শ্রী নিখিলনাথ রায়
আলিবর্দী খাঁ ও তাঁহার বেগমের ন্যায় মহিলা যে সংসারের কর্তা ও কর্ত্রীস্বরূপ ছিলেন, দুঃখের বিষয়, সেই সংসারে ব্যভিচার ও পাপ প্রবেশ করিয়া, তাঁহাদের হৃদয়ে সর্ব্বদা সহস্র বৃশ্চিকদংশনের যন্ত্রণা প্রদান করিত। বলিতে দুঃখ ও লজ্জা বোধ হয় যে, আলিবদ্দী খাঁর জ্যেষ্ঠা ও কনিষ্ঠা কন্যা ঘসেটী ও আমিনা আপনাদিগের পবিত্র চরিত্র রক্ষা করিতে পারেন নাই। ঘসেটা অনেক দিন হইতে পাপপথে বিচরণ করিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন। জৈনুদ্দীনের মৃত্যুর পর আমিনাও ভগিনীর পথের অনুসরণ করেন। এই আমিনাই সিরাজের মাতা। দুই ভগিনীই হোসেনকুব্বী খাঁর প্রণয়ভাগিনী হইয়া উঠেন। হোসেন কুলী খাঁ ঘসেটীর স্বামী ও আলিবন্দীর ভ্রাতুষ্পুত্র নওয়াজেস্, মহম্মদ খাঁর সহকারী ছিলেন।
নওয়াজেস্ মহম্মদ খাঁ ঢাকার শাসনকর্তৃত্বপদ লাভ করেন। তিনি বরাবরই হোসেনকুলী খাঁকে বিশ্বাস করিতেন ও তাল বাসিতেন। সেই জন্ম হোসেনকুলী খাঁ ঘসেটা বেগমের সহিত প্রণয় স্থাপন করিয়া, প্রভুর ভালবাসা ও বিশ্বাসের প্রতিশোধ দিয়াছিলেন। এই প্রণয় বহুদিন পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ ছিল। কিন্তু অবশেষে ঘসেটা ও হোগেনকুলী খাঁর মধ্যে মনোবিবাদের সৃষ্টি হয়। এই মনোবিবাদের কারণই আমিনা বেগম। আমিনা স্বামীর মৃত্যুর পর মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হইলে, হোসেন কুলী খাঁ তাঁহার সহিত প্রণয় স্থাপন করেন। এই জন্ম তাঁহার উপর ঘসেটীর অত্যন্ত ক্রোধ উপস্থিত হয়। কন্যাগণের কুপথগমনের কথা জ্ঞাত হওয়া অবধি নবাববেগম তাহা নিবা- রণের জন্য অশেষরূপ চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু কৃতকার্য্য হইতে পারেন নাই।
ক্রমে যখন তাঁহাদের গুপ্ত প্রণয়ের কথা লইয়া সমস্ত মুর্শিদাবাদে আন্দোলন উপস্থিত হইল, তখন নবাব-বেগম আর স্থির থাকিতে পারিলেন না। বিশেষতঃ তাঁহার কনিষ্ঠা কন্যা পূর্ব্বে সচ্চরিত্রা থাকিয়া এক্ষণে অধঃপাতের দিকে অগ্রসর হইতেছে দেখিয়া এবং হোসেন কুলী খাঁকেই সেই অধঃপতনের কারণ জানিয়া তিনি তাহার প্রতিবিধানে যত্নবতী হইলেন। সিরাজ স্বীয় জননীর কলঙ্কের কথা শুনিয়া অবধি মর্মাহত হইয়া- ছিলেন এবং হোসেনকুলী খাঁকে প্রতিফল দিবার জন্য প্রতিনিয়ত চিন্তা করিতেছিলেন।
নবাববেগম এক্ষণে উপায়ান্তর না দেখিয়া, আপনার সংসারের পরম শত্রু হোসেন কুলী খাঁর বিনাশসাধনের জন্য সিরাজকে উত্তেজিত করিতে লাগিলেন। হলওয়েল সাহেব নবাববেগমকে যে নিষ্ঠুর কার্য্যের পরামর্শ হইতে সর্ব্বদা বিরত থাকার কথা উল্লেখ করিয়াছেন, এস্থলে আমরা তাহার অন্যথা দেখিতে পাই। নবাববেগম এ বিষয়ে নবাব আলিবর্দ্দদী খাঁর সহিত পরামর্শ করিলে, উভয়ের পরামর্শে হোসেন কুলীর প্রাণবধ করাই স্থির হইল। কিন্তু হোসেন কুলী খাঁ নওয়াজেস্ মহম্মদের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র; এজন্ম এ বিষয়ে তাঁহার মত লওয়ার প্রয়োজন হইয়া উঠিল।
Leave a Reply