শিবলী আহম্মেদ সুজন
একজন অভিনেতার বড় বৈশিষ্ট্য হল, তিনি যখন যে চরিত্রে অভিনয় করবেন তখন ঐ চরিত্রের মানুষটি হয়ে যাবেন।তাই শুধুমাত্র জনপ্রিয় জুটির নায়ক বা নায়িকা হলেই যে তিনি বড় অভিনেতা বা অভিনেত্রী হবেন তা নয়।
১৯৪৭ এর পর থেকে আজ অবদি এই ভূখন্ডে পর্দায় ও মঞ্চে যে ক’জন সব চরিত্রে সফলভাবে নিজেকে ঐ চরিত্রের মানুষ হিসেবে দর্শকের কাছে তুলে ধরেছেন হুমায়ুন ফরীদি তাদের একজন।
সত্যজিৎ রায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,’আমি উৎপল দত্তকে না পেলে আগুন্তক ছায়াছবি করতাম না’।সংশপ্তকের মূল ব্যক্তি আব্দুল্লাহ আল মামুন অকালে হঠাৎ-ই মারা গেছেন।হয়তো তিনি বেঁচে থাকলে তার জীবনের শেষ প্রান্তে এসে অন্তত এটুকু বলতেন,হুমায়ুন ফরীদি’কে না পেলে আমার জন্য সংসপ্তক করা অসম্ভব হত।
সংশপ্তকের কুটিল রমজান আলী যখন বাবার কলম কোথায়’তে এসে এক অপূর্ব সুন্দর প্রেমিক হিসেবে সকল তরুণ-তরুণীর মন কেড়ে নেয় তখন স্বাভাবিকভাবে বলা যায় ’হুমায়ুন ফরীদি আসলেই আমাদেরকে বিস্মিত করে’।আবার যখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুন্তাসির ফ্যান্টাসিতে দর্শককে দ্বিধায় ফেলে দেয় দর্শক হাসবে না গম্ভীর হয়ে যাবে।তখনই সামনে আসে আরেক হুমায়ুন ফরীদি।
আমাদের চলচ্চিত্র জগত দুর্বল ও অনেকটা মেধাহীন হওয়ার কারণে বড় পর্দায় হুমায়ুন ফরীদির পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব হয়নি। তারপরে তিনি মারা গেছেন অকালে তবে ঐ দুর্বল ও কম মেধার চলচ্চিত্রগুলোতেও হুমায়ুন ফরীদি তার অভিনয়ের জোরে বারবার’ই নিজেকে প্রমাণ করেছেন ঐ চলচ্চিত্র নামক বানরটির গলায় তিনি একটি মুক্তার মালা। একজন শক্তিশালী অভিনেতার সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রকাশ পায় তার অভিনয়ের কোণ বিন্দুতেই।কারণ তিনি এক ঘেয়ামিতেই আটকে যান না।
হুমায়ূন আহমেদ তার অধিকাংশ নাটক ও চলচ্চিত্রে অনেক অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের একটি বিশেষ টাইপে আটকে ফেলেন।মানুষ আগে থেকেই বুঝে নেয় ঐ অভিনেতার অভিনয় এ ধরনেরই হবে। হুমায়ূন আহমেদের এই ধারায় অনেক বড় বড় অভিনেতা ও অভিনেত্রী এখনও আটকে আছেন।
হুমায়ুন ফরীদির শ্রেষ্টত্ব এখানেই তার প্রত্যেকটি অভিনয় নতুন, নিজস্ব এবং তিনি সব চরিত্রগুলোকে ভেঙে তার ভেতরটা দর্শকের সামনে বের করে আনতে সক্ষম হয়েছেন প্রতিক্ষেত্রে।
Leave a Reply