শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:৫৬ পূর্বাহ্ন

বার্ড ফ্লু নিয়ে বিশ্বে সম্প্রতি উদ্বেগের মাত্রা বৃদ্ধি

  • Update Time : রবিবার, ২৬ মে, ২০২৪, ৪.১৩ পিএম

সারাক্ষণ ডেস্ক

৮ ফেব্রুয়ারী সকালে কম্বোডিয়ার মেকং রিভার ডেল্টার কর্মব্যস্ত রোদমাখা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে কাজে যাওয়ার সময় ডাঃ প্রেলিক লুচ তাঁর টিমের কাছ থেকে পাওয়া গতরাতের ভয়েস মেসেজগুলো বাজিয়ে শোনেন। তিনি যার সেবা-শুশ্রূশা করছিলেন এমন ৮-বছরের এক বালকের অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটেছে এবং তাকে ইনকিউবেশনে রাখা হয়েছে বলে একজন ডাক্তার জানান। লুচ ভাবলেন, কি কারণে শিশুটি এত দ্রুত, এত অসুস্থ হতে পারে? তাঁর স্মরণে এলো, “আর তারপর আমি ঠিক এইচফাইভএনওয়ান-এর কথা ভাবলাম। এটা বার্ড ফ্লু হতে পারে।” আমি ক্রাতিস্থ প্রাদেশিক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে পৌঁছেই শিশুর পরিবারের লোকজন কোন অসুস্থ বা মৃত মরগির সংস্পর্শে এসেছিল কিনা শিশুর বাবাকে সেই প্রশ্ন করলাম। তাদের মোরগটিকে কয়েকদিন আগে মৃত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায় এবং পরিবারের লোকজন সেটি খেয়ে ফেলেছিল বলে তিনি স্বীকার করেন। ডাঃ লুচ তাঁর সহকর্মীদের তাঁর তত্ত্ব বুঝিয়ে বলেন। তাঁদের পূর্ব কম্বোডিয়াস্থ অংশে কোন ব্যক্তির এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা হওয়ার কোন খরর কখনও পাওয়া যায় নি। তাঁরা সতর্ক করে দেন যে, যদি তিনি বার্ড ফ্র নিয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে যান, তবে সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তারা এতে জড়িত হয়ে পড়তে পারেন। তাঁর বোকা বনে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

 

উদ্বিগ্ন কিন্তু ক্রমশ নিশ্চিত থাকা ডাঃ লুচ ঠিক রাস্তার ওপারে থাকা স্থানীয় জনস্বাস্থ্য বিভাগে ফোন করেন। এক ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য শিশু ভিরুন রোয়েউর্নের কাছ থেকে স্যাম্পল নিতে এক টিম কয়েক মিনিটের মধ্যে এসে পৌঁছায়। ভিরুনের ক্লিষ্ট অভিভাবকরা হাসপাতালের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেন। তারা তাকে এম্বুলেন্সে করে রাজধানী নম পেনে পাঠানের দাবি জানান। তার ফু স্যাম্পলের নেকড়াটা তার সঙ্গে পাঠানো হয়। ভিরুন পথিমধ্যেই মারা যায়। রাত আটটায় কম্বেডিয়ার ন্যাশনাল পাবলিক হেলথ লেবরেটরি ডাঃ লুচের সন্দেহই নিশ্চিত করে। সে উচ্চমাত্রার প্যাথজেনিক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জায় মারা গিয়েছিল।

