মাক্সিম গোর্কি
রেস্তোরাঁর দরজার কাছে লোহার একটা টেবিলের পাশে এসে বসল একটি লোক। পরনে হালকা রঙের স্যুট, দেখতে আমেরিকানদের মতো একহারা, দাড়ি মোচ কানানো। অলস সুরে লোকটা হাঁক দিলে:
‘গা-আ-রসন্…’
চারিদিকে ঘন শাদার ফুটে উঠেছে রাশি রাশি একেসিয়া, সোনালী রোদের ছোঁয়ার আকাশ নাটি ভরে উঠেছে বসন্তের কোমল পুলকে। খুরের খুট খুট শব্দ করে রাস্তা দিয়ে চিকিয়ে চিকিয়ে চলেছে লোমশ কানওয়ালা ছোটো ছোটো গাধা, চলেছে ভারি ভারি মালটানা ঘোড়া, লোকগুলো পর্যন্ত হাঁটছে এক অলস পদচারণায়, মনে হয় যেন প্রাণীমাত্রেই যতক্ষণ পারে রোদ্দুর পোয়াতে চায়, নিঃশ্বাস নিতে চায় এই পুষ্পগন্ধঘন বাতাসে।
ঝিলিক দিয়ে উঠেছে শিশুরা, বসন্তের অগ্রদূত তারা। সূর্য তাদের গায়ের পোষাক রাঙিয়ে তুলেছে উজ্জ্বল রঙে। রাতের সঙ্গী যেমন তারা, রোদ্দুর ভরা দিনের সঙ্গী তেমনি রঙীন পোষাকের নারী- হেলে দুলে হেঁটে চলেছে তারা।
হালকা পোষাকের লোকটার মুখের ভাবে কেমন একটা ঝেড়ে পুঁছে তোষা ভাব। যেন অসম্ভব নোংরা জমেছিল লোকটার গায়ে, এই মাত্র তা ধুয়ে সাফ করা হয়েছে এমন নিঃশেষে যে তার ফলে লোকটার সমস্ত সজীবতাও ঘসে ঘসে উঠে গেছে চিরকালের জন্যে। বিবর্ণ দৃষ্টিতে লোকটা তাকাচ্ছিল তার চারপাশে, যেন বসে বসে গুণছিল রোদ্দুরের কতোগুলো ঝলক পড়েছে ঘরের দেয়ালে, ছায়াচ্ছন্ন রাস্তায় আর বুলডারের শানের ওপর দিয়ে যা কিছু এগিয়ে যাচ্ছে তাদের ওপর। ফ্যাকাশে ঠোঁট দুটো ওর ফুলের মত গোল করে মৃদু সুরে শীস দিয়ে গাইছিল একটা আশ্চর্য বিষাদের গান আর লম্বা লম্বা ধবধবে আঙুলগুলো দিয়ে টোকা দিচ্ছিল টেবিলের ওপর। আঙুলের নখগুলোর কেমন একটা বিবর্ণ ঝলক, অন্য হাতে হলুদ-বাদামী একটা দস্তানা, তা দিয়ে তাল দিচ্ছিল হাঁটুর ওপর। বুদ্ধিমান দৃঢ় চেতা একটা মানুষের মতো তার মুখ। আফসোস হয়, সে মুখ থেকে সমস্ত উত্তাপ অমন স্কুলভাবে মুছে নেওয়া হয়েছে কেন।
সসম্ভ্রমে অভিবাদন করে পরিচারক টেবিলের ওপর সাজিয়ে দিল এক কাপ কফি, সবুজ লিকারের একটা ছোটো বোতল, আর কিছু বিস্কুট। এই সময় পাশের টেবিলে এসে বসল একটি বলিষ্ঠ চেহারার লোক, আগেট পাথরের মতো চোখ, গালে হাতে ঘাড়ে ধোঁয়ার ঝুলকালি লাগা, দশাসই গড়নের মধ্যে এমন একটা ইস্পাতের মতো শক্তির আভাস যে মনে হয় লোকটা যেন এক প্রকাণ্ড মেশিনেরই কোনো একটা অঙ্গ।
ফিটফাট লোকটার ক্লান্ত দৃষ্টি পড়ল ওর ওপর। তাতে ও একটু উঠে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে টুপি ছুঁয়ে ঘন মোচের মধ্যে দিয়ে বললে ‘নমস্কার, ইঞ্জিনিয়ার সায়েব।’
‘ও হো, তুমি নাকি, ট্রামা।’
‘আজ্ঞে হ্যাঁ, আমিই…’
‘তাহলে এবার কিছু একটা শুরু হবে নাকি হে, কি বলো?’
