শ্রী নিখিলনাথ রায়
একটি ক্ষুদ্র কাহিনী
অতীত কালসাগরে কত উজ্জ্বল রত্ন লুক্কায়িত রহিয়াছে, কে তাহা- দের গণনা করিবে? তাহাদিগের প্রভা দূরাগত নক্ষত্রালোকের চায় এত ক্ষীণ যে, বিস্মৃতির ঘনান্ধকার ভেদ করিয়া মুহূর্তের জন্য কাহারও নয়নপথে পতিত হয় কিনা সন্দেহ। যখন কোন ঐতিহাসিক সত্যানু- সন্ধিৎসার রজ্জু অবলম্বন করিয়া সেই অতলস্পর্শ সাগরগর্ভে নিমগ্ন হইতে থাকেন, তখন কেবল তাঁহারই চক্ষুর সমক্ষে সেই উজ্জ্বল রত্নরাজির কিরণলহরী ক্রীড়া করিতে থাকে। তিনি স্মৃতিস্তর হইতে সেই জ্যোতির্ময়ী রত্নমালার উদ্ধার করিয়া সাধারণকে উপহার প্রদান করেন।
দুঃখের বিষয়, রত্নোদ্ধার সকল সময়ে সুচারুরূপে সম্পন্ন হয় না; কখন কখন হয়ত কোন কোন ক্ষীণপ্রভ রত্নের উদ্ধার হয় এবং তৎসঙ্গে অনেক উজ্জ্বলতম রত্ন পরিত্যক্ত হইয়া থাকে। সে স্থলে আমরা তত দোষ দেখিতে পাই না। কিন্তু যেখানে সত্যানুসন্ধিৎসা- রজ্জুর একাংশ বিদ্বেষবুদ্ধির কৃষ্ণবর্ণে এবং অপরাংশ পক্ষপাতিত্বের স্বর্ণ বর্ণে রঞ্জিত করিয়া, উজ্জ্বল রত্নরাজিকে কৃষ্ণ ও ক্ষীণপ্রভ রত্ননিচয়কে উজ্জ্বলতর প্রতিপন্ন করিতে চেষ্টা করা হয়, তথায় ঐতিহাসিকগণ কর্তব্যের অবমাননা করিয়া থাকেন।
ভারতবর্ষের ইতিহাসে এরূপ দৃষ্টান্তের অভাব নাই। মুসলমান ঐতিহাসিকগণ যখন হিন্দুর ইতিহাস লিখিয়াছেন, তখন তাঁহারা অনেক স্থলে, তাঁহাদিগের গৌরবের লাঘব এবং কোনও কোনও স্থলে প্রকৃত ঘটনা গোপন করিতে ত্রুটি করেন নাই। মুসলমানগণের ইতিহাস লিখিতে গিয়া ইংরেজ ঐতিহাসিকগণও উক্ত পথ অবলম্বন করিয়াছেন এবং স্থানে স্থানে বিদ্বেষবুদ্ধির পরিচর দিয়া অনেক চরিত্রকে এরূপ অতিরঞ্জিত করিয়া তুলিয়াছেন যে, কোন মতে তাঁহাদের প্রবৃত্তির সমর্থন করা যাইতে পারে না।
মুসলমানদিগের সহিত সংসৃষ্ট বলিয়া দুর্ভাগ্য হিন্দুগণও কোন কোন স্থলে ইংরেজ ঐতিহাসিকগণের লেখনীমুখে স্থান পান নাই এবং অনেক খুলে কৃষ্ণবর্ণেও চিত্রিত হইয়াছেন।যে মোহনলাল পলাশীর যুদ্ধে মীরমদনের পতনের পর অদম্য উৎসাহসহকারে ইংরেজসেনা মথিত করিবার উপক্রম করিয়াছিলেন, অর্ম্মে প্রভৃতির ইতিহাসে তাঁহার সেই বীরত্বকাহিনীর কিছুমাত্র উল্লেখ নাই। পরবর্তী ক্রম্ ম্যালীসন্ প্রভৃতিও অর্ম্মের অনুসরণ করিয়াছেন। ভাগ্যে মুতাক্ষরীনকার সেই প্রভুভক্ত হিন্দুবীরের শৌর্য্যময় বিবরণের বর্ণনা করিয়াছিলেন, * তাই আমরা আজ তাহা লইয়া আত্মগৌরব করিতে পারিতেছি।
Leave a Reply