শিবলী আহম্মেদ সুজন
বাংলাদেশের শিল্প খাতে তুলার বার্ষিক চাহিদা ৮৫ লাখ বেল। অন্যদিকে দেশে মাত্র ২ লাখ বেল তুলা উৎপাদন হয়। যে কারণে বাংলাদেশকে তুলা আমদানিতে ব্যয় করতে হয় ৮.৬৭ বিলিয়ন ডলার। যা আমাদানি ব্যয়ের মোট বৈদেশিক মুদ্রার ১২.৭%।
তৈরি পোশাক খাতের জন্য বাংলাদেশকে এই বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল হিসেবে তুলা আমদানি করতে হয়। পোশাক খাতে কাঁচামাল আমদানিতে তুলার জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হয় । ১৯৭২ সালে দেশে তুলা উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা হয়। এই বোর্ড গঠিত হলেও এখনও অবধি সেভাবে কোন সাফল্য দেখাতে পারেনি।
পুরো বিশ্বে উৎপাদিত চার ধরনের তুলার মধ্যে বাংলাদেশে দুই ধরনের তুলা চাষ করা হয়। একটি হল আপল্যান্ড তুলা বা আমেরিকান তুলা এবং আরেকটি হল গসিপিয়াম আর্বোরিয়াম বা গাছের তুলা। দেশে চাষ করা তুলার ৯০% আমেরিকান তুলা। বাকি ১০% তুলা দেশের পাহাড়ি এলাকায় চাষ করা হয়।
বর্তমানে দেশে মোট ৫২৪টি স্পিনিং মিল চালু রয়েছে এবং স্পিনিং মিলগুলোর বার্ষিক তুলার চাহিদা ৮৫ লাখ বেল। এর মধ্যে বাংলাদেশে মাত্র ২ লাখ বেল তুলা উৎপাদন করে থাকে।
অথচ বাংলাদেশের তুলা চাষের অতীত ইতিহাস অনেক ভালো। ফ্রানসিস বুকাননের ডায়েরী থেকে জানা যায়, ১৭৯৮ সালে ফেনী জেলার আমারীগাঁওয়ের আশেপাশের এলাকার জমি গুলোতেও তুলার চাষ হত। চাষীরা তুলা হিসেবে রাজাদের কর দিতেন।যা সময়ের সাথে সাথে এখন অনেকটাই হারিয়ে গেছে।
যার ফলে আজ পোশাক শিল্পে যে তুলা ব্যবহার করা হয় তার প্রায় ৯৮ ভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। পোশাক তৈরির জন্য বেশির ভাগ তুলা ভারত ,আমেরিকা,পাকিস্তান, এমনকি সেন্ট্রাল এশিয়ার দেশগুলো থেকেও আমদানী করা হয়ে থাকে।
অথচ ৪০ বছর আগেও সাভারের শিল্প কারখানার আশেপাশের এলাকার জমিগুলোতে তুলা চাষ করা হত। দেশে তুলা চাষের জন্য উপযুক্ত জমি থাকা সত্ত্বেও কেন তুলা চাষ করা হচ্ছে না,বাহিরের দেশগুলো থেকে কেন তুলা আমদানি করা হচ্ছে-এ প্রশ্ন কৃষির সঙ্গে জড়িত অনেকেরই।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ফখরে আলম ইবনে তাবিব বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাতে তুলা আমদানি কমানোর জন্য ২০৪১ সালের মধ্য বাংলাদেশের শিল্প খাতে তুলার বার্ষিক চাহিদার ২০% তুলা উৎপাদন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।২০৩০ সালের মধ্য আমরা ৫ লাখ বেলেরও বেশি তুলা উৎপাদন করতে সক্ষম হব।
Leave a Reply