শ্রী নিখিলনাথ রায়
তদ্ভিন্ন তাঁহার দেশীয় প্রধান প্রধান সেনাপতি আসদউল্লা, নাশীর গাঁ, বদরউদ্দীন, শের আলি প্রভৃতিও ইংরেজদিগকে বাধা প্রদান করিবার জয় প্রস্তুত হন। মেজর আডাসের অধীন ইংরেজ স্যৈগণ মুর্শিদাবাদ হইতে গদা পার হইয়া ভাগীরথীর পশ্চিমতীরস্থ বাদশাহী সড়ক ধরিয়া সুভীর দিকে অগ্রসর হয়। মুর্শিদাবাদ হইতে সূতী পর্যন্ত ভাগীরথীর উভয় পার দিয়া দুইটি সড়ক চলিয়া গিয়াছে। সরফরাজের সৈন্য পূর্বপারের সড়ক দিয়া গমন করায়, খামরা ও গিরিয়ায় উপস্থিত হইয়াছিল; কিন্তু ইংরেজ-সৈন্য পশ্চিমপারের সড়ক দিয়া বাঁশলইয়ের মোহানার নিকট উপস্থিত হয়। মীর কাসেমের পরাজিত সৈন্যগণও উক্ত সড়ক দিয়া সূতীর দিকে গিয়াছিল।
১৭৬৩ খৃঃ অব্দের আগই মাসে এই যুদ্ধ হইয়াছিল। ভাগীরথীর কেবল পশ্চিম তীরে সূতীর নিকট এই যুদ্ধ হওয়ায়, মুতাক্ষরীনকারপ্রভৃতি ইহাকে সূতীর যুদ্ধ বলিয়া নির্দেশ করিয়া থাকেন। ইংরেজেরা ইহাকে গিরিয়ার যুদ্ধ কহেন। আমরা পূর্ব্বে বলিয়াছি, স্বতী পর্য্যন্ত ভাগীরথীর উভয়তীরবর্তী প্রান্তরের নামই গিরিয়া-প্রান্তর; সুতরাং উক্ত বিষয়ে কোনই পার্থক্য নাই। মীর কাসেমের সৈন্যগণের অবস্থান অত্যন্ত দৃঢ়ভাবেই করা গিয়াছিল।
ভাগীরথী ও বাঁশলই তাহাদের দুই পার্শ্বের পরিধাস্বরূপ হইয়াছিলেন; তদ্ভিন্ন তাহারা অন্যান্য দিকেও পরিখা খনন করিয়াছিল। তাহারা মুর্শিদাবাদ হইতে পশ্চিমে যাইবার একমাত্র সড়ক অধিকার করিয়া রাখিয়াছিল। মধ্যস্থলে সমরু ও মার্কার, দক্ষিণ পার্শ্বে আসদউল্লা ও বাম পার্শ্বে শের আলি ইংরেজ সৈন্য মথিত করিবার জন্য অপেক্ষা করিতেছিল। আসদউল্লার সৈন্য দক্ষিণদিকে বাঁশলইয়ের নিকট পর্যন্ত অবস্থান করে। ইংরেজ-সৈন্যগণ বাদসাহী সড়ক ধরিয়া আসিয়া, বাঁশলইএর মোহানার নিকট উক্ত নদী পার হইয়াছিল।সম্ভবতঃ : বাঁশলই যেখানে সড়ককে বিভক্ত করিয়াছে, ইংরেজ-সৈন্য সেই খানেই পার হইয়া থাকিবে।
যদিও তাহার কিছু পূর্ব্বে এক্ষণে বর্তমান মোহানা অবস্থিত এবং প্রাচীন মোহানা আরও পূর্ব্বে ছিল, তথাপি মোহানার নিকট যাওয়ার কোনই প্রয়োজন দেখা যায় না; বর্ষাকালে মোহানার নিকট পার হওয়া বড় সহজ ব্যাপার নহে। মেজর আডাসের সহিত মেজর কার্ণাক, নক্স, গ্রান্ট প্রভৃতি সেনাপতিও ছিলেন। ইংরেজ-সৈন্যগণ বাঁশলই পার হইলে, মীর কাসেমের সৈন্যগণ অগ্রসর হইয়া তাহাদিগকে আক্রমণ করে। আসদ- উল্লার সৈন্যগণ ইংরেজদিগের অনেককে বাঁশলইয়ের জলে নিক্ষেপ করিয়াছিল।
Leave a Reply