শ্রী নিখিলনাথ রায়
পুরুষ চিরকাল রাজনীতির সেবক হইয়া থাকেন। রমণী সাধারণতঃ সেই কঠোর তত্ত্বে মনোনিবেশ করিতে চাহেন না। কিন্তু অনেক সম্রাট ও রাজনীতিবিদগণের জীবনে তাঁহাদিগের সহধম্মিণীরও প্রতিভার ছায়া দেখিতে পাওয়া যায়। নবাব আলিবন্দী খাঁর স্তায় রাজনীতিবিৎ, পুরুষ বাঙ্গলার সিংহাসনে অতি অল্পই উপবেশন করিয়াছেন বলিয়া মনে হয়। দুর্দান্ত মহারাষ্ট্রীয়দিগকে দমন করিয়া সঙ্গে সঙ্গে বাঙ্গলা- রাজ্যের প্রজাদিগকে শান্তির হিল্লোলে ভাসাইয়া, তিনি রাজনীতির চূড়ান্ত, পরিচয় দিয়া গিয়াছেন।
এরূপ কথিত আছে যে, সুচতুর রাজনীতিবিৎ নিজাম উল্ মোল্ক অনেক সময়ে আলিবর্দী খাঁর রাজনীতিকৌশলে চমৎকৃত হইতেন এবং তাঁহাকে প্রতিদ্বন্দ্বিস্বরূপ মনে করিয়া, সময়ে সময়ে মহারাষ্ট্রীয়দিগকে উত্তেজিত করিতেন। আলিবদ্দীকে মুর্শিদাবাদ বা বাঙ্গলার আকবর বলিয়া নির্দেশ করা যাইতে পারে। মুর্শিদাবাদের নবাবদিগের মধ্যে হিন্দু ও মুসল্যানের প্রতি সমপ্রীতি দেখাইয়া, মহাবিপ্লব মধ্যেও শান্তভাবে প্রজাপালন করিতে তাঁহার ন্যায় আর কেহই সমর্থ হন নাই। তাঁহার প্রভু ও পূর্ব্ববর্তী নবাব সুজাউদ্দীন এই হিন্দু মুসল্যানের প্রতি সম- প্রীতির সূচনা করিয়া যান এবং আলিবর্দী খাঁ তাহা সম্পূর্ণরূপে কার্য্যে- পরিণত করেন।
সেই কার্যবীর আলিবর্দী খাঁর রাজনৈতিক জীবন তাঁহার প্রিয়তমা মহিষীর সহায়তায় পূর্ণতা লাভ করিয়াছিল বলিয়া কথিত হইয়া থাকে। আলিবন্দীর উচ্ছৃঙ্খল সংসার যেমন এই মহীয়সী মহিলার তর্জনীতাড়নের অধীন ছিল, সেইরূপ বিপ্লবসাগরে নিমগ্ন সমগ্র বঙ্গরাজ্যের শাসনও তাঁহারই পরামর্শানুসারে চালিত হইত। জ্ঞান, ঔদার্য্য, পরহিতেচ্ছা ও অন্ত্যাক্ত সদ্গুণে তিনি রমণীজাতির মধ্যে অতুলনীয়া ছিলেন। রাজ্যের যাবতীয় হিতকর কাৰ্য্য তাঁহারই পরামর্শের উপর নির্ভর করিত।
একজন ইংরেজ লেখক বলিয়াছেন যে, নিঠুর ও বিশ্বাসঘাতকতামূলক কাৰ্য্য ব্যতীত রাজ্যের প্রায় প্রত্যেক প্রধান ও গুরুতর কাধ্যে নবাব তাঁহারই পরামর্শ গ্রহণ করিতেন। ঐ সমস্ত নিষ্ঠুর কার্য্যে তাঁহার অত্যন্ত ঘৃণা ছিল এবং তিনি বলিতেন যে, ঘৃণ্য ও নৃশংস পন্থা অবলম্বন করিলে তাঁহার বংশ নিশ্চই ধ্বংসমুখে পতিত হইবে। যদিও ঐ সমস্ত কার্য্যে তাঁহার অনিচ্ছা ছিল, তথাপি বিশেষ কোন প্রয়োজন হইলে, তিনিও সময়ে সময়ে তাহাতে সম্মতি প্রদান করিতেন। ইহাতে তাঁহার রাজনীতিজ্ঞানেরই বিশেষরূপ পরিচয় পাওয়া যায়।
Leave a Reply