‘আপনাদের কাজকর্ম কেমন চলছে?’
‘প্রশ্ন দিয়েই কি আর আলাপ চালানো যায়, হে বন্ধু।’ ঠোঁটের ওপর আবছা একটু হাসি এনে বললে ইঞ্জিনিয়ার।
আর মাথার টুপিটা কানের এক পাশে ঠেলে দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে হো হো করে হেসে উঠল ট্রানা। হাসতে হাসতেই বললে:
‘ঠিক বলেছেন! কিন্তু সব খবর জানার জন্যে আমার বড় ইচ্ছে…’
কর্কশ লোমে ভরা শাদা কালো রঙের একটা গাধা টেনে নিয়ে যাচ্ছিল একটা কয়লা বোঝাই গাড়ি। যেতে যেতে থেমে গিয়ে গলা লম্বা করে দিয়ে একটা বিষণ্ণ ডাক ছাড়ল। কিন্তু সেদিন তার নিজের গলার স্বর স্পষ্টতই তার খুব পছন্দ হল না বোধ হয়, কেননা উঁচু পর্দায় গলা তুলেই হঠাৎ বিব্রতের মতো থেনে গিয়ে লোমশ কান দুটো ঝাঁকিয়ে মাথা নিচু করে আবার খুরের শব্দ তুলে হেঁটে যেতে লাগল গাধাটা।
‘নতুন একটা বই থেকে নতুন কিছু শেখার মতো মুখিয়ে আছি আপনার সেই মেশিনটার জন্যে…’
কফিতে চুমুক দিতে দিতে ইজিনিয়ার বললে; উপমাটা ঠিক বুঝলাম না…’
‘ভালো বই থেকে মানুষের চৈতন্য যেমন ছাড়া পায় বেশিন থেকে যানুষের দৈহিক উদ্যমও তেমনি ছাড়া পায় এ কথা কি আপনি মানেন না?’
‘ও, এই কথা।’ মাথা উঁচু করে খললে ইঞ্জিনিয়ার, ‘হয়ত তোমার কথা ঠিক।’ তারপর খালি কাপটা টেবিলের ওপর নামিবে রেখে জিগ্যেস
করবে:
‘তারপর এখন তাহলে তোমার সেই প্রচার শুরু করবে আবার?’ ‘আগেই তা শুরু করে দিয়েছি…’
‘ফের আবার সেই বর্মঘাট আর হাঙ্গামা, এ’এ্যা?’ অন্য জন মৃদু হেসে ঘাড় ঝাঁকালে।
‘এগুলোর দরকার না পড়লে তো কথাই ছিল না…’
কালো পোষাক-পরা সন্ন্যাসিনীর নতো শুকনো চেহারার একটা বুড়ি নীরবে এক গোছা ভায়োলেট ফুল এগিয়ে দিল ইঞ্জিনিয়ারের দিকে। দুটি ফুলের তোড়া কিনে ইঞ্জিনিয়ার একটি দিল তার সঙ্গীকে। তারপর চিন্তিতভাবে বললে:
‘তোমার মাথাটা এত ভালো, কিন্তু তুমি যে এক আদর্শবাদী হয়ে বসলে, সেটা ভারি আফসোসের কথা, ট্রানা…’
‘ফুল আর এই প্রশংসার জন্যে ধন্যবাদ। বলছেন, আক্কোসের কথা?’
