শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:১১ পূর্বাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-১৯)

  • Update Time : বুধবার, ৫ জুন, ২০২৪, ১১.০০ এএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

এসব কথা হেঁয়ালির মতো মনে হ’তে পারে তোমার, এটাই স্বাভাবিক। যেকোনো একটা ব্যাপারকে উল্টোভাবে খতিয়ে দেখার মতো মনের জোর সকলের থাকে না। দুঃখে আমার ভয় নেই। জীবনে দুঃখ পেতে হয়। দুঃখের এই একটা চরিত্র, সে সুযোগ পেলে পিষে ফ্যালে বটে, শেখায়ও প্রচুর; সাহস ক’রে, মাথা উঁচু রেখে, বুক টান ক’রে যারা তার মুখোমুখি দাঁড়ায় তারা কেউ কখনো খালি হাতে ফেরে না। এসব কথা আর একদিন হবে। সত্যি, আমি ওর জীবনটা ফতুর ক’রে ছেড়েছি। এখন একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে।

বুঝলে তো, তোমার রাজীব ভাইয়ের কথা বলছি। লোকে জানে ছেলেপিলে না হওয়ায় দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছে লোকটা; আমরা নিজেরাও কতকটা ওই ধরনের হাবভাব দেখাই। স্রেফ ধাপ্পাবাজি! প্রেমে হাবুডুবু খেতে খেতে খড়কুটোর মতো ভেসে যাচ্ছিলাম দু’জনে, তল পাচ্ছিলাম না, কূল পাচ্ছিলাম না; ডুবে মরতে মরতে কোনো রকমে ডাঙায় এসে ভেড়া- মানে বিয়ে করা। তা না হ’লে মরেই যেতাম, কি, খুব যে কিটকিটিয়ে হাসা হচ্ছে?’

‘হাসবো না তো কি কাঁদবো?’

‘বিশ্বাস হচ্ছে না নিশ্চয়ই?’

‘বিশ্বাস হবে না কেন? আগাগোড়া একটা ব্যাপারকে বিশ্বাসযোগ্য ক’রে তোলার জন্যে যেভাবে কসরৎ ক’রে চলেছো তাতে বিশ্বাস না করলে রক্ষে থাকবে। বলিহারি বাহাদুরি তোমার।” খোকা পা লম্বা ক’রে বললে, ‘থামলে কেন, চালিয়ে যাও, নিদেনপক্ষে টেকনিকটা তো রপ্ত হবে।’

‘ডেপোমি করবে না ব’লে দিচ্ছি! আমার কথা শেষ করতে দেওয়া তোমার ইচ্ছে নয়, ভেবেছো আমি তা বুঝি না?’

‘ঠিক হায়, ঘাট মানছি’ ‘যা বলছিলাম। হ্যাঁ, আমাদের বিয়েটা ছিলো সত্যিকারের প্রেমের। ও তখন এক বিদেশী ফার্মে চাকরি করছে। পাথর হাতড়ায় আর বই-পত্তরের ভিতর মশগুল হ’য়ে থাকে। একটু দাঁড়াও, গুলিয়ে যাচ্ছে সবকিছু-‘

‘দাঁড়াতে হবে?’

‘হ্যাঁ, তেরো বছর আগেকার কথা সেসব। আমার বয়েস তখন আঠারো, ওনার ছত্রিশ কি সাঁইত্রিশ-‘

‘মানে ফরিন স্টাইলের লভ আর কি!’

‘যা বলো তাই। সুন্দর গাইতে পারতো ও, ক্লাসিক্যাল চর্চা করতো ও; এস্রাজও বাজাতে পারতো-‘

‘ই, ক্লাসিক্যাল বেজায় সুবিধে’ বাধা দিয়ে খোকা বললে, ‘ঘোড়েল লোক?’

‘শুধু তাই নয়, দুদ্দাড় ক’রে মুখে মুখে এমন সব গল্প বানাতে পারতো যে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধ’রে যেত।’

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024