সারাক্ষণ ডেস্ক
লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আহরণে প্রতি বছরই ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। তখন বাজেট ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ও বিদেশী উৎস থেকে নেয়া ঋণের ওপর নির্ভর করতে হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রকাশিত ডেবট বুলেটিনের তথ্যানুসারে গত আড়াই বছরে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি। মূলত কভিডের পর থেকেই সরকারি ঋণের এ উল্লম্ফন। ঋণ বাড়ায় সুদ বাবদ সরকারের ব্যয়ের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। রাজস্ব ও রফতানি আয়ে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় বিপুল অংকের এ ঋণ অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
অর্থ বিভাগের প্রকাশিত ডেবট বুলেটিনের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় উৎস থেকে ৯ লাখ ৫৩ হাজার ৮১৪ কোটি ও বিদেশী উৎস থেকে নেয়া হয়েছে ৭ লাখ ৫ হাজার ৫২০ কোটি টাকার ঋণ। এর আগে ২০২১ সালের ৩০ জুন শেষে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৪৪ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় ঋণ ৭ লাখ ২৩ হাজার ৯৩৯ কোটি ও বিদেশী ঋণ ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে আড়াই বছরের ব্যবধানে সরকারের মোট ঋণ বেড়েছে ৫ লাখ ১৫ হাজার ৩৮ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে স্থানীয় উৎস থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ এবং বিদেশী উৎস থেকে বেড়েছে প্রায় ৬৮ শতাংশ।
স্থানীয় উৎসের মধ্যে সরকার সাধারণত ট্রেজারি বিল, বন্ড ও সুকুকের মাধ্যমে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। এর বাইরে সঞ্চয়পত্র ও সরকারি কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের মাধ্যমে ব্যাংক-বহির্ভূত উৎস থেকেও ঋণ নেয় সরকার। গত আড়াই বছরে ব্যাংক ও ব্যাংক-বহির্ভূত দুই খাত থেকেই নেয়া ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৫৭ শতাংশ এবং ব্যাংক-বহির্ভূত খাত থেকে নেয়া ঋণ বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। ব্যাংক খাতের মধ্যে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি ঋণ নেয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এ দুই উৎসে সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় এর বিপরীতে সরকারের সুদ ব্যয়ও বেড়ে গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঋণের সুদ বাবদ সরকারের ব্যয় হয়েছে ৯২ হাজার ১০৭ কোটি টাকা। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এ খাতে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। সুদের হার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি টাকার অবমূল্যায়নের কারণে সুদ পরিশোধ বাবদ চলতি অর্থবছরে সরকারের ব্যয় আরো বাড়বে। সেক্ষেত্রে তা ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটেও এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ রাখা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
বাজেট প্রণয়নের সময় প্রতি বছরই বড় অংকের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যদিও প্রকৃত রাজস্ব আহরণ হয় তার চেয়ে বেশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৫ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ হয়েছিল। সেখানে আয় হয়েছে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকার রাজস্ব। চলতি অর্থবছরেও রাজস্ব আয়ে কাঙ্ক্ষিত হারে প্রবৃদ্ধি হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ রাজস্ব আহরণ হয়েছে। আলোচ্য অর্থবছরে ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। অবশ্য পরবর্তী সময়ে তা কমিয়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয় ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের তথ্যানুসারে, চলতি অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) সংস্থাটি ২ লাখ ৫৯ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করেছে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৬০ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত আড়াই বছরে দেশে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। এর প্রভাবেও টাকার অংকে সরকারের বিদেশী ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। অবশ্য টাকার অংকের পাশাপাশি ডলারের হিসাবেও বেড়েছে বিদেশী ঋণের পরিমাণ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যানুসারে, ২০২২ সালের জুন শেষে সরকারের বিদেশী ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৫৬০ কোটি ডলার। ২০২৩ সালের জুন শেষে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৪১ কোটি ডলারে।
