মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন।
মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে।
তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু।
তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক
‘কথা না বাড়িয়ে গিলে এসো না বাবা।’
নীলাভাবী হেসে বললে, ‘হুবহু নকল তোমার রাজীব ভাইয়ের, কথা বলার ঢংটি পর্যন্ত!’
‘সত্যিই বলছো খেয়ে এসেছো?’
‘সত্যিই! তুমি তো আমার গুরু নও, তোমায় ফেলে খেতে দোষ নেই-‘ ‘গুরু আবার কি?’
‘আচ্ছা আচ্ছা, সে একদিন শিখিয়ে দেওয়া যাবে-‘ ‘বলো কি, শেখারও আছে আবার, গ্যাঁড়াকল তো মন্দ নয়।’
‘শেখার আছে বৈ কি, সব ব্যাপারেই শেখার আছে। সব ব্যাপারেই রীতিমতো সুশিক্ষা দরকার, বুঝলে?’
‘এতক্ষণ ঠিকই বুঝছিলাম, কিন্তু ঐ যে জোর দিয়ে ‘বুঝলে’ ব’লেই সব কাঁচিয়ে দিলে।’
‘এক একটা ব্যাপারে এক একজনের কাছে শিক্ষা নিতে হয়। অনেক ব্যাপারে তোমার হাতেখড়ি ভালো মাস্টারের কাছে হয়নি। তরল?’
‘তরল।’
‘কিন্তু ফিক ফিক ক’রে হাসিটা কেন?’
‘সন্দেহটা কেটে গেছে এই আর কি। “অনেক ব্যাপারে” কথাটা এ যাত্রা বাঁচিয়ে দিয়েছে আমাকে’
‘বুঝেছি, এইজন্যেই তোমার সরেস মাথাটার এতো প্রশংসা করি সবসময়। ব্যাপারটা কি রকম হ’লো জানো, পানের ভিতরে চুন খয়ের সুপুরির সঙ্গে একটিপ আসল জিনিশ মানে কোকেনও চালান ক’রে দেওয়া হ’লো গালে’
‘রাজীব ভাইয়ের বোধহয় দেদার চলে ওইসব?’
‘আগে চলতো, এখন বদভ্যাসটা ছেড়ে গেছে।’
‘মানে তুমি ছাড়িয়ে দিয়েছ?’
‘কি ক’রে বুঝলে?’
‘ঐ যে অভ্যেস না ব’লে বদভ্যাস বললে!’
‘মাঝে মাঝে তোমার বুদ্ধিটা এমন খোলতাই হ’য়ে যায়!’
‘তোমার কাছে এলেই দারুণ কাজ করতে থাকে আমার ব্রেন, তুমি হচ্ছো যাকে বলে একেবারে খাঁটি ব্রেন-টনিক।’
নীলাভাবী হঠাৎ কেমন যেন মনমরা হ’য়ে যায়। চোখমুখে গাম্ভীর্য ছায়া ফেলে। নীলাভাবীর চেহারায় কোথায় একটা ধার আছে, মনে হ’তে থাকে খোকার।
‘একটা কথা জিগ্যেশ করবো?’
Leave a Reply