয়ে নিয়েছেন। তিনি কেউ নন। আসলে সমাজ তাঁর নাম জানতে দেয়নি।

একসময় বাঙালি হাওয়া বদল করতে পশ্চিমে যাওয়া বলতে বুঝতেন রাঢ় বাংলা সন্নিহিত বিহারের ছোট ছোট প্রদেশ। পাকুড় শিমুলতলা, গিরিডি, হাজারীবাগ, রাঁচি। রাঢ় বাংলার একেবারে গায়ে গায়ে ছিল বিহার প্রদেশের সাঁওতাল পরগণার পাকুড় রোডে ডক্টর হাবিবুল্লাহর বাড়ি। হাওয়া বদলাতে যাওয়ার জন্য একটা বাগানবাড়ি করেন তিনি। সারাবছর বাড়িটি খালি পড়ে থাকত। একচল্লিশ সালের দিকে জয়নুল আবেদিন গিয়েছিলেন সেখানে। দেখেছিলেন সাঁওতাল রমণী। জয়নুলের সাঁওতাল পরগণার ছবি ছিল রোমান্টিক। উত্তরকালে তিনি রেখা নির্ভরতার দিকে ঝুঁকেছিলেন, এর পূর্বাভাস ছিল জলরঙে আঁকা তাঁর সাঁওতাল দেহ কল্টুর বা পরিণাহ ঘিরে কাল মোটা রেখায়। জয়নুলের ছবিতে যদিও সাঁওতালরা মুগ্ধচোখে প্রকৃতি দেখতেন। কিন্তু তাদের কঠিন সংগ্রামময় জীবনে প্রকৃতির সৌন্দর্য আলাদা করে উপভোগের অবকাশ ছিল না।

দীর্ঘকাল ঔপনিবেশিক শাসনের আচ্ছন্নতা থেকে বিশ্ব একটি গ্রাম এই ধারণার জন্যে আমরা ইউরোপের নানা কিছুকে বিশ্বজনীন ভেবেছি। লন্ডন, নিউইয়র্ক, রোম, প্যারিসকে ভেবেছি শিল্পকলার আধুনিকতার দিগন্ত। এর আংশিক সত্য হলেও সেটি পরাধীন ঔপনিবেশিক দেশের শিল্পভাবনার মূল সংকট হয়ে দাঁড়াল। কারণ আমরা তাদের অনুসরণ করেছিলাম। একটি আখ্যানের ভেতরে যে আদর্শের হাতবদলে জীবনযাপন

ছবি-দ্য ইম্পে ফ্যামিলি ইন ক্যালকাটা, শিল্পী: জোহান জোফানি, ১৭৮৩

 

করছিলাম সেটি তখনই ছিল জীর্ণ, বিলুপ্তির পথে। এই দেশের টেরাকোটা বা পোড়ামাটির মূর্তির ইতিহাস উদ্ভট লেগেছিল ব্রিটিশদের। পাহাড়পুর মন্দিরের সম্ভার বা অজন্তা-ইলোরার স্থাপত্য ভাস্কর্য দেবদেবীর আখ্যান ছাড়া অন্য কোনো শিল্পমূল্য পায়নি। তখন সেখানে নতুন ছবির আবির্ভাব ঘটেছিল, যা ছিল চাক্ষুষ রূপ গড়নের প্রতিভাসে অম্লান।

 

ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতায় ইংরেজ পৃষ্ঠপোষকতায় মুঘল পরম্পরার উত্তরাধিকার ও ইউরোপীয় দৃষ্টিভঙ্গির সংশ্লেষে তখন নতুন এক শিল্পকলার সৃষ্টি হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাল শেষ হয়ে ব্রিটিশ রাজ কেবল শুরু হয়েছিল, কলকাতার নব্য বাঙালির ঘরে দেবদেবীর মূর্তির পাশে জায়গা করে নিচ্ছিল মহারানী ভিক্টোরিয়ার বাঁধানো ছবি।