অর্থ বিভাগের সাবেক সচিব ও সরকারের সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মূল বাজেটে রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় প্রকৃতপক্ষে তার চেয়ে অনেক কম রাজস্ব আহরণ হয়ে থাকে। অন্যদিকে মূল বাজেটের তুলনায় সংশোধিত বাজেটে সরকারের ব্যয় কমলেও সেটির ব্যবধান খুব বেশি নয়। ফলে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধির তুলনায় সরকারের ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি বেশি হয়ে থাকে। এ কারণে স্থানীয় উৎস থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ বেড়েছে। অন্যদিকে বাজেট সহায়তার ঋণ, সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট এবং চীন ও রাশিয়ার ঋণের কারণে সরকারের বিদেশী ঋণ বেড়েছে। তাছাড়া এ সময়ে স্থানীয় মুদ্রা টাকার ৩০ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। এ কারণেও টাকার অংকে সরকারের বিদেশী ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।’
একদিকে সরকারের ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, অন্যদিকে কমছে রিজার্ভ। অথচ দেশের আমদানি দায়সহ বিদেশী ঋণ পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার জোগান আসে এ রিজার্ভ থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালের জুন শেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতি অনুযায়ী দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৩৩৮ কোটি ডলার। গত বছরের জুন শেষে তা কমে ২ হাজার ৪৭৫ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। সর্বশেষ গত ২১ মে দেশের গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৬১ কোটি ডলারে। অবশ্য নিট রিজার্ভের পরিমাণ আরো কম, সে তথ্য যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করে না। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি অনুসারে, নির্ধারিত পরিমাণে নিট রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বাংলাদেশ যদিও এখন পর্যন্ত সে লক্ষ্য অনুযায়ী রিজার্ভ সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে।
সরকারকে প্রতি বছরই ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধ বাবদ বড় অংকের অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। মূলত রাজস্ব আয়ের অর্থ থেকে স্থানীয় ঋণ এবং রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার মাধ্যমে বিদেশী ঋণ শোধ করা হয়ে থাকে। আইএমএফের তথ্যানুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২ হাজার ৩৩৩ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধ করেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৪৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার স্থানীয় উৎস থেকে নেয়া ঋণ আর বিদেশী ঋণ পরিশোধ হয়েছে ৩৮৮ কোটি ৬০ লাখ ডলারের। আলোচ্য অর্থবছরে দেশের রফতানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ২৩৩ কোটি ডলার। এ সময় দেশে ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় অনুমোদনের পর আইএমএফের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ এবং রাজস্ব আয় ও অনুদানের অনুপাত ৭১ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। রাজস্বের অনুপাতে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বাড়ার কারণে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে, যাতে করে দরিদ্রবান্ধব ও সবুজ প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারে অতিপ্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করতে পারে। সম্প্রতি তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে বাংলাদেশ সফর করে গেছে সংস্থাটির রিভিউ মিশন। এ সময় আইএমএফের পক্ষ থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন খাতে করারোপের পরিকল্পনা করছে সরকার।
অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. কেএএস মুরশিদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কভিডের পর থেকে সরকারের ব্যয় অনেক বেড়েছে। স্বাস্থ্যসহ আরো বেশকিছু খাতে সরকারকে অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে কভিডকালে। যে ঋণ নেয়া হয়েছে সেটি টেকসই কিনা তা গুরুত্বপূর্ণ। কীভাবে এ ঋণ পরিশোধ করা হবে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় ঋণের ক্ষেত্রে রাজস্ব আয়ের কত শতাংশ ঋণ পরিশোধে ব্যয় হচ্ছে সেটি দেখতে হবে। অন্যদিকে বিদেশী ঋণের ক্ষেত্রে রফতানি আয়ের কত শতাংশ ঋণ পরিশোধে ব্যয় হচ্ছে সেটিও বিবেচনা করতে হবে। যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করতে হবে সে পরিমাণ কিংবা তার চেয়ে বেশি রাজস্ব আয় এবং রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়লে তখন ঋণকে টেকসই বলা যায়। কিন্তু রাজস্ব আয় ও রফতানির আয়ের ক্ষেত্রে যে পরিস্থিতি আমরা দেখছি সে বিবেচনায় আমাদের ঋণ টেকসই নয় বলেই মনে হয়।’
প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের কেন্দ্র বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম শেষ করেছে। আর দুই ঘণ্টার মধ্যেই এটি প্রবল থেকে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। এরপর এটি নিম্নচাপে পরিণত হবে। ঘূর্ণিঝড়টির পুরো প্রভাব শেষ হতে আরও পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লাগতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি গতকাল রোববার রাত আটটার দিকে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করে। এরপর উপকূল থেকে শুরু করে সারা দেশে বৃষ্টি শুরু হয়।