ডাঃ লুচ একদিন আগে বালকটিকে পরীক্ষা করার চিন্তা না করায় নিজেকে ভর্ৎসনা করেন। সেদিন তিনি ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য তার চিকিৎসা করলে হয়ত তার জীবন বাঁচাতে পারতেন। কিন্তু তিনি যে বিপদ-সংকেত উচ্চারণ করেন এবং এর পর যে জরুরী তৎপরতা শুরু হয়, তা কম্বোডিয়ার রোগ নির্ণয় ব্যবস্থার সামর্থ্য এবং বিশ্বের বায়োসার্ভেল্যান্স সিষ্টেমের প্রতি এর গুরুত্বেরই প্রমাণ। জুনোটিক রোগ (zoonotic diseases) পশু ও মানুষের মধ্যে কোভিড-১৯-এর মত লাফালাফি করে এমন প্যাথোজেন (pathogens) খুঁজে বের করতে নিম্নআয়ের দেশগুলোতে ফ্রন্টলাইন ওয়ার্ক চালানো কোন বিশ্ব-ব্যবস্থার জন্য কিভাবে যে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ছে, কম্বোডিয়ার পদক্ষেপ তাও প্রমাণ করে। এর লক্ষ্য হল রোগগুলোকে চিহ্নিত ও প্রতিরোধ করা, সেগুলোর যথেষ্ট সংখ্যক টিকা বা চিকিৎসার ওষুধ উৎপাদন করার সময় লাভ করা এবং নতুন কোন কিছু উদ্ভাবনের জন্য এক জোরদার মিশনে আত্মনিয়োগ করা।

এইচফাইভএনওয়ান পাখিদের দেহে ইনফ্লুয়েঞ্জা ঘটায় এমন অনেকগুলো ভাইরাসের একটি। এটি ১৯৯৬ সালে হংকংয়ে উদ্ভুত হয়ে বিভিন্ন ভার্সন পরিগ্রহ করেছে এবং বন্য ও ফার্মে পালিত পাখিগুলোর মধ্যে প্রাদুর্ভূত হয়েছে। সেগুলো সময়ে সময়ে মানবদেহেও সংক্রমিত হয়েছে। ২০২০ সালে এক নতুন ও বিশেষভাবে মারাত্মক ভাইরাস পাখিদের পরিক্রমণ পথ বরাবর আফ্রিকা, এশিয়া ও ইউরোপ ছড়িয়ে পড়ে বিজ্ঞানীদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। ২০২২ সালের দিকে এটি উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় পৌঁছে গরু-মহিষ ও সামুদ্রিক প্রাণীসহ বন্য ও গৃহপালিত পশুদের হত্যা করতে থাকে। সুতরাং যখন ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে কম্বোডিয়া দুই ব্যক্তির এইচফাইভএনওয়ান-এ সংক্রমিত হওয়ার খবর দিল, তখন বিজ্ঞানীদের মধ্যে ভয়ের সঞ্চার হল। ভাইরাসটির নতুন ভার্সন কি এশিয়াতে ফিরে এসে লোকজনের মৃত্যু ঘটাচ্ছে? বিজ্ঞানীরা এক দশক ধরে কম্বোডিয়ায় পাখিদের দেহে ভাইরাসটি উপস্থিত ছিল বলে দেখতে পেলেও এতে কোন মানুষের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায় নি। কিন্তু গত বছর কম্বোডিয়া ১১ জনের বার্ড ফ্রুতে আক্রান্ত হওয়ার এবং তাদের মধ্যে পাঁচ জনের মৃত্যু হওয়ার খবর জানায়। এ রোগে পৃথিবীর অন্য কোথাও এত বেশি লোকের মৃত্যু ঘটে নি। এইচফাইভএনওয়ান নিয়ে বিশ্বে উদ্বেগের মাত্রা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বেড়ে গিয়েছে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছাগল ও ডেইরিতে পালিত গরুর দেহে ভাইরাসটির সন্ধান পাওয়া গেছে এবং তারপর টেক্সাসের এক কৃষিকর্মীও এতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, ভাইরাসটি প্রজাতিসমূহের মধ্যে্য ঘুরে বেড়ায় বলে এটি বিকশিত হয়ে কেবল পাখি থেকে স্তন্যপায়ী পশুর দেহে নয়, মানুষ থেকে মানুষের দেহেও সহজে ছড়িয়ে পড়ার সামর্থ্য অর্জন করতে পারে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024