‘হ্যাঁ, আসলে তুমি হলে কবি, শিক্ষা পেলে একটা ভালো ইঞ্জিনিয়ারও তুমি হতে পারতে…’
জামা মৃদু হাসল, ঝকঝক করে উঠল ওর শাদা শাদা দাঁত। বললে ‘হ্যাঁ, এ কথাটা আপনার ঠিকই। ইঞ্জিনিয়ার আসলে হল কবি। আপনার সঙ্গে কাজ করতে করতে সেটা আমি শিখেছি…’ তোমার অসীম দয়া…
‘আমার কথা হল ইঞ্জিনিয়ার মহাশয়ও কেন সোশ্যালিস্ট হবেন নাহ সোশ্যালিস্ট ‘আসলে কবিই তো…’
পরিপূর্ণ অন্তরঙ্গতায় হেসে উঠল ওরা, হেসে উঠল এই একান্ত বিপরীত চেহারার দুটি লোক-এক জন শুকনো, স্নায়ুনির্ভর অসা মোছ। চেহারা, বিবর্ণ চোখ; আর অন্য জনকে দেখে মনে হয় যেন সবে কালকেই কোনো কামারশালে গড়ে পিটে তৈরি হয়ে এসেছে ৪. এখনো পালিশ পর্যন্ত করা হয়নি।
‘না, ট্রামা। আমি চাই আমার নিজের একটা কারখানা আর তোমার মতো খাসা খাসা গণ্ডা আটেক ছোকরা, যারা আমার জন্যে খাটবে। তাহলে কিছু একটা করে দেখাতে পারি…’আস্তে করে টেবিলে টোকা দিল। তারপর বোতামের ঘরে ভায়োলেট গুচ্ছাটা আঁটতে আঁাঁটতে দীর্ঘশ্বাস ফেললে।
উত্তেজিত হয়ে চেঁচিয়ে উঠল ট্রামা, ‘ধুত্তোরি সব। যখন ভাবি যে বেঁচে থেকে কাজ করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই সব নগণ্য যত ব্যাপার…’
‘মানুষের ইতিহাসকে তুমি তাহলে একটা নগণ্য ব্যাপার বলতে চাও, মাস্টার মেকানিক ট্রামা?’ ইঞ্জিনিয়ার জিগ্যেস করলে একটু আবছা হাসি নিয়ে। মজুরটা তার টুপি খুলে নাড়তে নাড়তে উত্তেজিত- ভাবে বললে:
‘কিন্তু আমার পূর্বপুরুষদের সে ইতিহাসটা আসলে কি??
‘তোমার পূর্বপুরুষ।’ প্রথম শব্দাটার ওপর, জোর দিয়ে আরো একটু বাঁকা হেসে জিগ্যেস করলে ইঞ্জিনিয়ার।
‘হ্যাঁ, আমার পূর্বপুরুষ। বলবেন বোধ হয় ঔদ্ধত্য। কিন্তু জিয়োর্দানে। ফ্রনো, তিকো, আর মাজ্জিনি-এরা আমার পূর্বপুরুষ কেন নয়? আমি কি এদের দুনিয়াতেই বাস করছি না? এদের উঁচু ননের ফল ভোগ করছি না?’
‘ও, এই অর্থে।’
‘যাঁরা বেঁচে নেই তাঁরা পৃথিবীকে যা কিছু দিয়ে গেছেন তা সবই আমার।’
গম্ভীরভাবে ভুরু কুঁচকে ইঞ্জিনিয়ার বললে, ‘তা ঠিক।’
‘আর আমার আগে, আমাদের আগে যা কিছু করা হয়েছে, তা সবই হল সেই খনিজ লোহা যা থেকে বানাতে হবে ইস্পাত, নয় কিনা বলুন?’