ছবি-সারস পাখি, শিল্পী: শেখ জয়নুদ্দিন, ১৭৮০

আর ধীরে ধীরে এদেশে পাশ্চাত্য পরম্পরার শিল্পশৈলী হয়ে উঠল আরাধ্য। তেমন একটি সময়ে ইউরোপীয় শৈলীতে বাংলার পাখি এঁকেছেন পাটনা কলমের শিল্পী শেখ জয়নুদ্দিন। সঞ্জীবচন্দ্র তখন পালামৌ প্রদেশে যাচ্ছিলেন, আর উইলিয়াম হান্টার সাহেবকে যেতে হচ্ছিল জেলা কোষাগার হয়ে বীরভূম সিউরিতে। প্রবল দাবদাহের বসন্তে রুক্ষ প্রখরতার নবীন দৃষ্টির সামনে ফুটে উঠতে থাকে রাঢ়বঙ্গের উজ্জ্বল বর্ণময় প্রকৃতি। আমাদের অঞ্চলে পিডব্লিউডি – ইয়েলো সেই থেকে একটি ঔপনিবেশিক রঙ। সে বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডে যে-কটি দৃশ্যরূপের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য কায়েম হয়েছিল তার মধ্যে চায়ের ধোঁয়া আর রেলগাড়ির হুইসেলের মতোই ছিল সর্বত্রচারী এই পিডব্লিউডি ইয়েলো রঙ। অ্যালামাটির সঙ্গে কলিচুন মিশিয়ে তৈরি হতো এই রঙ। ক্রান্তীয় রোদের উষ্ণতায় কিছুদিন বাদেই বিবর্ণ হয়ে কালচে লাইকেন আর মলিন চুনবালির পলেস্তারার সঙ্গে মিলে এক বিচিত্র বর্ণাভা তৈরি হতো এর গায়ে। অপরাহ্ণের আলো-ছায়ায় সেসব ইমারত এখনো ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যকে মনে করায়। অজপাড়াগাঁয়ের পালামৌর মতো জঙ্গলে আজো এমন বিস্মৃতপ্রায় সরকারি বাংলো দেখতে পাওয়া যায়। আর সেখানে আমাদের বাংলায়

এই অত্যাশ্চর্য ভূ-দৃশ্যাবলি উইলিয়াম হজেস, টিলি ক্যাটেল আর টমাস ড্যানিয়েলের হাতে এভাবে আমাদের সুপ্রাচীন অরণ্যভূমি, ক্রান্তীয় জনপদ, বিচিত্র ধ্বংসাবশেষ, জলে প্রতিফলিত সুনীল এশীয় আকাশ, সালঙ্কারা রমণীর ছবি প্রশংসিত হতে থাকে।

ছবি-নৃত্যরত রমণী, শিল্পী- টিলি কেটল। ১৭৭২।

বাঙালি মুসলমানের কোনো মিথ ছিল না। বলা হতো, তারা ছিল গল্পের হাত থেকে মুক্ত। ধর্মের ইতিহাসের বাইরে তার পুরাকাহিনি নেই। রাম মহাভারত নেই। ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার কারণে মুসলমানদের মাঝে চিত্রকলার প্রচলন নেই। ইত্যাদি অনেক নেই এর মধ্যে একসময় বাঙালি দূর-ইতিহাসের রেখার মতো স্পষ্ট শরাঘাতে বিদ্ধ হয়ে ছবি আঁকতে শুরু করে। মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার পরম্পরায়, চৈনিক মোঙ্গল শিকড় থেকে মুঘল দরবারে যে-চিত্রকলা বিকশিত হয়েছিল তাতে ধর্ম গুরুত্ব পায়নি, কিন্তু পটে ভরা গল্প অবলোকনের সম্ভার ছিল। আকবর যেমন বলতেন- প্রতিটি সুঅঙ্কিত রেখাই আমাকে আল্লাহর কথা মনে করায়।

রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, বাংলা দেবভূমি নয়, তীর্থের ভার তার মৃত্তিকায় নেই, এ দেশ মানুষের দেশ। এমনকি অবনীন্দ্রনাথ তাঁর শিল্পের পথ খুঁজেছেন পুরাণ আর গাঁথিতে। আকবর থেকে শাহজাহান অবধি যে-চিত্রকলার স্ফুরণ ঘটেছিল, তা ছিল অভিনব। রাজা-বাদশাহরা গল্প শুনতে ভালোবাসতেন। তাদের সেই গল্পের জন্য সহস্র ছবি আঁকা হয়, হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে এসব অ্যালবামে ছবি আঁকে। মহাভারত, ভগবতের ছবি, গল্পের জন্য ছবি, জীবনের দৈনন্দিন ঘটনা থেকে ছবি – সেখানে ধর্মীয় কোনো কারণ উপস্থিত ছিল না। আর এসব ছবি কখনোই মুঘল চিত্রকলার বৈশিষ্ট্য ছিল না। সেসব ছিল লোকায়ত জীবনের ছবি। দেশচ্যুত বাবর পায়ের নিচে মাটি হারিয়ে ভারতে এসেছিলেন। তাঁর ছেলে হুমায়ুন শিশুপুত্র আকবরসহ জাহাঙ্গীরের সময়ে নতুন অবয়বে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য অর্জন করে। একটা দীর্ঘস্থায়ী পরম্পরার ইতিহাস তৈরি হয় তাতে। নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত মোঘলরা মূলত নতুন করে শেকড়ের সন্ধান করেছেন ভারতে, তারা ইতিহাস চর্চা করতে ছবি এঁকেছেন। ইতিহাস চেতনার কারণে তারা চিত্রকলার পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন বলে সেখানে একধরনের বাস্তব চেতনার সঞ্চারণ ঘটে।

