শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:২১ অপরাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৭০)

  • Update Time : বুধবার, ২৯ মে, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

হস্তীর বৃংহণে, অশ্বগণের হ্রেষার’ব, কামানের গভীর গর্জনে, যোদ্ধৃগণের উৎসাহনিনাদে, দিয়ণ্ডল প্রকম্পিত হইতে লাগিল। যুদ্ধ যখন ক্রমে ঘোরতর হইয়া উঠিল, তখন সরফরাজ স্বয়ং উৎসাহসহ- কারে হস্তিপৃষ্ঠে অগ্রসর হইতে লাগিলেন। তাঁহার প্রধান প্রধান সৈন্তাধ্যক্ষগণের অধিকাংশই ভূতলশায়ী হইয়াছেন এরূপ অবস্থায় তিনি কাপুরুষতা অবলম্বন না করিয়া নিজেই ভীষণ সমরসাগরে ঝম্প প্রদান করিলেন। সহসা একটি বন্দুকের গুলি আসিয়া তাঁহার মস্তিষ্কে প্রবিষ্ট হইল এবং তিনি বীরের ন্যায় সেই সমরক্ষেত্রে জীবন বিসর্জন করিলেন।

মুর্শিদাবাদের নবাবদিগের মধ্যে একমাত্র সরফরাজই যুদ্ধক্ষেত্রে জীবন বিসর্জন করিয়াছেন। তাঁহার প্রধান সেনাপতি গওস খাঁ আলিবন্দীর একদল সৈন্য মথিত করিয়া প্রভুর সাহায্যের জন্য অগ্রসর হইতেছিলেন; পরে প্রভুর মৃত্যুশ্রবণে স্বীয় পুত্রদ্বয়সহ জীবন বিসর্জনে কৃতসঙ্কল্প হইলেন। অদম্য উৎসাহসহকারে আলিবন্দীর সৈন্যসাগর মন্থন করিতে করিতে পরিশেষে তিনিও ধরাশায়ী হইলেন। তাঁহার বীরপুত্রদ্বয়ও পিতার পথের অনুসরণ করিলেন।

বিজয়সিংহ নামে এক জন রাজপুতবীরের হস্তে নবাব সরফরাজের সৈন্যের পশ্চাদ্ভাগ রক্ষার ভার ছিল। বিজয়সিংহ গিরিয়ার নিকট খামরা নামক স্থানে শিবির সন্নিবেশ করিয়া অবস্থিতি করিতেছিলেন। যখন তিনি অবগত হইলেন যে, তাঁহার প্রভুর অধিকাংশ সৈন্যাধ্যক্ষ একে একে গিরিয়ার ভীষণ সমরে জীবন বলি দিয়াছেন এবং প্রভু নিজেও হস্তিপৃষ্ঠে চিরনিদ্রায় নিদ্রিত হইয়াছেন, তখন তিনি কালবিলম্ব না করিয়া অতি অল্পসংখ্যক অশ্বারোহীর সহিত আলিবর্দীর দিকে অগ্রসর হইলেন। প্রভুর মৃত্যুতে রাজপুতের শোণিত উষ্ণ হইয়া উঠিল।

তিনি দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হইয়া এক ভীষণাকার বল্লম গ্রহণ করিয়া আলিবন্দীকে লক্ষ্য করিলেন,-উজ্জল তপনপ্রভায় বল্লন প্রদীপ্ত হইয়া উঠিল। আলিবর্দী। খাঁর সমস্ত শরীরে যেন তড়িৎ-প্রবাহ ছুটতে লাগিল। সৌভাগ্যক্রমে তাঁহার গোলন্দাজ সৈন্যাধাক্ষ দাওর কুলীর একটি অব্যর্থ গুলিতে রাজপুতবীর বিজয়সিংহ গিরিয়া-প্রান্তরে শায়িত হইলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024