‘নিশ্চয়, সে কথা আর বলতে।’
‘অতীতের কীর্তিমানদের ফল যেমন ভোগ করছি আমরা মজুররা, তেমনি ভোগ করছেন আপনারা শিক্ষিতেরা, এই হল শেষ কথা।’
‘সে কথা আমি অস্বীকার করছি না।’ বলে নিচের দিকে তাকাতেই ইঞ্জিনিয়ারের নজর পড়ল বহু ব্যবহৃত বলের মতো দেখতে, ছেঁড়া পোষাকের একটা বাচ্চা ছেলের ওপর। ছেলেটা তার পাশে দাঁড়িয়ে ছোটো ছোটো থাবার মতো নোংরা হাতে এক গোছা ক্রোকাস্ ফুল নিয়ে অনবরত মিনতি করছিল:
‘ফুল কিনুন না সিনোর, ফুল কিনুন না…’
‘ফুল আছে আমার…’
‘বেশি ফুলে কখনো দোষ হয় না, সিনোর…
হাহা বাসে, ঠিক বলেছিস বাচ্চা, সাবার। দে আমাকে দুটে।… বাকাটার কাছ থেকে ফুল দিয়ে ট্রানা চুপি উচু করে এক গোছা এদিতে দিস ইমিনিয়ারের দিকে।
দিপটা চমৎকার, তাই না?’
‘৫’, পঞ্চাশ বছরে পড়লেও দিনবানাকে তারিফ করার মতো মন আমার আছে এখনো…’
চোখ কুঁচকে ইঞ্জিনিয়ার তার চারপাশে চিন্তিতভাবে তাকিয়ে বিশ্বোস ফেললে।
‘আমার কি ধারণা জানো, তোমার শিরায় শিরায় তুমি যে বসন্তের সুর্যের এই উত্তাপ অমন তীব্রভাবে টের পাও, তার কারণ শুধু এই নয় যে তুমি জোয়ান। আমার বিশ্বাস, তার কারণ দুনিয়াটা আমার চোখে যেমন লাগে তোমার চোখে লাগে তা থেকে একেবারে অন্য রকম। তাই না?’
হাসতে হাসতে ও উত্তর দিলে, ‘জানি না। কিন্তু জীবন সুন্দর জিনিস।’
‘যে জীবন ভবিষ্যতে কিছু দেবে এই আশার জন্যে কি?’ অবিশ্বাসের সুরে জিগ্যেস করলে ইঞ্জিনিয়ার। প্রশ্নটা তার সঙ্গীকে বিধল বোধ হয়, কেননা টুপিটা মাথায় পরে নিয়ে ট্রামা আবেগ ভরে বললে:
‘জীবন সুন্দর সেই সব কিছুর জন্যে যা এ জীবনে আমি ভালোবাসি। বুঝেছেন বন্ধু। শব্দ আমার কাছে শুধু কতকগুলো অক্ষর আর খুনি নয়; যখন বই পড়ি, কি ছবি দেখি, কি এমন কিছুর দিকে তাকাই যা সুন্দর, তখন মনে হয় যেন এ সব কিছু আমি তৈরি করেছি আমার নিজের হাতে।’
এ কথায় যেগে উঠল দুজনেই, একজন হাসন অকপট দরাজ গলার গোছার দিকে প্রাণা হেলিতে চওড়া বুকখানা সামনে এগিয়ে দিয়ে, এবং ডাবে যেন ডালো করে হাসতে পারার ক্ষমতার সে গণিত; ‘যাদ অথ্য আম হাগরে গ্রার নিঃশ্ববেদ, দম আটকে, সোনা ধাঁধানো দাঁত অনাযুত দয়ে, তা দেখে মনে হয় বুঝি লোকটা সোনা চিবিয়ে খাওয়ার শর ডুবে গেছে মুখ ধুতে।
প্রতিনিয়ার ধারলে, ‘তুমি বেশ খায়া লোক যে ট্রানা, বেশ আনন্দ হয় তোমাকে দেখবে।’ তারপর চোখ ঘটকে যোগ করলে, ‘শুধু যদি এরয় হাফায়া-বাজ না হতে তুনি…’
ও হ্যাঁ, হাঙ্গামা আনি সবসময়েই করে চলেছি…’
তারপর তার অতলস্পর্শ ফালো চোখ দুটো কুঁচকে একটা কপট গাড়ীর্যের ভাব ফুটিয়ে জিগ্যেস করলে।
সে নার আমাদের আচরণ খুবই সঠিক ছিল খলে আনার বিশ্বাস, না?’