ইউরোপে খ্রিষ্টানরা আর ভারতে হিন্দুরা ধর্ম প্রচারের জন্য শিল্পকে ব্যবহার করেছিল; কিন্তু মুসলমানদের ধর্মে নিরাকার ঈশ্বরের কোনো অবয়ব না থাকায় তাদের শুধু ইতিহাস আর জীবনের নিত্যনৈমিত্তিক গল্প ছিল ছবির প্রেরণা। ইতিহাস চেতনা থেকে তাদের ছবিতে একধরনের দিব্যলোকের অনুকল্প বিস্তার লাভ করে। এই উপমহাদেশে শিল্পে স্বভাবনিষ্ঠ চিত্রকলার বিবর্ধনে প্রথম প্রয়াসী হয়েছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীর। আর তাঁর চিত্রপটের আদর্শে কোনো কল্পপ্রতিম বস্তু বা গল্পের ইঙ্গিত ছিল না। তাঁর ছিল চাক্ষুষ জলজ্যান্ত এক বস্তুজগৎ। এমনকি ইন্দ্রিয়পরায়ণতা বা প্রত্যক্ষরূপ গড়নের চেতনা, আর প্রবল জীবনতৃষ্ণা এই উপমহাদেশে স্বভাবনিষ্ঠ চিত্রকলার জন্ম দেয়। যা চাক্ষুস বস্তুজগতের প্রতিনিধিত্ব করে। সেখানে মানুষের গল্প ক্ষীণভাবে থাকে কিন্তু বস্তুর উপস্থিতির আলেখ্যই গুরুত্বপূর্ণ।

অজন্তা, রাজপুত ও মুঘল চিত্রকলা নিয়ত বেড়ে উঠেছিল নগর সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে, যা ছিল বিচিত্র বিষয়ের সমাহারে বর্ণাঢ্য। এমন সেক্যুলার বা লোকায়ত চিত্রকলা পশ্চিমে কখনো ছিল না। আঠারো শতকেই কলকাতায় পাটনা-মুর্শিদাবাদ ফনকাররা তাদের ইংরেজ পৃষ্ঠপোষকদের জন্য আঁকা ছবিতে স্বচ্ছ রঙ ব্যবহার করেছিলেন। ব্রিটিশরা বলে থাকে, এই সময় ইংল্যান্ড থেকে চিত্রকরেরা এসে কলকাতার ফনকারদের স্বচ্ছ জলরঙের অঙ্কনরীতি শিখিয়েছিলেন- এই তত্ত্ব ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এমনকি এই ফনকাররা ন্যাচারালিজম পেয়েছিলেন ইংরেজদের কাছ থেকে এই তথ্যও ছিল প্রহসনমূলক। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ইংল্যান্ড ছিল সবচেয়ে নিচের সারির দেশ। উনিশ শতকেও ইংল্যান্ডে রাজ প্রতিকৃতি আঁকার জন্য ইউরোপের অন্য দেশ থেকে শিল্পী আনা হতো। বাংলার চিত্রকলার ধারায় পশ্চিমি অনুপ্রবেশ তবু স্বাস্থ্যকর ছিল। স্বভাবনিষ্ঠ চিত্রকলার বুনিয়াদ নির্মাণে পাটনা মুর্শিদাবাদ এবং কোম্পানি চিত্রকলা একটি পরম্পরার সিদ্ধি অর্জন করছিল। এদিকে কলকাতায় কালীঘাট আর বটতলার শিল্পী দেব-মহিমাকীর্তন দিয়ে তাদের চিত্রকলা শুরু করলেও অচিরেই তাঁরা প্রত্যক্ষ জগতের অবিসংবাদিত লিপিকার হয়ে উঠেছিলের। জীবনের বিপুল উৎকর্ণ আলোড়ন থেকে তাঁরা নিজেদের সরিয়ে রাখতে পারেননি। বস্তুত এই ছবির আখ্যানে তাঁরা দেবলোক থেকে মর্ত্যলোকে নেমে এসেছিলেন। বাংলার চিত্রপটকে বাংলার ভাষিক পরিসরের পটে না দেখলে বাঙালির চিত্রকলার বৈশিষ্ট্য বোঝা যায় না।

