বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২০ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৬৭)

  • Update Time : রবিবার, ২৬ মে, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

কিন্তু ইংরেজেরা অপর পার্শ্বে জয় লাভ করায় মীর কাসেমের সৈন্যদিগকে অবশেষে যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হইতে হইয়াছিল। ঐতিহাসিকেরা বলিয়া থাকেন যে, শের আলি যদি কিছু বীৰ্য্যবত্তা: দেখাইতে পারিত, তাহা হইলে ইংরেজ দিগকে বাঁশলই ও ভাগীরথীর গর্ভে চিরবিশ্রাম লাভ করিতে হইত। এই যুদ্ধের পর মীর কাসেমের সৈন্যের সহিত ইংরেজদিগের আর প্রকৃত যুদ্ধ ঘটে নাই। ইহার পর উধুয়ানালার শিবির আক্রমণ করিয়া ইংরেজেরা মীর কাসেমের সৈন্যগণকে একেবারে বিধ্বস্ত করিয়া ফেলে।

যে প্রান্তরে মীর কাসেমের সৈন্যের সহিত ইংরেজদিগের যুদ্ধ সংঘটিত হয়, তাহার অনেক পরিবর্তন ঘটিয়াছে, ভাগীরথী তাহাকে গর্ভস্থ করিয়া লালখাঁর দেওয়াড়ে পরিণত করিয়াছেন। সূতীর নিকট কোন্দলিয়া নামে একটি ময়দান আছে। ও ইংরেজ সৈন্যের প্রথম যুদ্ধ প্রবাদ আছে যে, সেইখানে প্রথমে নবাব আরদ্ধ হয়। সূতীর নিকট বাজিতপুর নামক স্থানের সর্ব্বেশ্বর দেবের মন্দিরের তীরে একটি যুদ্ধ-চিত্র আছে; সাধারণে বলিয়া থাকে যে, মীর কাসেম ও ইংরেজদিগের যুদ্ধ স্মরণ করিয়া সেই চিত্র অঙ্কিত হইয়াছে।

গিরিয়া প্রান্তরের উভয় যুদ্ধস্থলেরই অনেক পরিবর্তন হইয়াছে। ভাগীরথী প্রতি বৎসর ভিন্ন ভিন্ন গতি অবলম্বন করায় ক্রমাগত উক্ত পরিবর্তন ঘটিয়া আসিতেছে। ভাগীরথীর মোহানা পূর্ব্বে স্বতীর নিকট ছাপঘাটিতে ছিল; এক্ষণে তাহা সূতী হইতে দুই ক্রোশ দক্ষিণপূর্ব্বে বিশ্বনাথপুর নামক স্থানে সরিয়া আসিয়াছে। সূতী হইতে প্রায় ১৷৷ ক্রোশ দক্ষিণে আটপলগাছি নামক স্থানের নিকট দিয়া ভাগীরথী প্রবাহিতা হইতেন। রেনেলের মানচিত্রে তাহাই দেখিতে পাওয়া যায়।

এক্ষণে সেই আটপলগাছি হইতে ভাগীরথী প্রায় ১৷৷ ক্রোশ পূর্ব্বে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছেন। এইরূপে ভাগীরথী গিরিয়াপ্রান্তরকে ছিন্ন ভিন্ন করিয়া ফেলিয়াছেন; কিন্তু তাঁহার গতির এই রূপ পরি- বর্তন সত্ত্বেও বিশাল গিরিয়াপ্রান্তরের চিহ্ন অদ্যাপি একেবারে বিলুপ্ত হয় নাই। আজিও তাহা বহুদূরব্যাপী ভূভাগে স্বীয় বিশাল কায় বিস্তার করিয়া অষ্টাদশ শতাব্দীর দুইটি প্রসিদ্ধ যুদ্ধের কথা স্মৃতিপটে উদয় করাইয়া দিতেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024