ইঞ্জিনিয়ার তার কাঁধ কাঁপিয়ে উঠে দাঁড়াল।
‘তা বটে, খুবই ঠিক হয়েছিল। জানো তো, ও ব্যাপারে আমাদের কারখানার খরচ হয়েছিন প্রায় সাঁইত্রিশ হাজার নিরা…’
‘টাকাটা মজুরি হিসেবে বাড়তি দিলে বেশি বুদ্ধির কাজ হত…’
‘উই’, ওটা তোমার ভুল। বলছ, বেশি বুদ্ধির কাজ হত? কিন্তু যেমন জানোয়ার, তেমনি তো তার বুদ্ধি।’
শুকনো হলদেটে একটা হাত বাড়িয়ে দিলে সে। তারপর মজুরটার সঙ্গে করমর্দন করে বললে:
‘আমার কিন্তু এখনো ধারণা, তোমার পড়াশুনা চালানো উচিত এবং বেশ ভালো রকম চালানো উচিত…’
প্রাতাল মুহূর্তেই আবি কিছু না কিছু শিবি…’
বেশ করনা প্রতিভা আছে এমন একজন ইঞ্জিনিয়ার তুবি হতে
ওই। কল্পনাশক্তি আমার এমনিতেই বেশ কাজে আসছে… বেগ, তাহলে আসি, একগুঁয়ে বন্ধুটি আমার…’
একেলিমার তব দিয়ে বোদুষের ঝিলিমিলির মধ্যে হেঁটে গেল ইঞ্জিনিয়ার, বড়ো বড়ো ক্ষেপ দিয়ে চেঙা চেঙা পা ফেলে, ভাগ হাতের লম্বা লম্বা সরু সরু আঙুলগুলো দন্ডানার মধ্যে চুকিয়ে। রেস্তোরার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এদের কথাবার্তা শুনছিল ময়না রঙের ছোটোখাটো চেহারার পরিচারকাটি। দরজা থেকে সরে এবে সে মজুরটিকে বলবে:
‘আমাদের ইঞ্জিনিয়ার সায়ের বুড়ো হতে শুরু করেছেন…’
মজুরটা তার টাকার ব্যাগের মধ্যে পরসা খুঁজছিল। কথাটা শুনে গায়প্রত্যয়ের সঙ্গে জানাল।
‘না, না, এখনো সে দিব্যি চালিয়ে যেতে পারে। মাথাখানার চের আগুন আছে লোকটার…’
‘পরের ঘার বক্তৃতা দেবে কোন জায়গায়?’
‘ঐ একই জায়গায়, লেবার একসচেঞ্জে। আমার বক্তৃতা শুনেছে। কখনো?’
‘তিন খার শুনেছি কমরেড…’
দরদীর মতো হ্যান্ডশেক করে ওরা হেসে বিদায় নিলে। ইঞ্জিনিয়ার যে পথে গেছে তার উল্টো পথ ধরে হেঁটে গেল একজন। অন্য জন টেবিল পরিষ্কার করতে করতে আনমনার মতো গুন গুন করতে লাগল।
রাস্তার মাঝখান দিয়ে হেঁটে গেল শাদা এপ্রণ-পরা এক দল স্কুলের ছেলে মেয়ে, চারিদিকে তারা ছড়িয়ে দিলে কলরব আর হাসির ফুলকি। সামনের সারিতে যে দুটিতে যাচ্ছিল, কাগজের ভেঁপুতে তারা ফুঁ দিলে সজোরে, আর ওদের ওপর ঝরে ঝরে পড়ল একেসিয়া গাছ থেকে শাদা শাদা পাপড়ির মৃদু পুষ্পবৃষ্টি। যখনই, বিশেষ করে বসন্তকালে, ছেলেদের দেখি তখনই ইচ্ছে হয় উচ্ছল গলায় চেঁচিয়ে
ডেকে বলি:
‘ওরে ও বাচ্চারা, ভবিষ্যৎ হোক তোদের জন্যেই!’
Leave a Reply