জয়নুল আবেদিন যখন ছবির জগতে আত্মপ্রকাশ করেন তখন বাংলায় চিত্রকলার দুটি ধারা বিদ্যমান ছিল। একদিকে অ্যাকাডেমিক ধারার অনুবর্তী যাঁরা হেমেন্দ্র মজুমদার, অতুল বসু, আর যামিনী প্রকাশের শিল্পরীতি; অন্যদিকে বাংলা ঘরানার স্বর্ণ কিরণ অবনীন্দ্রনাথ, নন্দলাল বসু। এঁরা ছিলেন অভিজাত শিল্পী। বাংলা তখন বহুজনের উজ্জ্বল দীপ্তিতে ভাস্বর। আর্ট স্কুল ছিল অ্যাকাডেমিক রীতির দুর্ভেদ্য দুর্গ। এর প্রাচীর ডিঙিয়ে জয়নুল আবেদিন নিরবচ্ছিন্ন বাংলার সজীবতার আলো-বাতাস বইয়ে দিয়েছিলেন। অ্যাকাডেমিক কেতায় শিল্পীদের ছবিতে নিরন্তর প্রাধান্য পেয়েছিল নিসর্গ দৃশ্য, নগ্ন নারী। যেহেতু মুষ্টিমেয় ক্রেতাদের মধ্যে দেশীয় রাজন্যবর্গ, জমিদার, উচ্চপদস্থ রাজপুরুষ বা বণিক এবং এই ক্রেতাদের রুচিমাফিক ছবি আঁকতে হতো। তারা এসব দৃশ্য ছাড়া ছবি কিনতেন না। ক্রেতার মনোরঞ্জনে শিল্পীরা বাধ্য ছিলেন। কিন্তু এর মধ্যে দিয়ে জয়নুল, কামরুল হাসানের ছবিতে এক ভিন্ন ধারা প্রবাহিত হয়েছিল। তাঁদের ছবিতে প্রাকৃতিক দৃশ্যও এসেছিল প্রত্যক্ষ জগতের বিশদ অনুভবের মধ্য দিয়ে।

ছবি- পাহাড়পুর বিহারের পোড়ামাটির ভাস্কর্য।

পাল চিত্রকলা থেকে কালীঘাটের পটের পরিসর অবধি যে-চিত্রকলা বাংলা ভাষার ভৌগোলিক বিস্তারে লালিত হয়েছে সেই চিত্রকলা উত্তর ভারতীয় ধ্রুপদী চিত্রকলার আনুগত্য স্বীকার করেনি। ধ্রুপদী গাম্ভীর্য থেকে বাংলার চিত্রপট চিরকাল লোকায়ত জগতেই বিচরণ করেছে। পাল চিত্রকলায় আপাতদৃষ্টে অজন্তার অনুবর্তন ঘটলেও এই চিত্রকলার স্পষ্ট রেখা, সমতলীয় রঙের বিন্যাস, দেহভঙ্গি ইত্যাদিতে বাংলা এই ত্রেরই অনুষঙ্গ নিয়ে বেড়ে ওঠা, যেন ধ্রুপদীত্ব ক্ষয় হয়ে সে মিশে গেছে বাংলা পটিয় সাবলীলতার দিকে। বাংলা যেন কোনো অমরত্বলোকের সন্ধান করেনি কোনোদিন। বাঙালিকে বলা হয় লোকায়ত। দেবভোগ্য উপাসনায় সে রত নয় কখনোই। সুলতান নসরত শাহর জন্য রচিত ইস্কান্দারনামার ছবিতেও মুঘল চিত্রকলার ধ্রুপদী শৈলী অনুপস্থিত ছিল।

