শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:০১ পূর্বাহ্ন

নজরুল কে ? 

  • Update Time : শনিবার, ২৫ মে, ২০২৪, ৩.৩০ পিএম

তাকে আমরা বিদ্রোহী থেকে নানা অভিধায় চিহ্নিত করেছি ঠিকই- কিন্তু এখনও কি তাকে আমরা ধারণ করেছি, জেনেছি কি, তিনি কে?

নজরুল বিংশ শতাব্দীর ভারতীয় সভ্যতার সেই  চিন্তানায়ক- যিনি তার সময়ের ভারতীয় সভ্যতাকে উপলব্দি ও প্রকাশ করেন গভীর ও সচেতনভাবে।

বিংশ শতাব্দীতে অর্থাৎ তার সময়কালে ভারতীয় সভ্যতার অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে। যাকে বৈদিক বা উপনষিদিকযুগ বলা হয় তারপরে পরিবর্তিত হয়েছে অনেক পথ। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, শক হুন মোগল পাঠান ততদিনে এক শরীরে মিলে গেছে। আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতাও মিশে গেছে ভারতীয় সভ্যতার সঙ্গে।

নজরুলই রবীন্দ্র পরবর্তী সেই চিন্তানায়ক যিনি ভারতীয় সভ্যতার বিংশ শতাব্দীর স্বরূপ চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি স্পষ্ট করেছিলেন, ভারতীয় সভ্যতার সঙ্গে শুধু মেলেনি,  ভারতের বড় একটি শ্রেনী জীবনাচরনে গ্রহন করেছে সেমেটিক সভ্যতার অনেক আচরণ। আবার তার সঙ্গে সেন্ট্রাল এশিয়ার শাসকরা দীর্ঘদিন থাকার ফলে সেন্ট্রাল এশিয়ার সভ্যতা যা ককেসাস, গ্রীক, সেমেটিক ও ভারতীয় সভ্যতার মিলন। তাকেও গ্রহন করেছে জীবনাচরনে।

নজরুলের সময়টা ছিলো একটা রাষ্ট্রীয় আন্দোলনের টালমাটাল সময়। কিন্তু নজরুল বার বার মানুষকে হুশিয়ার করেছিলেন, রাষ্ট্র সৃষ্টির আন্দোলন ক্ষনিকের। এর আবেদন ফুরিয়ে যায় রাষ্ট্র সৃষ্টি হবার বা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহন করার পর মূহূর্ত থেকে। তারপরে মানুষ এগিয়ে চলে তার সভ্যতার পায়ে ভর করে।

তাই তার সভ্যতার ভূমির সন্তান অর্থাৎ সমগ্র ভারত উপমহাদেশের মানুষকে চলতে হবে ভারতীয় সভ্যতার যে পরিবর্তিত রূপ সৃষ্টি হয়েছে যা বৈদিক, উপনষিদিক থেকে সেমেটিক, গ্রীক, ককেসাস মিলে এক নতুন রূপ নিয়েছে- তাকে আশ্রয় করে। এই সভ্যতার বাগানেই ফুল ফোটাতে হবে।

এ সভ্যতা না চিনলে মানুষ সভ্যতাকে ফেলে দিয়ে রাজন্য-আনুকলে সভ্যতার খোলস পরিয়ে যে ধর্মের সৃষ্টি হয়েছে- ওই ধর্মের নামে বিভক্ত হয়ে যাবে এ ভূমির মানুষের মনোজগত। যা ভূমিভাগের থেকেও আরো বড়।

আর তার জন্য ভূমিজাত সভ্যতা থেকে আগত সভ্যতা সবকিছুকে গ্রহন করার আকুতি ও পথ দেখানোর মানুষ হিসেবে নজরুল এ ভূমির মানুষের জন্যে তার কলমকে কখনও তরবারি কখনও স্নেহময় ফল্গুধারা তৈরি করেছিলেন।

তিনি অসুস্থ হবার পরে তার সভ্যতার ভূমি আনুষ্ঠানিক ধর্মের নামে ভাগ হয়ে যায়- কিন্তু তার জীবদশায়ই মানুষগুলো ভাগ হয়ে গিয়েছিলো। একমাত্র তিনি ভাগ হননি।

 

তাই অন্নদাশংকর, নজরুলকে নিয়ে চিরকালের সত্যটি বলে গেছেন-

আর সবকিছু ভাগ হয়ে গেছে

ভাগ হয়নিকো শুধু নজরুল।

আর তার আজ এ জম্মদিনে তার সভ্যতা সত্যি অর্থে এক চরম দুর্দিনে। কারণ, এখানে সভ্যতার নাম উচ্চারিত হয় না, কেবল রাজার জন্যে ও রাজনীতির জন্যে ধর্মের উম্মাদনা। যা মানুষকে প্রতিদিন তার সভ্যতা থেকে নিয়ে যাচ্ছে এক গভীর অন্ধকারের পথে। এমনকি মানুষ সাহস হারিয়ে ফেলছে প্রকৃত নজরুলকে চিহ্নিত করার কাজেও। সরে যাচ্ছে প্রকৃত নজরুল চর্চা থেকে।

তারপরেও চিরসত্য হলো, সভ্যতার ভূমিতে যে সন্তান জম্ম নেয়, ক্ষণকালের ডঙ্কা শেষে তার বাদ্যই শেষ অবধি বাজে। তাই নজরুল ফিরে আসবেই।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024