শ্রী নিখিলনাথ রায়
যে বেগমের পরামর্শে নবাব আলিবদ্দী খাঁ সমস্ত রাজনৈতিক কার্য্য সম্পন্ন করিতেন এবং যাঁহার পরামর্শবলে নবাব আলিবর্দী খাঁর আদর্শ-শাসনে বঙ্গের প্রজাগণ বিন্নরাশির মধ্যেও শান্তিলাভ করিতে সমর্থ হইয়াছিল, যে অতুলনীয়া রমণীরত্বকে দেশীয় ও বিদেশীয়গণ মুক্তকণ্ঠে প্রশংসা করিতেন, তাঁহারই অগ্নে ও সংসারে প্রতিপালিত হইয়া মীরজাফরের পুত্র ছোট নবাৰ মীরণ তাঁহার প্রতি যেরূপ অত্যাচার করিয়াছিলেন, তাহা স্মরণ করিতে গেলে, কষ্টে ও ঘৃণায় হৃদয় অভিভূত হইয়া পড়ে। আনিবন্দীর বেগম এ তাঁহার কল্লাদ্বয় খসেটী ও আমিনা এবং সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী ও শিশু কন্যাকে অযথা কষ্ট প্রদান করিয়া বন্দীভাবে রাখা হয়।
বন্দী অবস্থায় তাঁহারা চূড়ান্ত যন্ত্রণা ভোগ করিলে, তাঁহাদিগকে মুর্শিদাবাদ হইতে ঢাকার নির্ব্বাসিত করা হইল। ঢাকায় তাঁহাদিগকে অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় বাস করিতে হইয়াছিল। মীরণ তাঁহাদিগের জীবিত থাকা অসহ্য মনে করিয়া, ঢাকার নায়েব যেশারৎ খাঁকে তাঁহাদের বিনাশের জন্য বারংবার লিখিয়া পাঠান; কিন্তু যেশারৎ খাঁ এই নৃশংস ব্যাপারে অস্বীকৃত হওয়ার, মীরণ নিজের একজন প্রিয়পাত্রকে উক্ত কার্য্যের জন্য এক পরওয়ানার সহিত ঢাকার প্রেরণ করেন। নবাব আলিবর্দী খাঁর বেগম কোনরূপে নিষ্কৃতি পাইয়াছিলেন, এবং সিরাজের বেগম ও কন্যাও অব্যাহতি পান।
কিন্তু ঘসেটী ও আমিনা বেগমকে নৌকা করিয়া নদীগর্ভে নিক্ষেপ করা হয়। তাঁহারা মৃত্যুকালে মীরণকে বজ্রাঘাতে মরিবার জন্য অভিসম্পাত করিয়া যান এবং এইরূপ প্রবাদ আছে যে,, মীরণের নাকি তাহাতেই মৃত্যু হইয়াছিল। কিন্তু মীরণের মৃত্যু সন্দেহজনক বলিয়া অনেকের বিশ্বাস। ইহার পর আলিবন্দীর বেগমের বিষয় বিশেষরূপে অবগত হওয়া যায় না। এইরূপ শুনিতে পাওয়া যায় যে, তিনি ঢাকা হইতে মুর্শিদা- -বাদে পুনরানীতা হইয়াছিলেন এবং দেহত্যাগের পর খোশবাগে আলিবন্দী খাঁর পদতলে সমাহিতা হন।
খোশবাগের সমাধির মধ্যে অনেকগুলির বিষয় ভাল করিয়া জানা যায় না। সুতরাং আলিবর্দী ঝাঁর সমাধিগৃহে তাঁহার প্রিয়তমা পত্নীর সমাধি আছে কি না, তাহা আমরা যথার্থরূপে বলিতে পারি না। যদি তাঁহার মুর্শিদাবাদে মৃত্যু হইয়া থাকে, তাহা হইলে তিনি যে স্বামীর পদতলে বা পার্শ্বে চিরনিয়িস্থ্য আছেন, ইহা অনুমান করা যাইতে পারে। কারণ তাঁহার ভায় আদর্শ মহিলা স্বামীর নিকট ভিন্ন অঞ্চ স্থানে সমাহিত হইতে ইচ্ছা করিতে পারেন না।
Leave a Reply