প্রবল পারসিক প্রভাব সত্ত্বেও এই ছবির সরলীকৃত রূপগুলোতে রেখার স্পষ্টতায়, রঙের সমতলীয় বিন্যাসে আর বিষয়ের ঐহিকতায় বর্ণময় জীবন চেতনায় সমৃদ্ধ। বীরভূম থেকে মহাস্থানগড়ের তাম্রলিপ্ত থেকে ময়নামতির পোড়ামাটির ভাস্কর্য দক্ষিণ-পশ্চিম আর মধ্য ভারতের ধ্রুপদী মন্দির ভাস্কর্যের সাথে মেলে না। মঙ্গলকোটের সুন্দরী আর সাঁচি তোরণের শৈলঞ্জিকায় অনেক পার্থক্য। অন্যদিকে বাংলার মন্দিরের ভাস্কর্য সাধারণ মহিমায় উদ্ভাসিত, দেবভাব নেই বললেই চলে। কান্দাহারের বামিয়ানের ধ্রুপদী বুদ্ধমূর্তির সঙ্গে ঝেওয়ারির ক্ষুদ্রাকার ভাস্কর্যের কোনো মিল নেই। তানজোরের (তাঞ্জোরের) নটরাজ আর বাংলার রাধা কৃষ্ণ – ধ্রুপদী আর লোকায়ত চেতনার পার্থক্যে সুনির্দিষ্ট ও পৃথক। কলকাতার কোম্পানি চিত্রকলা সরাসরি মুঘল দরবারি জাহাঙ্গীরি সুরতখানার সাদৃশ্য-নিষ্ঠতার পরম্পরা বহন করেও বাংলায় এসে ইউরোপীয় খদ্দেরের রুচির সংশ্লেষে নতুন রূপে উদ্ভাসিত হয়েছিল। উনিশ শতকের বাঙালি মনেপ্রাণে ছিল ভিক্টোরিয়ান রুচিতে দীক্ষিত।

আঠারশো তেইশের ডিসেম্বরের দুপুরবেলা রামমোহন রায় লর্ড আমহার্স্টের কাছে যে-চিঠি লিখেছিলেন তাতে তিনি একরকম অনুরোধ জানিয়েছিলেন, দেশের মানুষকে তিনি ইউরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শনের আলোতে আলোকিত করতে চান। আর সেই পথ ধরে গোটা উনিশ শতক ভারতে যে-ধরনের সংস্কারপন্থী আন্দোলন বা চিন্তার স্ফুরণ ঘটেছিল তার সবই ছিল নগরকেন্দ্রিক ভদ্রলোকের আন্দোলন, বলা যায় এলিটিস্ট জাগরণ।

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, লোকায়ত সাধনার কারণে উত্তর আবর্তের কাছে প্রাচীন বাংলা ছিল ব্রাত্যের দেশ। বস্তুত ব্রাত্যের উদার জল-হাওয়ায় বাংলার চিত্রকলা ও ভাস্কর্যে বহিরাগত উপাদানের নিঃশর্ত অনুবর্তন ঘটেছিল খানিকটা। কিন্তু মূল উদ্ভাস নিজের শেকড় থেকেই উৎপন্ন হয়েছিল।

ছবি- শাহজাহানের অন্তিম দৃশ্য। শিল্পী- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯০২ সাল।

ব্রিটিশ পরম্পরা বাদ দিতে গিয়ে শিল্পের প্রেরণা খুঁজতে অজন্তা-ইলোরার দিকে তাকিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথও। কারণ তখন আদর্শ শিল্প বলতে নিজের খুঁটি একটাই অজন্তা, ইলোরা আর মুঘল রাজপুত চিত্রকলা। শিক্ষিত বাঙালি সম্প্রদায় আদর্শ ভাবতেন বহুদূরে উত্তরাবর্তের বা দক্ষিণাবর্তের ভৌগোলিক প্রদেশের শিল্পকলা এবং যা কোনো না কোনো রাজতন্ত্রের ছত্রছায়ায় বিকশিত। যে-ভারতকে লক্ষ্য করে উনিশ শতকের বুদ্ধিজীবীরা ভারতমাতার রূপ কল্পনা করেছিলেন সেই ভারত ছিল উপনিবেশবাদীদের প্রশাসনিক সুবিধার্থে বিভাজিত ভারত। কান্দাহার থেকে মান্দালয়, কাশ্মির থেকে কন্যাকুমারিকা- অবধি বিস্তৃত বিশদ জনপদকে ব্রিটিশ ভারত নামের এক প্রশাসনিক ছত্রছায়ায় নিয়ে আসা হয়েছিল। ইতিহাসের পাতায় তাকালে দেখা যায় ব্রিটিশরা যে-বিস্তৃত জনপদকে ভারত বানিয়েছিল তা পূর্বে হয়তো ছিল অন্য কোনো রাষ্ট্রের অধীন। কিন্তু এই দেশ ব্রিটিশ থেকে স্বাধীন হলেও শিল্পীরা বাংলার শিল্পকলার উত্তরাধিকার খুঁজছেন দূরের ধ্রুপদী অভিজাত পরম্পরায়। তারা বাংলার লোকায়ত উত্তরাধিকারকে অবজ্ঞা করেছিলেন।