আজ সকাল আটটার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কেন্দ্র বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করেছে।
এটি এখন খুলনা ও কয়রার দিকে আছে। এখনো এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় অবস্থায় আছে। তবে দুই ঘণ্টার মধ্যেই এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। এরপর এটি নিম্নচাপে পরিণত হবে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পুরোপুরি শেষ হতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লাগতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজ সারা দেশেই বৃষ্টি হবে।
এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে গতকাল রোববার বিকেল ও সন্ধ্যা থেকে বাগেরহাট, ভোলা, পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। এতে মুঠোফোনের চার্জ হারিয়ে অনেকে হয়ে পড়েছেন যোগাযোগবিচ্ছিন্ন। ঢাকা থেকে গ্রামে থাকা স্বজনদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে না পাড়ার কথাও প্রথম আলোকে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন।
গতকাল রোববার রাত আটটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এর প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের সুদূর দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহর কাছে বাস্তুচ্যুতদের জন্য নির্মিত একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৩৫ জন নিহত ও কয়েক ডজন আহত হয়েছে। স্থানীয় সময় রোববার রাতে গাজা সরকারের গণমাধ্যম দপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত ইসরাইলকে ‘তাৎক্ষণিকভাবে রাফায় সামরিক অভিযান বন্ধের’ নির্দেশ দেওয়ার মাত্র দুদিন পর এ বিমান হামলা চালানো হলো।
মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, পশ্চিম রাফাহর তেল আল-সুলতান এলাকায় এই হামলা চালানো হয়। সেখানে শহরের পূর্বাঞ্চল থেকে অনেকে পালিয়ে যাওয়ার পর হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। দুই সপ্তাহ আগে ইসরায়েলি বাহিনী স্থল অভিযান শুরু করেছিল ওই অঞ্চলে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার বরাত দিয়ে এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাফাহ প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমে ইউএনআরডব্লিউএ’র ‘বারকাসাত বাস্তুচ্যুত কেন্দ্রে’ ব্যাপক ও ইচ্ছাকৃতভাবে বোমা হামলা চালিয়ে ইসরাইলি দখলদার বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট দপ্তরও অভিযোগ করেছে, বাস্তুচ্যুত লোকদের জন্য নির্মিত কেন্দ্রটিকে ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করেছে। ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর এই জঘন্য গণহত্যা সমস্ত আন্তর্জাতিক বৈধতা রেজল্যুশনের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।
হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি রাফায় হামলাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, ইসরাইলকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র দায়ী।
রাফায় কুয়েতের হাসপাতালে আসা এক বাসিন্দা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, বিমান হামলায় তাঁবুগুলো পুড়ে গেছে। তাঁবুগুলো গলে গেছে এবং মানুষের শরীরও গলে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে মিডল ইস্ট আই মন্তব্য জানতে চাইলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা ‘যত দ্রুত সম্ভব’ এর জবাব দেবে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে খুলনার তিন উপজেলায় অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, রোববার রাতে জোয়ারের তীব্র চাপে মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সিংহেরকোণা, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বাঁধ ভেঙে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, বাঁধের দুর্বল অংশের ওই তিনটি স্থানে প্রায় ১৫০ মিটার ভেঙে নোনা পানিতে প্লাবিত হয়েছে এলাকা। এ ছাড়া নিম্নাঞ্চল ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার মানুষ রাতভর মেরামত কাজ চালিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি।
মহারাজপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, রোববার রাতে জোয়ারের চাপে ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় প্রায় ৫০ মিটার বাঁধ ভেঙে কপোতাক্ষ নদের পানি ঢুকে পড়েছে। এতে অন্তত দুটি গ্রাম ও কয়েকশ চিংড়ির ঘের তলিয়ে গেছে।
মহেশ্বরীপুরের ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারি বলেন, ইউনিয়নের সিংহেরকোণা এলাকায় বাঁধ ভেঙে গেছে। এ ছাড়া নয়ানি এলাকার বাঁধের নিচু জায়গা ছাপিয়ে সারারাত পানি ঢুকেছে। এতে অন্তত ৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া অসংখ্য চিংড়ির ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ঝড়ের তাণ্ডব ও ভারী বৃষ্টিতে কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে শতাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
Leave a Reply