কিন্তু জয়নুল আবেদিনের ছবিতে শুরু থেকেই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাপ্রসূত স্বভাবনিষ্ঠতার জগৎ হাজির ছিল। তিনি তাঁর ছবির বিষয় অজন্তার গুহার অন্তরালে, পুঁথির পাতায় বা কাব্যের কল্পনায় খোঁজেননি। তিনি এঁকেছিলেন মন্বন্তরের ছবি, পীড়িত মানুষের ছবি। দুর্ভিক্ষে প্রতিরোধহীন মানুষের নির্মম যন্ত্রণার ছবি। এই ছবি ছিল রূপকের আড়াল, প্রতীকের রহস্যময়তা, শিল্পশৈলীর জটিলতামুক্ত এক আশ্চর্য প্রাণময় ছবি – যার কোনো তুলনা এদেশে ছিল না। এই ছবিতে ফর্ম এবং কন্টেন্টের আশ্চর্য সমন্বয় ছিল। এই ছবিতে যে-রেখা তিনি ব্যবহার করেছিলেন তাও প্রাচ্য-পরম্পরার রেখা ছিল না। তাতে ছিল এক ধরনের কর্কশ, স্কুল, শুকনো তীব্র কালো টান। বলিষ্ঠ, খরখরে আর সাংকেতিক ছিল এই রেখার রূপ।

ছবি- বাংলার দুর্ভিক্ষ। শিল্পী- জয়নুল আবেদীন, ১৯৪৩।

জয়নুল সাধারণ দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা আর বহু বিপদসঙ্কুল সংগ্রামময় জীবনের পথে হেঁটেছিলেন বলে অজন্তার পরম্পরা তাঁকে স্পর্শ করেনি। ঘরের পরিচয়, মাটির সংরাগ ছেড়ে তিনি সুদূরে শিল্পের প্রেরণা খোঁজেননি।

ছবি-সাঁওতাল দম্পতি। শিল্পী- জয়নুল আবেদীন। ১৯৫১ সাল।

ব্রিটিশ শিল্পীর আঁকা রোমান্টিক নিসর্গে সৌন্দর্য, প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ কিংবা কোনো নারীর মুখ পিকচারেস্ক ছবি হিসেবে আমাদের ইতিহাসের স্মারক হলেও বহিরাগতের দৃষ্টির সংবেদ এই ভূখণ্ডের শেকড় পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। এদেশের শিল্পের ঋদ্ধি ঘটেছিল বাংলার শিল্পী জয়নুল, কামরুল, সুলতান এবং সফিউদ্দিনের হাতে প্রথম।

 

কৃতজ্ঞতা: শোভন সোম ও পার্থ মিত্র

 

বাংলায় শিল্পের নদীজল-বাহিত বিস্তীর্ণ প্রভা সচল হয়েছিল অনিঃশেষ, এর বিন্যাসে ব্যক্তিগত গল্পটাই বলেছি। কাল স্রোতের ক্রম রূপান্তরে তুচ্ছ বিন্দু আর কণা মাত্র হলেও ব্যক্তিই আমার কাছে শেষ পর্যন্ত দিনের আলো অথবা মেঘ। এভাবেই এই আমি আর আমাদের বিংশ শতাব্দীর ছবি। শিল্পকলার প্রভাবমুক্ত হয়ে বেঁচে আছেন এমন নীরোগ একজন ব্যক্তিও নেই। এই প্রভাব চাঁদের আলোর মতোই পীতাভ। শিল্পকলা আমাদের দুঃখ আর অমৃত আকাঙ্ক্ষার এক গভীর বোধের অভিধান। এ- জগতে এ আসলে আমাদের নিয়তি।।

লেখক পরিচিতি: শিকোয়া নাজনীন

কথাসাহিত্যিক এবং শিল্পকলার ইতিহাসের গবেষক, শিক্ষক। পিএইচ.ডি করেছেন ‘ঔপনিবেশিক বাংলার শিল্পশৈলীর অন্তর্দৃষ্টিময় আলোকোজ্জ্বল দৈশিক পরম্পরা’ নিয়ে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024